স্বাতী রায়, লেখিকা ও চিত্রগ্রাহক, কলকাতা:
বিপ
বিপ বিপ... সাত টার অ্যালার্ম টা বাজলো, এবার বিছানা ছাড়তে হবে। কাল রাত
অবধি আয়ুশের সাথে খেলা করে মন বেশ প্রসন্ন , অফিস যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। আজ
আয়ুশ ওয়াটার পার্কে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু উপায় নেই। আজ অফিসে বোর্ড মিটিং
আছে। ক্লায়েন্ট, এমপ্লয়ি - অনেকের ভাগ্য নির্ধারিত হওয়ার দিন। স্নান করে
নীল সাদা চেক শার্ট আর কালো ট্রাউজার টা পরে নিল অনির্বাণ। গাড়ির চাবি,
রুমাল, পার্স, মোবাইল হ্যাঁ সব টেবিলের উপর সাজানো। এবার বেরোবার আগে সদর
দরজার বাইরের লাগানো লম্বা কাবার্ডের সামনে এসে দাঁড়ালো।
আজ
সারা সকাল থেকে তানিয়ার সাথে খুচরো ঝামেলা হয়েই চলেছে বিতানের। মুডের পুরো
পিন্ডি চটকে রেখেছে মেয়েটা। কি যে হয় মাঝে মাঝেই একটু চোখের আড়াল হলেই
পাগলামো করতে থাকে। বিশেষত এই অফিস ট্রিপ গুলো থাকলেই। একরাশ বিরক্তি মুখে
নিয়ে ফিরতি ফ্লাইটে বসে ভাবছিল। এই তো সেদিন আলাপ, খুব নিষ্ঠুর কর্কশ মনে
হত মেয়েটাকে, বন্ধুত্বই বা কি করে হল আর কি করে যে এত্ত ভালোবেসে ফেললো এই
মেয়েটাকে কে জানে। খুব মায়ায় ভরে এলো মনটা। মনে মনে জড়িয়ে নিয়ে কপালে আলতো
একটা চুমু খেয়ে বললো ক্ষেপি। ফ্লাইট ল্যান্ডের সময় হয়ে গেলো। বিরক্তি কমে
আসছিল ধীরেধীরে।
সকালে উঠে
খুব খারাপ মন ছিল তানিয়ার। তিন দিন ধরে বিতানের সাথে দেখা হয়নি। কথাও নাম
মাত্র। ট্যুরে গেলেই এরকম হয়। শহরে থাকলে একরকম। কিচ্ছু ভালো লাগছে না।
কথায় কথায় মেজাজ হারাচ্ছে। কাল তো গ্রুপে শুধু শুধু প্রতীম আর একতার সাথে
ঝামেলাই করে ফেললো। আজ সকালে সরি বলাতেও লাভ হয়নি। লোকের দায় পড়েছে তার
মানসিক অস্থিরতা বুঝতে। এখন অফিস যেতে হবে। চারটে গম্ভীর ক্লায়েন্ট মিটিং
আছে আজ। মহা ত্যাঁদোর সব লোক, তাদের তুষ্ট করে মাল বেচা যে কী কঠিন এই পাঁচ
বছরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে তানিয়া। একটাই শান্তি, এরা তানিয়ার জ্ঞান আর
অভিজ্ঞতার উপর ভরসা রাখে। প্রচুর প্রশ্ন টশ্ন করে, নাজেহাল করার পরেও
বিজনেস টা তানিয়াই প্রতি বছর নিয়ে আসে। শুধু অসীম ধৈর্য নিয়ে হাসি মুখে বসে
থাকতে হয়।
অফিস যাওয়ার
জন্যে রেডি হয়ে বাইরে এসে তানিয়া দেখল দরজার বাইরে কাবার্ডের সামনে
অনির্বাণ দাঁড়িয়ে। আজ তার অফিসে বোর্ড মিটিং। কাবার্ডের সামনে এসে দাঁড়িয়ে
পাল্লা টা দুজন দু দিক ধরে টেনে খুলল।
সারি
সারি মুখোশ - নানান অভিব্যক্তির। দুজনের আজ দরকার প্রশান্ত হাসিওয়ালা
মুখের মুখোশ। কাবার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে একে অপরের দিকে ঘুরে তাকালো, স্মিত
হাসি মাখা মুখোশ পরা মুখে।
ওদিকে
এয়ারপোর্টের এক্সিট লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বিতান ভাবছিল ফিরেই কখন তানিয়ার
সাথে দেখা হবে। কঠিন বসের মুখোশ টা খুলে ব্যাগে ভরে ফেলল বিতান| তানিয়ার
কাছে পৌছবে একটু বাদেই, এখন সে নরম সরম আদুরে প্রেমিক|
Post A Comment:
0 comments so far,add yours