fiture
পুষ্পেন্দু মণ্ডল, ফিচার রাইটার, ঝাড়গ্রাম:

তখনো ১৯৪৭ এর শুভক্ষণ আসেনি ভারতমায়ের... 

১৪ বছরের বালকটা ফাঁসির দড়ি গলায় পরেও হুঙ্কার ছেড়ে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে এবার ফিরিঙ্গি দের দিন শেষ ।

চশমা পরা তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকা বয়স্ক মানুষটা একের পর এক অনশন করে চলেছে ভারতমাকে স্বাধীনতা উপহার দেওয়ার জন্য
বারবার লঙ্গরখানা থেকে খালি হাতে ফিরে এসে একুশ বছরের টকবগে রক্তের যুবকটা লিখলো - " ক্ষুদার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি "

৭৩ তম স্বাধীনতা দিবসে এসে এই সব কোলাজ গুলো হলুদ হয়ে আসা বই এর পাতার মাঝে বা কখনো কখনো বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় ক্লাবের বারান্দায় নিছকই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আলোচনা হয় । 
প্রযুক্তির রম্যরসে গা ভাসিয়ে ঝলসানো রুটি ও খেতে হয় না, আবার উন্নতির জোয়ারে ভেসে আমরা সবাই এখন বড্ডো বেশি স্বাধীন । 

আচ্ছা আচ্ছা এসব কথা বলা খুব দরকার নয়,Internet এর দৌলতে এসব খবর আজ হাতের মুঠোয় । 
আসি মোদ্দা কথায়, আজ Independent Day.. ভারত স্বাধীন হবার ৭৩ টা বছর পেরিয়ে এলাম আমরা,
ফাঁসির দড়ি গুলো আজ Museum এ সাজিয়ে রাখা হয়েছে.. বেশ আরামদায়ক দৃষ্টি তে দেখলে.. আমার ভারত - তোমার ভারত - সবার ভারত এখন বেশ আছে.. আঙ্গুল তোলার মতো কোনো কারণই নেই উন্নতির অনুকূলে ভেসে যাওয়া আমাদের দেশ কে । 
এবার একটু স্থুল চোখটাকে সুক্ষ এবং অনুসন্ধিৎসু করলেই হঠাৎই যেনো দৃশ্যপট গুলো বদলে যাবে.. 
গগনচুম্বী দালান গুলোর ঠিক নিচেই দেখা যাবে চাঁদের আলো ভেজা ঝুপড়ি গুলো , শুট-বুট পরা মানুষ গুলোর পায়ের তলায় দেখা যাবে ভিক্ষের আশায় হাত পেতে থাকা ছেঁড়া পোশাক গুলোকে

আসলে কি জানো.. ওই সব দুঃখ-নৈরাশ্য ভেজা চিত্র গুলো স্বাধীনতার আগেও ঠিক যেমনটা ছিলো.. আজও ঠিক তেমনটা রয়ে গেছে
পরিবর্তন হয়েছে soo Called 'বাবু' দের । স্বাধীন হয়েছে বাবুরা.. তাদের আজ কোনো ফিরিঙ্গি কে সেলাম করতে হয় না।

কিন্তু এই সব ধুলামাখা মানুষ গুলো তখনও সেলাম করতো এখনো সেলাম করে
সত্যি করে বলতে গেলে এদের কাছে স্বাধীনতা কিচ্ছু না 

এই তো কদিন আগেই ৬ মাসের শিশুটা কে ধর্ষণ করলে ( 'করলে' শব্দটা শুনে রাগ হচ্ছে তাইনা,জানি তুমি করনি কিন্তু আমাদেরই কেউ ১ক জন করেছে তাই না,, তাহলে কি এটা বলা ভুল হবে যে 'ভারতবর্ষ' এই নৃশংসতার জন্য দায়ী) নামীদামী school এর জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া student টাই একদিন সুরক্ষা প্রদানের শপথ নিয়ে খাকি পোশাকে ঘুষ খাচ্ছে, শান্তির প্রতীক স্বরুপ সাদা পোশাকে বেশ শান্তিতেই রোগীদের অঙ্গ পাচার করছে,২টাকার ওষুধ ২০০০এ বিক্রি করছে, কালো পোশাকে পরে আইন এর চোখ কে বেঁধে রেখে আসামীদের বাঁচানোর জন্য আইন বানাচ্ছে । 

শুনতে খুব খারাপ লাগলেও সত্য কে তো মেনে নিতেই হবে,, আমাদের দেশের ভীত যাদের দিয়ে গড়া তারাই আজ শোষণ করছে দেশটাকে।

যদিও স্বাধীনতা নিয়ে কথা তবু যে তিনটি মূল বিষয় নিয়ে বলতেই হয় তা হলো ধর্ম/রাজনীতি এবং দূষণ,, স্বাধীনতার সাথে প্রতক্ষ্য যোগ না থাকলেও অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এই তিনটি বিষয়ের কুফল আমাদের কে সঠিক স্বাধীন হতে দিচ্ছে না..

রাজনীতির মূল উদ্দেশ্যই হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাধন্য বিস্তার,যা হওয়া উচিৎ দেশের কল্যান.. এই Digital যুগে এসেও মানুষ মানুষকে বিচার করে ধর্মের মাপকাঠিতে,,এক ভারত মায়ের সন্তান হয়েও আমরা অযোধ্যায় রাম মন্দির নাকি মসজিদ ? এই নিয়েই ভাই এ ভাই এ যুদ্ধে লিপ্ত,, আর দূষণ টা যে শুধুই পরিবেশে.. তা কিন্তু নয় ! ৭৩ তম বর্ষের এই স্বাধীন ভারতে মানবিকতার দূষণ টাই আগে সাফ করা প্রয়োজন । 
সবাই মিলে একটু ভাবি এসো --

স্বাধীনতার মূল অর্থ যদি শুধুই ফিরিঙ্গি দের রক্তচোষা হাত থেকে মুক্তি হত.. তাহলে আজ নির্ভয়া কে বর্বরতার স্বীকার হতে হতোনা,কোটি কোটি টাকা খরচা করে রণবিভাগ বাড়াতে হতোনা,শিক্ষা পদ্ধতির বিফলতার দরুন সমাজের মাথা দের দুরাচার হতে হতো না,রাজনীতির দুষ্ট খেলায় চাপা পড়ে গরীব দের না খেয়ে থাকতে হতোনা...থাক আর নাই বা বললাম..AC room থেকে বেরিয়ে একটু চোখ তুলে দেখলেই বর্তমান ভারতের পাঁজরে জমে থাকা দীন-মানবতাহীন ফাঙ্গাস গুলো সহজেই দৃষ্টিগোচর হবে । 

তাই শুধু Independent Day বলে পতাকা উত্তোলন করে ছোলা-মুড়ি খেয়ে বাড়ি ফিরে এলেই আমরা স্বাধীন সেটা prove হবে না...যদি সত্যিই ভারত মা কে স্বাধীন করতে হয় তবে নিজের রক্তে মানবিকতার স্রোত আনো..

ফিরিঙ্গি দের বুকে ত্রাস জাগানো নানান ছদ্দবেশ ধারী অমর-অজয় স্বাধীনতার কাণ্ডারী সেই যে মানুষটা নির্ভয়ে উদার্ত কণ্ঠে ডাক দিয়েছিলো - " তোমরা আমায় রক্ত দাও,আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব "

আজ তোমার-আমার-আমাদের মাঝখান থেকেই আবার কাউকে উঠে আসতে হবে, জমকালো বাবু থেকে রুগ্ন ফুটপাত বাসি/এসিড আক্রান্ত থেকে দেহব্যবসায়ী/রাম থেকে রহিম/বর্ডার এর জোয়ান থেকে ক্লাবের বেকার ছোকরা সবার হাত ধরে আবারও ডাক দিতে হবে, "তোমরা আমায় মানবিকতা দাও,আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব"

কে পারবে উঠে আসতে ? 
আচ্ছা পারিনা কি সবাই উঠে আসতে ? পারিনা কি আমাদের স্বাধীন মা কে মানবিকতার মালা পরিয়ে দিতে ?

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours