প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:
ভিজে
হাতেই কবির বুকে জলের কুঁচির মতো শায়িত হয় জগৎ । খাপছাড়া, বিচ্ছিন্নতা তো
একাই ভাবোল্লাস করেই তো ভবের সাথে ভাবের মিলন। শিল্পীর তো নিরন্তর প্রকাশ
হয়, তাই এষণা ছুঁয়েই বেঁচে থাকা।।
আবার
স্মৃতি নিরন্তর কড়া নাড়ে৷ মৃত্যু একঘরে বন্দি থাকতে চায় না। মৃত্যুর
মুক্তির বুকে মনের কামনা আজ বিদ্যুৎ। নতুন বৌঠানের ঘর ভেদ করে আত্মহত্যার
পরাজয় যেন রুদ্ধদ্বারেই অবরুদ্ধ। আর্ত চিৎকার বারবার৷
শীতের
অঙ্গীকার থাকলেই নদীর শোভা যেন উৎসাহের তটে পরিগণিত হয়। পাগলপারা মন, যেন
জীবনোচ্ছ্বাসে পরিপূর্ব লনগিনাকে দুচোখ ভরে দেখে৷ শীতের বুকে আঁচলের ঢাকনা
যথেষ্ট নয় বলেই তো আলতো পরশে চাঁদ রূপক৷
চন্দ্রালোকিত
পদ্মার চরে শুধুই অনুভব।একটু স্রোতের বিপরীতেই হাঁটতে চায় ইন্দিরা৷
প্রবৃত্তি জাগ্রত করতেই আকাশভরা আলোকে ডুবে থাকা। চাঁদ তো এমন করে লেপটে
থাকে নীরবে৷ নীরব প্রতীক্ষার সাথে সমাগত ভাবনারা।
নির্জনে
কবির সঙ্গে সীমাহীন ধূসর পরিসরে অতীত মনে করা। তিনকড়িদাসীর সাথে রূপকথার
গল্প পাঠ, রূপকথার তেপান্তরে অশরীরী কাল আবার৷ প্রকাণ্ড মাঠের বুকে
জ্যোৎস্নার স্তব্ধ পুরাতনী আদর, রবিকাকার।
নিজের ভাষায় বলতে ইচ্ছা করছে,
আজ একটা আত্মহত্যা হোক আমার ;
সমর্পণের শেষে আমি আবার আদিম হতে চাই..
আমায় ধুয়ে দিক চাঁদের আলো,
কলঙ্কের বুকে বাকল ছেড়ে নগ্ন বিকার মুছে ফেলতে চাই..
স্বপ্ন ছেড়ে প্রার্থনায়..
শুদ্ধ হয়ে যাই।।
আবার ইন্দিরা মন বলে,
আমার আজন্ম ঋণ তোমার কাছে;
ঘুমের ভিড়ে তোমার মগ্ন শ্রুশ্রূষা -
দুপায়ের ফাঁকে কান্নার বিকারগস্ত বিষ।
তুমি যে ঘাতক নও..
ঈর্ষণীয় সিংহ ছায়া ছেড়ে বল্কল আমার;
আমার আবেগের অসুখ,
মনের দরজায় তান্ত্রিক যন্ত্রণার সুখ..
সীমানায় আঁকা মুখ...
জীবন্ত আবার।।
অতীতের অবয়বী অশরীরী বলে,
সব
চরিত্র কাল্পনিক তোমার!! তাই তো আজ ভাতের সঙ্গে গিলে ফেলি আমার অভিমান।
তাই বুঝি আগুনমাখা শরীরে শরাঘাত খুঁজি, প্রত্যন্তর মাটির আহ্বান..
শব্দচারী রূপক হতে ভালোলাগে, তোমাকে ছোঁয়ার ইচ্ছা৷ তোমাকে দিতে গেলে গলার
কাছে ছটফট করে কাটা হাঁস। শুভ্র হাঁসও প্রচ্ছন্ন হয় রূপক হয়ে৷ বিশ্বাস
করো! নিখুঁত বহুরূপী সাজতে পারি না৷ বিক্ষুব্ধ ছলনায় আর সৌধ গড়তে পারবো
না৷ অবচেতনেই রহস্য ছেড়ে নিঃশব্দে অভিমানী রোদ হয়ে মাথা রেখেছিলাম৷
বলেছিলাম, মফস্বলের বর্গা হয়ে দূরে থাকবো; ক্ষতচিহ্নের অনুগত পরবাস,
অশ্রুবারি তোমার দেওয়া...আত্মার বিষুবজল৷। চিরকালের অমৃত ছায়া, বিহঙ্গ
গান.. শালুক পাতায় মায়া, কাঁথা ছিঁড়ে ধোঁয়া মুখ.. ঐ সুখ আমার।।
প্রেমের
সাক্ষাৎ চাওয়া পাওয়ার আলিঙ্গন৷ অস্ফুট আবেদনে মুখ লুকিয়ে ফিসফিস নদীর বুকে
চলার মতো করে ইন্দিরার হৃদয় যেন চুপিকথার বোধদীপ্ত তির্যক জটিলতার কথক
হয়। তোমার আলিঙ্গনে মৃত্যুভয় কেটে যায়...।তুমি বলেছিলে, নারীর জন্য নাকি
প্রকৃতি তৃষ্ণা, কিন্তু আজ চাইছি একলা আমার হবে!! তোমার মুখে পূর্ব প্রেমের
বলিরেখায় গল্পটায় কান্না আসে। বোঝো না তুমি, কতটা সুদূর পথে বিষন্ন নাবিক
হয়ে ফিরেছি বারে বার৷ ঝড়ের মুখে অন্ধ চোখের ভুল বলেই তো ছন্দ বর্জন হয়েছে
আমার৷ স্বপ্নেই তো বাঁচন আমার। এ চতুর সংসারে তুমি আমার নারকেল অবয়ব৷
ভিতরের অপলক প্রার্থনা বিপন্নতা নয়, গল্পভাস হৃদয়ের। তুমি যখন উদাসীন
সঙ্গম, আমি তখন নিঃস্ব, মন্দিরচূড়ার একক নীরা৷ আজ বড়ো ঋণী হতে মন চাইছে।
দুই সাগরের ভ্রূ পল্লবের ডাক, নদীঘেরা আলাপ.. ভালোবাসা আমার৷ ছিন্ন
প্রবাহের স্রোতে তোমাকে দেখতে পারবো না৷ বিশ্বাস করো কাউকে দেবো না.. কাল,
বায়ু - যাক প্রজন্মের আশ্রয়। ও বুকের প্রেক্ষাগৃহ আমার৷ জগতের বিচরণে
চোখদুটি আমার; ও ত্বকের খসখসে ভাব, চোখের কালি, শরীর দোতারা৷ ব্যথায় সাথে
আকাশ আর ভয়ের সাথে চাঁদ একাত্ম আবার৷ ক্ষতের বুকে মেলে দিলাম পাথর গুঁড়োয়
ঘাস। বকুল বুকে জলের পরি উৎসব, এ কেবল তোমার.. আমার।।
অবশেষটা অন্ধকার হয়ে থাকে। দূরত্বই দিতে পারে সে অন্ধকার। তবুও আধপোড়া হৃদয় যেন বলে,
মন নিঃসন্তান নিরুত্তাপ... ..
অনাবিলের বিকেলে বৃষ্টি তাবিজ একাকার।
সন্ধ্যা ছুঁয়ে আছে বুনো দাঁতাল,
তোমাকে পেরোতে বহুজন্মের আত্মিক সহবাস ;
পোড়া চোখে একা ঘুমিয়ে মায়াবী উড়ান,
স্নাত শরীর বেয়ে অকাল স্রোতে উত্তরাধিকার..
ও সন্ধ্যা বৃষ্টি... মন মানবিক ঈশ্বর আমার।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours