জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা: 

ভারতকে যদি এই উপমহাদেশের  সাম্যবাদী তথা শ্রমিক একতার প্রাণভোমরা  বলে মেনে চলা হয়, সেই সুত্রেই  মেনে চলা উচিত হবে, , এই  ভেংগে দেওয়া বা ভেংগে যাওয়াটাই এই এসিয়া মহাদেশে
----  অন্য সব প্রতিরোধ চূর্ণ করে আমেরিকাতন্ত্রের আগ্রাসনকে, প্রয়োজন মতো   চিনের মুখোমুখি দাঁড়  করিয়ে দিতে, এই ভেংগেপরাটাই বিশ্ব ইতিহাসকে পদানত করার কারন হয়ে পরবে কী না, সেটাই দেখার রইলো পরবর্তী প্রজন্মের। এই লেখক হয়তো সেদিন বেঁচে থাকবেই না।

শ্রমিক আন্দোলনের রাজনীতিতে ভেতর থেকে এবং বাইরে থেকে ভাংগা সম্পর্কে শিক্ষাটা যে ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যে দিয়ে পেয়েছিলাম, সে কথাটা মনে হোল। সেই অভিজ্ঞতাকেই  রাষ্ট্রীয়  পর্য্যায়ে, এগিয়ে দিয়েই  দেশের চালচিত্রটা খুজে পাওয়ার যত  চেষ্টা করতে চেয়েছি, দেখেছি শ্রমিক আন্দোলনের অন্তর্মুখীনতাই বুঝি, 
--- মনস্তাত্বিক দিক দিয়েই , এক অলঙ্ঘনীয় অনিশ্চয়তা যেন বুকে চেপে বসতে চায়। এই ভাবেই লেনিনবাদের নিয়মগুলি, যখন শ্রমিক আন্দোলনেই  লঙ্ঘিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তার  কার্য্যকারন সম্পর্কগুলি, অঞ্চল থেকে আন্তর্জাতীক স্তরে কিভাবে যে ব্যপ্ত হতে থাকে, দেখতে চাইলে   বিষয়গুলি স্পষ্ট দেখা যাবে।

এই কলমের পাঠকদের স্মরনে থাকার কথা, ১৯৬৬ সালে দুর্গাপুরে ১২ দিন ব্যাপী ধর্মঘটকে, যদি মহাকাব্যিক আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে, তবে সেখানে যেমন শ্রমীকদের একাত্মতার মনোবল অন্যপ্রান্তে আসুরিক শক্তিপ্রয়োগের দ্বন্দ্ব যেসব কলাকৌশলের জন্ম দিয়েছিলো, সেগুলির রাষ্ট্রীয় নীতিতে স্থান পেয়েছিলো। প্রসংগত স্মরনে রাখতে হয়, সেই ধর্মঘটি ছিলো, আধুনিক ভারতে, আধুনিক প্রথম পুরুষ-শ্রমিকদের,
---- দেশে  আধুনিক শিল্প ব্যবস্থার বিপরীতে  সামন্তিক শিল্প সম্পর্ক দ্বন্দ্ব নিরসনে বিপুল হস্তক্ষেপ । ধর্মঘট তো চলছিল কারখানায়, কিন্তু কার্ফুর মতো অবস্থায় প্রতিরোধ চলছিলো, নগরীতে। ইস্পাত কিংবা কয়লার মতো শিল্পগুলিতে শ্রমিক প্রতিরোধের বিশেষত্ব এখানেই।
---- ধর্মঘটের শেষদিনে কমরেড জ্যোতি বসু এলেন। ধর্মঘটের একত্বতা থাকলেও, চাপের মুখে একটা ভাংগনও স্পষ্ট।  তত্ব যে একটা শ্রমিক আন্দোলননে কি বিপুল অবস্থান নিয়ে থাকে সেদিন বুঝেছিলাম। তত্ব দিয়ে কোন বৃহৎ আন্দোলনে কিভাবে দিক নির্নয় করতে হয়, সেদিনেই শিখেছিলাম।
----- উনি ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়া কিংবা তুলে নেওয়া সম্পর্কে সরাসরি কিছুই বল্লেন না, শুধু বোঝালেন, --- কোন শ্রমিক প্রতিরোধকে যখন রাষ্ট্র পিটিয়ে ভেংগে দেয়, তখন শতগুন প্রতিরোধ ক্ষমতায় সে আবার ফিরে আসে অল্প সময়ের মধ্যে। ... একটু থেমে, ধীরে ধীরে, গুড়তত্বের দিকটি তুলে ধরলেন --- কিন্তু ভেতর থেকে যখন, কোন আন্দোলন ভেংগে পরে তখন, সেটা শ্রমিকদের এমনভাবে দু'টুকরো করে দেয়  যে সহজে ফিরে আসতে দেয় না... আমরা সংগঠকরা, এক লহমায় বুঝে গিয়েছিলাম, শ্রমিকরা প্রতিরোধে প্রতিরোধে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে। সেই রাতেই ধর্মঘট তুলে নিয়েছিলাম।

প্রসংগে ফিরে আসা যাকঃ
বিশ্ব রাজনীতিতে প্রধান সংঘাত যতদিন, জমি সর্বস্বতা (সামন্তিক কাঠামো) থেকে পুঁজি সর্বোস্বতায় উত্তরনের প্রশ্ন ছিলো (যাকে আমরা রেনেশার কাল)  এবং যেকালের রাজনৈতিক ব্যপ্তি ঘটেছিলো ১৭৮৯ সালের ফরাসী বিপ্লবের পর থেকে
---- স্পার্টাকাসের (কিংবা তার পূর্ব)  কাল থেকে ইউরোপীয় উত্তোরনের কাল পর্য্যন্ত, শ্রম বা লেবরের হাতে প্রভাবিত করার ক্ষমতা থাকলেও, বিশ্ব দ্বন্দ্বের মূল চালচিত্রে চলে আসার কোন বিষয়ই হওয়ার কথা ছিলো না। কিন্তু পরবর্তী কাল থেকে, বিশেষ করে অক্টোবর বিপ্লবের পর (যাকা বিশ্বের প্রথম মহামানবিক বিপ্লব বলে পরিচিত) থেকে
-----  বিশ্বের যে কোন প্রত্যন্ত প্রান্ত থেকে অঞ্চল, দেশ কিংবা শ্রমিকদের যেকোন বিশ্ব প্রকৃয়া যা কোন না কোনভাবে পুজিবাদী উৎপাদন  এবং সেখান থেকে সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে টান দেয় (ইতিবাচক কিংব নেতিবাচক) , তার সব কিছুই বিশ্ব দ্বন্দ্বকে প্রভাবিত করবেই। হয় সরাসরি কিংবা সুপ্তভাবে। বিশ্বদ্বন্দ্বে ইতিমধ্যেই, পুজির বিপরীতে  'শ্রম' প্রধান যায়গা নিয়েছে। কৃ্ষক এখন শ্রেফ শ্রমের পরিপুরক। 

যদি লেনিনবাদের মূল-ভিত্তিতে যেতে হয়ে থাকে, তার কারন একটাই। এদেশের মানষ সত্বা যেখানে এখনো আদি-ভৌতিকবাদে আচ্ছন্ন। তা যদি না হবে, দেশটা কেন 'যুক্তি-তর্কের সাম্রাজ্য' থেকে 'বিশ্বাসের' সাম্রাজ্যে উত্তোরন ঘটবে। এই পরিস্থিতিতে পূর্বে যাদেরকে 
---- 'ভেতর থেকে ভেংগে যাওয়া' 'কিংবা 'ভেতরটা ঠিক থাকা সত্বেও' বাইরের চাপে ভেংগে' পরার বিষয়টি বোঝানোর  চেষ্টা হচ্ছে, কিছুই না বোঝার সম্ভাবনা  রয়েছে। সেকারনেই, যখন লিখতে বসি সব সময়েই কিঞ্চিত পেছনে যেতে হয়। 

যারা শ্রমিকদের শ্রেণীর স্তরে উঠিয়ে আনার চ্যালেঞ্ঝ নিয়ে টিকে থাকার আনন্দ উপভোগ করেই বেঁচে আছেন, তারাই আন্দোলনের সেই   বিপুল শক্তির সন্ধান পেয়েছেন
---- যে শক্তি আন্দোলনের ভেতরটাকে তিলে তিলে লৌহ দঢ় বন্ধনে একাত্মভূত করতে থাকে, যাকে ভেদ করে বাইরের আঘাত কখনো ভেতরকে হয়তো কোন্ এক সময় ভেংগে দিতে পারে, কিন্তু কিছুতেই গলিয়ে দিতে পারবে না।  
তখনি প্রশ্ন আসে, কোন কোন  সেই উপাদানঃ 
(এক) প্রথমতঃ শ্রমের সেই রুপের উদঘাটন, যা শ্রমিক একাত্মতাকে তার কারখানার বাইরে নিয়ে, শ্রমের আন্তর্জাতীক সম্পর্ককে এবং শ্রম বিরোধীতার আন্তর্জাতীক কেন্দ্রটিকে এক লহমায় চিহ্নিত করবে।          
---- এই চেতনা বোধের আন্তর্জাতীক শ্লোগানকেই, এই লেখকের কাল, "দু-নি-য়া-র শ্রমীক এক হোক বলে চিনে ফেলার সুযোগ পেয়েছিলো এবং আমেরিকা মিলিটারিতন্ত্রকে 'মেহনত' এবং 'নারীত্বে' মর্য্যাদাহীনতার  প্রধান শত্রু হিসেবে চেনার সুযোগ পেয়েছিলো। এই বোধ ক্রমে চিনিয়েছে, ভারত কিভাবে বিশ্ব অর্থনৈ্তিক  শৃংখলে পৃষ্ঠ হয়ে, ভারতীয় জনগনের পশ্চাতপদ অংশের সাথে সাথে মধ্যমবর্গের একটা বিপুল অংশের সাথে সাথে শ্রমিক শ্রেনী ক্রমে প্রকৃ্তিতে এবং চিন্তনে  দাসত্বে বাধা পরেছে।বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা ক্রমে কমে আসছে। 
(দুই) শ্রমের আত্মমর্য্যাদা এবং শ্রম-আন্তর্জাতীকতার উপাদানদুটিকে শক্তিশালী করা এবং উভয়ের একাত্মতা স্থাপনের কারনে, মার্ক্সবাদের জ্ঞানের অখন্ড সত্বার সাথে সাথে, বস্তুজগতের দ্বান্দ্বিক অভিমুখকে কাজে লাগিয়ে
----  ট্রেড ইউনিয়ন গনতন্ত্রকে ক্রমাগত এক থেকে উচ্চতর ধাপে উঠিয়ে এনে বিশ্বজ্ঞানের সাথে বিশ্ববোধের একাত্মতায়, নিজের দীর্ঘকালীন সমস্যা সমুহের সাথে সাথে, শ্রমিক একতাকে একাত্মতার সর্বোচ্চ ধাপে উঠিয়ে আনার পথে সব রকম দল ও মতগত কিংবা সামাজিক পশ্চাতপদতার নিয়ন্ত্রনের উপরে উঠিয়ে এনে
-----  এক প্রান্তে দলের আদর্শ এবং সংগঠনগত অবস্থানকে শ্রেনীগত রুপান্তরন অন্যপ্রান্তে তার আদর্শগত নেতৃত্ব যাতে, শ্রমিক গনতন্ত্রের নিয়ন্ত্রনের পর্য্যায়ে না যেতে পারে, তা সুনিশ্চিত করা।

'বিপ্লবী' বিশেষন যুক্ত করে, দলকে গনপার্টীতে বদলে দেওয়ার অনেক পূর্বেই, জীবন রায়ের প্রজন্মকে, উপরের উল্লেখিত দুটি তাত্বিক অবস্থানকে একাত্ম করার সংগ্রামে থাকার কারনে, যে ভাবগত অর্ন্তপ্রবাহে থাকতে হয়েছে সেটাই শিখিয়ে দিয়েছে, 
-----   স্বাধীনতা উত্তর কালে কীভাবে কংগ্রেস দলের আর এস এস এবং সামন্তিক শাখা কিভাবে শিল্প পূজির সহযোগে, দেশের আভ্যন্তরীন নীতিকে
সমাজতন্ত্র বিরোধীতার কারনেই, 
-----   তার পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা নীতিকে চিন বিরোধীতায় নিয়ে গেছে। চরম দক্ষিনী  ফ্যাসিস্তরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে সেই নীতিকেই ঠেলতে ঠেলতে, কাশ্মীরকে সামনে রেখে, চিন-ভারত সীমান্তে আমেরিকার সৈণ্যবাহিনীকে নিয়ে যেতে চাইছে। পাকিস্থান অজুহাত মাত্র।

(তিন) উল্লেখিত নীতিগুলিকে ভিত্তি করেই, দলের ভাবাদর্শগত নেতৃত্ব এবং ট্রেড ইউনিয়ন গনতন্ত্রের বিকশিত রুপকেই লেনিন সুত্রবদ্ধ করেছিলেন
---- দল এবং ট্রেড ইউনিয়নে শ্রমিক নেতৃ্ত্ব এবং সেই নেতৃ্ত্বকে জনগনের সার্বজনীন একাত্মতা নির্মানে (জনগনতন্ত্র) শ্রমিক আন্দোলনকে কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসার তত্বে। ট্রেড ইউনিয়ন গনতন্ত্রের ক্রমাগত বিকাশের পর্বেই, কমিউনিষ্ট বিরোধীরাও এই মঞ্চে সামিল হতে কুন্ঠাবোধ করবেন না।

আজ অথবা কাল হোক, একদিন নেতাদের একমত হতেই হবে
---- শ্রমিক আন্দোলনের ভেতরকার এই সামাজিক ডাইনামিজম যতটুকু নির্মান হয়েছিলো, সেটা বিগত তিন দশকে ভেংগে যাওয়ার কারনে,
শুধু সামাজিক একাত্মতাই খন্ড-বিখন্ড হচ্ছে না,  সেখানে দলের কেন্দ্রিকতাকেও বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, অন্যান্য 'শক্তির উপাদানগুলিকেও' দুর্বল এবং অকেজো করে দিয়েছে।

বিগত দু'তিন মাসের ভারতের সাথে, বিশ্বের আন্তর্জাতীক সম্পর্কগুলিকে গভীরভাবে অনুসন্ধান করলেই দেখা যাবে, উল্লেখিত অন্তসম্পর্কগুলির কারনে, ভেতর থেকে যেভাবে দেশকে এক রাখার উপাদানগুলি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে
----- তেমনভাবে ভারতের সাথে আন্তর্জাতীক সম্পর্কগুলিও ক্রমে অবিশ্বাস্যভাবে সন্তুলনহীন হচ্ছে তাই নয়, অতীতে যে সব সম্পর্ক শক্তিশালী ছিলো সেগুলি ক্রমে  বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।
----   গতকাল যদি, পাকিস্থানের এক মন্ত্রী, ভারতের সাথে যুদ্ধের সম্ববনার হুমকি দিয়ে থাকেন, সেটাও এই আন্তর্জাতীক সম্পর্কের দোলাচল ঠেকেই। 
----- আসল কথা আমরা ভেংগে যাচ্ছি, ভেতরে এবং বাইরে থেকে।
AND I AM SURE THAT PEOPLE WILL JOIN HANDS ONE DAY AT A PERIOD OF UNPRECEDENTED CRISIS THAT SINCE DEFEAT IN VIETNAM, BREAKING THE WORKING INTERNATIONALISM AND INDIA FROM WITHIN HAS BEEN THE  BIGGEST VICTORY OF AMERICAN  MILITARISM. (ক্রমশ)
 

 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours