choto golpo
ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ সৌগত কোনারকের সূর্য মন্দিরের পাথরের উপর অপূর্ব স্হাপত্য একমনে দেখছিল তন্ময় হয়ে, সম্বিত ফিরল মেয়েলি কন্ঠস্বরে " কি অপূর্ব তাই না?"..সৌগত একটু বিরক্তই হ'লো! ও মেয়েদের এবেবারে পছন্দ করে না! তার কারনও আছে! তবু সৌজন্যের খাতিরে ছোট্ট উত্তর দিল "হ্যাঁ", কিন্তু মেয়েছি আবার প্রশ্ন করলো, আপনি কি এই প্রথমবার কোনারকে এলেন? আমি প্রখম এলাম " এবার সৌগত মেয়েটিকে ভাল করে দেখল, সৌগতর থেকে বয়সে সামান্য ছোট,গায়ের রং ফর্সা, দোহারা স্বাস্হ্য, যথার্থ সুন্দরী! তবুও সৌগত আবার মন্দিরের কারুকাজ দেখতে লাগল!" আপনি কোত্থেকে আসছেন? সৌগত অনিচ্ছা সত্বেও জবাব দিল " দুর্গাপুর " মেয়েটি আর কিছু বলতে যাচ্ছিল..ইতিমধ্যে এক পৌঢ় দম্পতি এগিয়ে এলেন! ভদ্রলোক মেয়েটির উদ্দেশ্য বললেন,"তনু মা তুই এখানে আর আমরা তোকে খুঁজছি!মেয়েটি বলল, " বাবা উনি দুর্গাপুর থেকে এসেছেন!"ভদ্রলোক সৌগতকে বললেন," তুমি দুর্গাপুর কোথায় থাকো? "স্টীল টাউনশীপের আকবর রোডে " সৌগতর জবাবে ভদ্রলোক নিজেই পরিচয় দিলেন,"আমার নাম সুভাষ দে, দুর্গাপুর স্টীল প্লান্ট থেকে ডি,জিএম হয়ে রিটায়ার করেছি চার বছর আগে, এখন গ্রামের বাড়ীতে ! এই আমার স্ত্রী রমা আর একমাত্র মেয়ে তনুশ্রী " প্রতি নমস্কার করে সৌগত, "ও আপনি ডি ,এস,পি,-তে ছিলেন? আমি এখন আছি পার্সোন্যালে! "কোন হটেলে উঠেছো? সুভাসবাবু জানতে চাইলে, সৌগত জানাল, " হোটেল সাগরিকা ১০৩ নং রুম " সুভাষবাবু -" আরে আমরাও ওই হেটেলেই আছি ১০৮ নং রুমে, চলে এসো বৌ বাচ্চা নিয়ে ! জমিয়ে আড্ডা হবে! " না মানে,...আমি বিয়ে করিনি " " কেন ইয়ং ম্যান? ভাত চাকরী করো তাও বিয়েতে অনীহা?"সুভাষ বাবু শুধালেন!হঠাৎ তনুশ্রীর সাথে সৌগতর চোখাচোখী হলো! কাঁচু মাচু হয়ে সৌগত জবাব দিল, "না মানে এমনিই কোন কারন নেই!" ফিরে এসে সৌগত ঘুমিয়ে পড়ে ছিল! কলিং বেলের আওয়াজে ঘুম ভাঙল!দরজা খুলে দেখল তনুশ্রী! খানিকটা বিরক্ত হয়ে জিঞ্জাসা করল, "কি ব্যাপার?" "বাবা আপনার জন্য চা নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে, আসুন " বলেই তনুশ্রী চলে গেল! তনুশ্রীকে দেখে সৌগতর কলেজের ফেলে আসা দিনের কথা মনে পড়ল!রুবীকে সে পাগলের মতো ভালবেসে ছিল ! রুবীই প্রথম প্রোপোজ করেছিল! ম কলেজের সেরা ছাত্র ছিল সৌগত! তীব্র আর্থিক সঙ্কট সত্বেও লেখাপড়ায় কোন খামতি ছিলনা! রুবীর প্রেমে পড়ে কিছুটা ক্ষতি হলেও ভালবাসার জন্য সে সেটা মেনে নিয়েছিল! কিন্তু রুবী তাকে চরম আঘাত দিয়েছিল! হঠাৎ পরিবাবারের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে ব্যাঙালোর চলে গেল বিয়ের খবরটুকুও দেয় নি! ওর বন্ধুদের কাছে জেনেছে সৌগত, বুঝেছিল সে প্রতারিত হয়েছে,রুবী কোনদিন তাকে ভালবাসেনি!চরম মানসিক আঘাত পেয়ে ,মেয়েদের ঘৃনা করতে শুরু করল!
কিন্তু পুরীতে কয়েকটা দিনের মধ্যেই তনুশ্রীর সাথে একটা সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেল!পুরী থেকে ফিরে আসার পর প্রায়ই তনুশ্রীর সাথে মোবাইলে কথা হতো আর ়়হোয়াটসআপে ,ফেসবুকে চ্যাট ! কয়েক দিনের মধ্যেই সৌগত অনুভব করলো তনুশ্রীর প্রতি সে খুব দুর্বল হয়ে পড়ছে! সে ভাবে তনুশ্রীও কি একইভাবে তার কথা ভাবছে?সৌগত আরও বুঝতে পারল সে তনুশ্রীকে সে ভালবেসে ফেলেছে! একদিন সকালে সে বর্ধমানের কালিকাপুরে তনুশ্রীদের বাড়ীতে হাজির হলো না জানিয়েই! সৌগত বুঝতে পারল এরা বনেদি পরিবার পুরানো দিনের জমিদার বাড়ী!তাকে দেখে খুশী হল তনুশ্রীর বাড়ীর সকলে! রাতে একটি সুসজ্জিত ঘরে তার থাকার ব্যবস্হা হয়েছে! কিন্তু ঘুম আসছে না! তার মনে হচ্ছে এক্ষুনি তার প্রেয়সী তনুশ্রী তার কাছে আসবে! এভাবে বিনিদ্র রাত কাটল! ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল! ঘুম ভাঙ্গল দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে! "সৌগতবাবু চা "...তনুশ্রীর ডাকে বেরিয়ে এলো সৌগত! কিছু বলার আগেই তনুশ্রী বলল,"রাতে ঘুম হয়নি না? আমিও ঘুমাতে পারিনি , তোমার কাছে বারবার মন চেয়েছে কিন্তু পারিনি "
দেওয়ালের একটা হাস্যমুখর যুবকের ছবি দেখিয়ে বলল "এই ফটোটা বারবার আপনার আমার মাঝে 'দেওয়াল ' হয়ে দাঁড়িয়েছে! অস্ফুট স্বরে জিঞ্জাসা করল, "এটা কার ফটো?".."আমার স্বামীর , দু বছর আগে রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে " তনুশ্রী বলল! .....সৌগত ফিরে যাচ্ছে..দোতলা জানালা দিয়ে সৌগতর গমন পথের দিকে উদাস হয়ে তাকিয়ে আছে তনুশ্রী! সৌগত বাড়ীর বাইরে এসে ফিরে তাকাতেই...জানালা বন্ধ করে বিছানার বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল তনুশ্রী...

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours