শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:
বাকস্বাধীনতা
হলো আপনি যা শুনতে চান না, এমন কিছুও কেউ যদি বলে, তবে তাকে তা বলতে দেয়া।
আপনি আপনার বাকস্বাধীনতা চাইবেন আর অন্যের মুখ বন্ধ রাখবেন এটা জঘন্য
বদমাইশি। বিরোধী মত শোনার জন্যও যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। আর সে যোগ্যতার
নাম, বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস। বাকস্বাধীনতায় তারাই বিশ্বাস করে যারা সভ্য
এবং ফ্যাসিষ্ট নয়৷ কোন ফ্যাসিষ্টের পক্ষে কোন মানুষের বাকস্বাধীনতা মেনে
নেয়া সম্ভব নয়। ফ্যাসিষ্ট হিসেবে একজন স্বৈরশাসক ও একজন সাম্প্রদায়িক
ব্যাক্তির মধ্যে একচুলও পার্থক্য নেই। দুজনের কেউই অন্যে বক্তব্য শুনতে
নারাজ। নিজেকে সব দিক থেকে সুপিরিয়র ভেবে থাকে। যা কুশিক্ষা থেকে পাওয়া এক
ধরনের মানসিক রোগ। খোজ নিলে পৃথিবীতে গত দু হাজার বছরে ফ্যাসিষ্ট শাসক
বড়জোড় দু- তিনশ পাওয়া যাবে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট মানুষ আজকের বাংলাদেশেই কোটি
কোটি পাওয়া যায়। আর ভারতবর্ষে খুজলে পাওয়া যাবে বেশুমার। " চুতি... কা
কই কমি নাহি হ্যায় গালিব এক ডুনডো তো হাজার মিলেগা" অবস্থা! "চুতি..."
শব্দটির জায়গায় " ফ্যাসিষ্ট " লিখুন।
ফেসবুকের
প্রতিষ্ঠাতা জুকারবার্গ একবার বলেছিলেন, ফেসবুকও এখন একটি মৌলিক অধিকার!
আমরা যখন স্কুলে পড়েছি। তখন শিখেছি মানুষের মৌলিক অধিকার পাঁচটি। অন্ন
বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসা। এখন আরো একটি যোগ হয়েছে সামাজিক
নিরাপত্তা৷ আর সক্রেটিস নাকি বলতেন; মানুষের মৌলিক অধিকার দুটি,, খাদ্য ও
সঙ্গম!
বাকস্বাধীনতা কোন
অংশেই ওসব থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ৯০ দশকের একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করা
যাক। পুর্ব জার্মান ও পশ্চিম জার্মান তখন পৃথক। পুর্ব জার্মানিতে কমিউনিস্ট
শাসণ চলে। পশ্চিম জার্মানির কুকুরেরা খুব চিন্তিত পুর্বের কুকুরদের জন্য।
পশ্চিমের কুকুরদের ধারনা পুর্বের কুকুর না খেয়ে থাকে বা কম খেতে দেয়া হয়৷
এমন উত্তজনার সময় কিছু কুকুর পুর্ব জার্মান থেকে পালিয়ে পশ্চিম জার্মানে
চলে এলো। পশ্চিমের কুকুরেরা বিভিন্ন খাবার নিয়ে তাদের স্বাগত জানালো।
কিন্তু পুর্ব জার্মানের কুকুরগুলো খাওয়া বাদ রেখে ঘেও ঘেও করেই চললো।
পশ্চিমের কুকুরের জানতে চাইলো, বন্ধুরা তোমরা খাওয়া বাদ দিয়ে ঘেও ঘেও করছ
কেন? পুবের কুকুরেরা বললো, আরে ভাই, খাবার তো আমাদের পুবেও আছে। তোমাদের
এখানে এসেছি প্রাণ খুলে ঘেও ঘেও করতে! যে সুযোগ আমাদের নেই।
হ্যাঁ,
এটাই বাকস্বাধীনতা। বাকস্বাধীনতা ছাড়া কোন স্বাধীন, সচেতন মানুষ বাঁচতে
পারে না। সম্ভবই নয়। কয়েদখানাতেও থাকা যায়। কিন্তু কোন সমাজে, রাষ্ট্রে
মুক্তভাবে বাস করে স্বাধীনভাবে কথা না বলে বেঁচে থাকা অসম্ভব
। অন্তত যারা স্বধীনচেতা, মুক্তচিন্তক ও ভাবুক তাদের জন্য।
গতরাতে
দেড়টার দিকে যখন আমি বই পড়ছিলাম। "দ্য অফনিউজ" সম্পাদক মি সুবীর পালের
কল পেলাম। ভেবেছিলাম ১৫ আগষ্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে যে লেখাটা
দেয়ার কথা, হয়তো তিনি সে বিষয়ে জানতে চাইবেন। তিনি তা না জানতে চেয়ে,
বললেন, "তোমার ফেসবুক আইডি খুজে পাওয়া যাচ্ছে না কেন? "আমি তার কথা শুনে
আমার ফেসবুক আইডিতে ঢুকতে গিয়ে আমি নিজেও ব্যর্থ হই! তার মানে আমার আইডি
ডিজ্যাবল বা হ্যাক্ড! এর আগেও গত এপ্রিলে আমার আইডি ডিজ্যাবল হয়েছিলো ।
তিন চারদিন পর যখন থানায় জিডি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তখন আইডিটা পুনরায়
ফিরে পাই।
আমার লেখাগুলো কোন শ্রেনীর বিরুদ্ধে যায়?
বলার
অপেক্ষা রাখে না, সকল ফ্যাসিষ্ট মতের বিরুদ্ধে আমার কলম তৎপর। মৌলবাদীরা
আমার লেখায় অসহায় বোধ করে। যারা ধর্মান্ধতা ছড়ায় আমি তাদের বিরুদ্ধে
লিখি।লিখবোও। যারা ১৯৭১ এর চেতনার বিরুদ্ধে আমি তাদের প্রতি কঠোর। যারা
ইনিয়ে বিনিয়ে বা প্রকাশ্যে বাঙলা ভাষা ও বাঙালির বিরুদ্ধে কথা বলে; আমি
তাদের বিরুদ্ধে দেয়াল হয়ে দাড়াই। কেন না, ৫২ র ভাষা আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের
আতুর ঘর। ৫২ না এলে ৭১ও আসতো না। এ দেশে একটি গোষ্ঠী সদাতৎপর
ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার জন্য। আমি তাদের ছাড় দেই না।
দেবোও না; যতক্ষন দেহে আছে প্রান আর হাতে থাকবে কলম।
"দ্য
অফনিউজ" পরপর আমার কয়েকটা লেখা প্রকাশ করেছে। আমি সে সব, আমার টাইম লাইন
সহ "ক্যাফেটেরিয়া "ও "ইস্টিশন" এর মত জনপ্রিয় গ্রুপগুলোতেও শেয়ার করি।
লেখাগুলোতে মুক্তচিন্তা প্রতফলিত হয়েছে যা অনেকের পছন্দ হয়নি। হয়তো আমার
সন্ধান পেলে কোপাবে, সন্ধান পায়নি। তাই আপাদত ফেসবুক আইডিটিকে বলি দিতে
চেয়েছে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। প্রতিক্রিয়াশীলেরা আজকাল গ্রাম, শহর নগরের
অলিগলি পথ ঘাটেই থাকে না। কেবল উপাসনালয়েই থাকে না। সমাজ রাষ্ট্রের
প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের ভয়াবহ অবস্থান। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকেও
প্রতিক্রিয়াশীলদের আনাগোনা চোখে পরার মত। আপনি ঢাকার দৈনিক পত্রিকা ও টিভি
চ্যানেলগুলোর নিউজ ফিড ও পেইজে গিয়ে কমেন্ট পড়লেই বুঝতে পারবেন দেশটা কোন
দিকে যাচ্ছে। আমি অর্থেনৈতিক বিষয়ে বলছি না। ধার্মিক আর প্রথাবাদীরা মুখে
যতই ধর্ম আর নীতির কথা বলুক তারা খুন, ধর্ষন, দুর্নীতি অবৈধ আয়ে তাদের কোন
আপত্তি নেই। এ দেশে প্রতিবছর কেবল ইয়াবা নামক ড্রাগ বেঁচেই শত শত মানুষ
কোটিপতি হয়! এরাই তীর্থে যায়, উপাসনালয়ও তারাই বানায়। চিন্তা ও চেতনায় এ
দেশের নতুন প্রজন্ম কত নিম্ন মানের তা জানতে আপানাকে গবেষক হতে হবে না।
টিভি ও পত্রিকার নিউজ ফিডে কমেন্টেস্ পড়ে আসাই যথেষ্ট! এরা বাকস্বাধীনতায়
কেউই বিশ্বাস করে না। এদের বাকস্বাধীনতা কি, তা শেখানোও হয়নি। এরা ঘরে,
সমাজে, রাষ্ট্রে বাকস্বাধীনতার চর্চা দেখেনি। অথচ বাকস্বাধীনতা ছাড়া
স্বাধীনতার কোন মানেই হয় না। আর কে না জানে, বাকস্বাধীনতা ছাড়া গনতন্ত্রও
অচল! অথচ এদেরই দেখবেন, আবার সরকার ও শাসকের সমালোচনা করে। অথচ তারা
নিজেরা তাদের বিরুদ্ধে কমেন্ট করলে, একটুও সহ্য করে না। তাদের
প্রতিক্রিয়ার ভাষা দেখুন। স্পষ্ট বুঝা যায় তারা আলোচ্য বিষয়ে অজ্ঞ,
ব্যক্তিগত জীবনে উগ্র, সাম্প্রদায়িক, অগণতান্ত্রিক এবং, ফ্যাসিষ্ট। কেউ কেউ
তো মানবতাবিরোধী এবং জঙ্গি মনোভাবাপন্ন।
একটা
উদাহারন দিই, আমি একজন কে জিজ্ঞেস করলাম, বলতো জুম্মুকাশ্মীরের রাজধানীর
নাম কি? আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো! অথচ তাকে দেখলাম মীরপুরে, চায়ের
দোকানে ঝড় তুলেছে,শত নয় হাজার মাইল দুরের কাশ্মীর নিয়ে! অথচ যেখানে বসে
কথা বলছে তার পাশেই বিহারীরা ৭১ ও বাঙালিদের বলি দিতো, ধর্ষন করতো, চোখ
উপরে ফেলতো তার কিছুই জানে না! কমপক্ষে আধাঘন্টা তাদের আলোচনা শুনছিলাম।
উপস্থিত সকলকে জিজ্ঞেস করলাম তারা জানে কি না! একজনও উত্তর দিতে পারেনি। এ
রকম হলো আমাদের দেশের আলোচকদের অবস্থা। কেবল, এই একটি বিষয়ে আলোচনা নিয়ে
নয়; আপনি অধিকাংশ বিষয়ের আলোচনারই দেখবেন একই অবস্থা। এটা কেবল চায়ের
দোকানের ঝড় তোলা লোকদের বেলায় নয়, উচ্চ শিক্ষিতদের বেলাতেও। তাদের আলোচনায়,
অধিকাংশ বক্তব্য থাকে পরস্পর বিরোধী, অযৌক্তিক, অবৈজ্ঞানিক। আরো একটা
উদাহারন দেই; বারে মদ গিলছে গ্লাসের পর গ্লাস, আর বলছে শরীয়া আইন হলে দেশে
শান্তি আসবে! এমন কথা অন্তত দশবার শুনেছি। তেমনি উচ্চ শিক্ষিত সনাতন
ধর্মের ব্যাক্তিটি মনে করে পূর্বজনমের পাপের ফলে মানুষ কষ্ট করে। রাষ্ট্র ও
সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর যুদ্ধ ও বানিজ্য কৌশলের কথা ভুলে যায়!
কেউ
শত শত ভুল,মিথ্যা ও প্রোপাগান্ডা ছড়াবে। অযৌক্তিক কথা বলে যাবে তাকে কিছু
বলা যাবে না। তার পক্ষে চলে আসে সমাজ, আইন, ধর্ম ও রাষ্ট্র! আর যারা পড়ে,
গবেষনা করে লিখবে তাদের জন্য কয়েদখাানা হা করে চেয়ে থাকে। আর চায়ের কাপে
ঝড় তোলা ব্যক্তিরা তো কোপানোর জন্য এক পায়ে খাড়া! মৌলবাদী ও শাসক গোষ্ঠী
কখনোই নিজের সমালোচনা সহ্য করে না। করতে চায় না। কেন না, দুপক্ষেরই থাকে
লাখো হাজারো রেডিমেট সমর্থক। তাই পত্রিকা ও প্রকাশনা ইচ্ছা থাকতেও অনেক
বিষয় ছাপেন না। ফেসবুকই এখন প্রথা বিরোধী ও মুক্ত চিন্তকদের আশ্রয় স্থল।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো ফেসবুকেও মৌলবাদী ও ফ্যাসিষ্টদের ভিরে টিকে
থাকা দায়! এরা,ফেসবুক আইডি নষ্ট করে দেয়। নিজেদের অজ্ঞতা ঢাকতে এরা কেবল
খুনোখুনি, গালাগালি হুমকি ধামকিই দিয়ে ক্ষ্যান্ত হয় না। আইডিও গায়েব করে
দেয়!আমাকে অনেকবার ইনবক্সে গালাগালি হুমকি দেয়া হয়েছে। ফেকআইডি তো বটেই
জেনুইন আইডি থেকেও। আরো অদ্ভুত বিষয় হলো, আমার লেখা যাদের অপছন্দনীয়
কিন্তু যারা, জবাব লেখায় দিতে অক্ষম তারা, আমার নারী ফেসবুক ফ্রেন্ডদেরও
গালাগালি করে ইনবক্সে!! ডক্টর হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, সব কিছু নষ্টদের
অধিকারে যাবে, শেষে ফেসবুকও নষ্টদের অধিকারে চলে যাবে কি? নাকি চলে গেছে!
আমাকে
হুমকি ও ভয় দেখিয়ে থামানো যায়নি বলে, যারা,আমার ফেসবুক আইডি নষ্ট করে
দেয়ার পায়তারা করেছে তাদের প্রতি রইলো একরাশী করুনা। এবং সেই সাথে তাদেরকে
ধন্যবাদও জানাই। কেন না, তারা রেসের ঘোড়ার পেছনে চাকুক কষেছেন। আমি তো
লিখবোই তবে আমার লেখা ও বক্তব্য যে যথার্থ এবং মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, ভন্ড
রাজনীতিক, ও ফ্যাসিষ্টদের ভীত নড়াতে পেরেছে। তা না হলে তো আর আমার
ফেসবুক আইডিতে আক্রমণ চালাতো না। তবে, আমার লেখা আাগামীতে আরো ক্ষুরধার
হবে। ১৯৯৮ সাল থেকেই হুমকি ধামকি আক্রমনের শিকার হয়ে আসছি। থোরাই ভয় করি
এখন। আমি এখন ভয় "কাতুরে মাহবুব' ; যে আর কোন চোখ রাঙ্গানিকে ভয় করে না।
২০১৯ সালে ফোসবুক আইডি নষ্ট করে। কোন মুক্তচিন্তককে ঠেকানো যাবে না।
কুসংস্কার অপবিশ্বাস ও কুপ্রথার বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধ চলমান থাকবে। তাদের
প্রতি তীব্র নিন্দা জানাই যারা ফেসবুক আইডি গায়েব করে মানুষের
বাকস্বাধীনতা ও লেখার স্বাধীনতাকে হত্যা করতে চায়।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours