কাজল ভট্টাচার্য, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:
এও এক উন্নয়নের গল্প।
কৃষকদের জমি দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত। বন কেটে সাফ করে আরও ফসল ফলানো। মাটির বুক চিরে খনিজ সম্পদ চুরি। এই বেড়ে চলা সর্বগ্রাসী লালসার আগুনেই আমাজন দহন। একরোখা শাসকের গলায় সেই যাবতীয় অভিযোগ ওড়ানোর চেনা স্বর। "এ এমন কোনও ঘটনাই না," বলছেন ব্রাজিলের খোদ রাষ্ট্রপতি জায়র বোলসোনারো। "গত পনেরো বছরের দাবানলের গড়পরতা হিসেবটা একবার দেখুন।"
কালো ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে আকাশ। ধোঁয়া দেশের সীমারেখা চেনে না। তা পৌঁছে গেছে প্রায় সতেরোশ মাইল দূরের সাও পাওলোতে। অসহায় মানুষ। এই ভয়াবহ আগুনের সামনে গোটা বিশ্ব দাঁড় করিয়েছে বোলসোনারোকে। অভিযোগ, পরিবেশবিদদের কোনও পরামর্শেই তিনি গুরুত্ব দেননি। নইলে আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। ব্রাজিলের রাস্তায় উপচে পড়ছে প্রতিবাদীদের মিছিল।
ওদিকে রাজনৈতিক মহলের অভিযোগ, আমাজনের অরণ্যপুত্ররা কোনও দিনই বোলসোনারোর সুনজরে ছিলেন না। অরণ্যের ওপর তাঁদের যে জন্মগত অধিকার, দেশের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী তা মেনে নিতে নারাজ। কৃষিজমি বাড়ানো, খনিজ সম্পদ তোলার সিদ্ধান্ত তারই অঙ্গ। এই মনোভাবের খেসারত দিতেই বর্ষাবন ক্রমেই গুটিয়ে আসছে। চলতি বছরের গোড়াতেই সতর্কবাণী শুনিয়েছিল পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা গ্রিনপিস। শাসকদলের এই মনোভাব যে কোনও সময় বিপর্যয় ডেকে আনবে।
রাষ্ট্রপতির কথায় ভরসা রাখতে পারছে না কেউ। তাঁকে চাপে ফেলতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক দেশ। ইতিমধ্যেই ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের কাছে দরবার করেছে ফিনল্যান্ড। বলা হয়েছে, ব্রাজিল থেকে বিফ আমদানি বন্ধ করা হোক। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছে ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড। এই হুমকিকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি।
স্পষ্টভাষায় তিনি বলেছেন, "একজন সামরিক অফিসার হিসেবে শিখেছি আমাজনকে ভালবাসতে। তাকে রক্ষা করার দায়িত্বও আমার।" বোলসোনারো যে গোটা ঘটনার ব্যাপারে যথেষ্ট সিরিয়াস তা বোঝাতে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, শুধু বর্ষাবন না। ওই অঞ্চলে বাস দেশের কুড়ি লক্ষেরও বেশি মানুষের।
গত শনিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে, একই সুর শোনা যায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফার্নান্ডো আজিভেডো ই সিলভা'র গলাতেও। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তিনি বলেন, "প্রথম ধাপে 700 সেনা পাঠানো হচ্ছে আগুনের মোকাবিলা করতে।"
রাজনৈতিক স্তরের এই কথা চালাচালির পাশাপাশি, ক্রমেই জোর ধরছে সাধারণ মানুষের ব্রাজিল সরকারবিরোধী প্রতিবাদ। বাড়ছে রাজনৈতিক চাপ। তাতে অবশ্য বর্ষাবন দহনের ব্যাপকতা বিন্দুমাত্র কমার কোনও লক্ষণ চোখে পড়েনি। বিপদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ব্রাজিলের বন্য আদিবাসী সমাজ। বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় তিন মিলিয়ন গাছ, বন্যপ্রাণী। সবারই আশ্রয়স্থল এক ও অভিন্ন এই আমাজন বর্ষাবন। উন্নয়ন যজ্ঞে বর্ষাবন আহুতি হবে নাতো?
Post A Comment:
0 comments so far,add yours