শ্রাবণী মজুমদার, লেখিকা, বীরভূম:

স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম দেবা না জানন্তি কুতো মনুষ্যা। স্ত্রী চরিত্র দেবতাদের বুদ্ধির অতীত। মানুষ তো কোন ছার!  এভাবেই আমরা নারীর সমালোচনা করে থাকি।  শুরুটা অনেক আগেই। এখনও থামে নি। অনেক গুলো ‘না’ কে পেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে নারী। সে অধিকার কোন বিধাতার ইচ্ছায় নয়। নারী বেশি খেলে, জোরে হাসলে, ছেলেদের সাথে মিশলে একসময় নিন্দনীয় ছিল। এখন হট প্যান্ট পড়লে,  ধূম বা মদ্য পান করলে স্রেফ তাকে বাজে মেনে নেওয়া হয়।

 ভেবে দেখুন বাসর রাত। নব বিবাহিত বর বধূ। তবে এখন আর মুখ ঢেকে থাকতে হয় না। কারন বিয়ে আগেই কয়েকটা ডেটিং হয়েছে। সে দুই পক্ষের অভিভাবকেরা জানেন। বেশ ভালো! অন্ততঃ আগের থেকে ভালো। পুরানো দিনে, এক হাত ঘোমটা টেনে স্বামীর সাথে বাসর রাত। স্বামী আদর করে ঘোমটা টেনে বৌয়ের মুখ দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়ে কাছে টেনে নিলেন। সকালে উঠে বউ স্বামীদেবতার দুই পায়ে প্রণাম করে তবে ঘর থেকে বেরোলেন। কেন? ওমা! রাতে মিলনের সময় গায়ে পা লেগেছে না! তারপর মনছুক ছুক করলেও গোটা দিন ঘোমটা তুলে স্বামীর মুখ দেখলে তো রক্ষা ছিল না।

তবুও মন প্রশ্ন করে,  দৃষ্টিভঙ্গী এখনও কতটা পাল্টেছে?  বাসর রাত – এই রাত তোমার আমার- এসব ছাড়ুন। রোমান্টিকতা বাদ দিয়ে যদি কোন নব বিবাহিত নারী প্রতিদিন দ্বৈত রতিক্রিয়ায় মগ্ন হতে চায়, কি বলবেন? মনে খটকা লাগবে! সময় বদলেছ। নারী বেশি খাও, জোরে কথা বলো। মাঝে মাঝে চুড়িদার, নাইটি এসব পড়ো। কোন আপত্তি নেই!  কিন্তু ততটায়, যতটা অনুমোদনযোগ্য! তাবলে, তুমি—স্বামীকে বিছানায় টানবে। না, না, এটা পুরুষ করবে! এটা তার অধিকার। নারী শুধু অনাগ্রহ দেখাবে, এটা ছিল আগের সময়ের দাবি। এবারও তাই, তবে আগের থেকে একটু আলাদা। নতুন বোতলে পুরানো মদ! রতিক্রিয়ায় তুমি সাড়া দেবে, সহযোগিতা করবে, কিন্তু তাবলে আগ্রহ দেখাবে? তাহলে চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠবে! কিন্তু এটা কেউ মানতে পারে না, এটাও একটা স্বাভাবিক চাহিদা, কোন নারী মুখ খুলে স্বামীর কাছে চাইতেই পারে!  

বিজ্ঞান বলছে, এই সম্পর্ক, শুধু স্বাস্থ্যকরই নয়, বাঞ্ছনীয়। হার্ট ও মনের পক্ষে ভালো।  কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। আসলে, সব কিছুতে মেয়েরা লিড দেবে এটা ঠিক মেনে নেওয়া যায় না। পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য নারীর সৃষ্টি। কামসূত্রের জনক বাৎস্যায়ন নারীকে চার প্রকারে ভাগ করেছেন। কোন নারী উত্তম পুরুষের জন্য তার নিদান দিয়েছেন।  তার মতে একমাত্র পদ্মিনী নারীই সর্বোত্তম।

রায় গুণাকর ভারত চন্দ্র বলেছেন-- নয়নকমল , কুঞ্চিত কুন্তল, ঘন কুচ স্থল, মৃদু হাসিনী/ ক্ষুদ্র রন্ধ্র নাসা, মৃদু গন্ধ ভাষা, নৃত্যগীতে আশা সত্যবাদিনী।/ দেবদ্বিজে ভক্তি, পতি অনুরক্তি,অল্প রতি ভক্তি, নিদ্রাভোগিনী/ সুলোলিত কায়, লোম নাহি হয়, পদ্মগন্ধ কয়, সেই পদ্মিনী।

 কিন্তু চিত্রিণী?—প্রমাণ শরীর, সর্ব কর্মে স্থির নাভি সুগভীর, মৃদু হাসিনী। /  সুকঠিন স্তন, চিকুর চিকন, শয়ন ভোজন মধ্য চারিণী/ তিন রেখাযুত, কণ্ঠ বিভূষিত, হাস্য অবিরত, মন্দ গামিনী।/ কমনীয় কায়, অল্প লোম হয়, ক্ষার গন্ধ কয় সেই চিত্রিনী।

 আরও দুই প্রকার নারী হলেন, শঙ্খিনী ও হস্তিনী। -- দীঘল শ্রবন, দীঘল নয়ন, দীঘল চরণ, দীঘল পাণি/ সুদীঘল কায়, অল্প লোম হয়, মীন গন্ধ কায়, শঙ্খিনী জানি।  হস্তিনীর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে—স্থুল কলেবর, স্থুল পয়োধর, ঘোর নাদিনী।/ আহার বিস্তর, নিদ্রাঘোরতর, বিহারে প্রবর পর গামিনী।/ সুপ্রশস্ত কায়, বহু লোম হয়, মদ গন্ধ কয় সেই হস্তিনী।  নারীর এই বিবরণ কিসের জন্য? নারীর এই দেহ বর্ণনা পুরুষের কামনা মেটানোর জন্য। এই খোলাখুলি চাওয়াতে কোন দোষ নেই। তাই চাইতেই পারি এমন নারী- তিলফুল জিনি নাসা, বসন্ত কোকিল ভাষা/ ভ্রু যুগল চাপ সহোদর।

অন্যদিকে, অশ্লীলতার দায়ে দুষ্ট রায়গুণাকরের বিদ্যাসুন্দর দেখি, তাহলে দেখব শুধু আদিরস পাতন করে আমাদের খাওয়াবার জন্য তিনি লেখেন তিনি। এই কাব্যের বিহার পর্বের এক জায়গায় কবি এই মিলনের মুহুর্ত তুলে ধরে বলেছেন- দুই তনু স্পন্দন কম্পন ঘন ঘন/ উথলিল মদন তরঙ্গে। আবার বিপরীত বিহারে কবি যুগান্তকারী। কারণ এখানে লজ্জা নারীর ভূষণ নয়, সে বিপরীত বিহারিণী – ঘন অবিলম্ব নিতম্ব দোলে।/ ঘুনু ঘুনু ঘন ঘুঙ্গুর বোলে। অবশ্যই  মানবিক দেহের ক্ষুধা নিয়ে নারীকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা পুরুষকে তার বার্তা- নারীও মানুষ। ‘ তুচ্ছানাং যদ কুলশ্চ নারীনাং রব ভবেৎ / বিনাশাং সকুলধর্ম অধোগতিম প্রাপ্সসি এতৎ।' এজগতে কুল বা সমাজ নারীদের তুচ্ছ জ্ঞান করে। সে কুল বা সমাজ ধর্ম ভ্রষ্ট হয়ে নরকগামী হয়।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours