ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ
গোপনে. সংবাদ নিয়ে কবি ভারতচন্দ্র জানতে পারেন গঙ্গাচরন জীবত ! বর্তমানে এখানেই থাকেন! পাঁচ ছয় বছর আগে সপ্তগ্রামের এক কুলীন ধনী ব্রাক্ষ্মনের সাথে দেশত্যাগী হয়! তাঁর পুত্র সন্তান ছিল না! একটিই কন্যা, তিনি গঙ্গাচরনকে প্রস্তাব দেন, সে যদি তাঁর কন্যাকে বিবাহ করে ঘরজামাই থাকে, তাহলে সমস্ত বিযয় সম্পত্তি তাকে দেবেন!গঙ্গাচরন এক বাক্যে রাজী হয়ে যায়! শ্বশুরবাড়ী ঘুরে ঘুরে পার্বনী আদায় তার আর সহ্য হচ্ছিল না!একটা স্হায়ী আস্তানা,যৌবনবতী স্ত্রী, দিবারাত্র সুখাদ্য, প্রত্যহ জামাই আদর সে তো স্বর্গ সুখ! কিন্তু শ্বশুর মশাই তাকে দুটি শর্ত দিলেন এক, তার নাম পরিবর্তন করে গয়ারাম করতে হবে, দুই তাকে দাড়ি রাখতে হবে! কারন রাস্তায় যদি তার কোন শালা সম্বন্ধী তাকে নিয়ে টানাটানি করে!
গঙ্গাচরন 'গয়ারাম ' হয়ে আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসল! বিয়ের পর শ্বশুরের ইচ্ছায় তাঁর সাথে তীর্থ যাত্রায় করল সাথে শ্বাশুড়ী আর নববিবাহিতা স্ত্রী! কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন সহ উত্তর খন্ডের বহু তীর্থ ঘুরতে কয়েক মাস লেগে গেল! ফেরার পথে কেন্দুবিল্বের কাছাকাছি বর্গীদের দ্বারা আক্রান্ত হ'ল! বর্গীদের হাতে নিহত হ'ল শ্বশুর শ্বাশুড়ী, ধর্ষিতা হওয়ায় লজ্জায় স্ত্রী আত্মঘাতী হ'ল, গঙ্গাচরনের একটি পা খোঁড়া করে দিল বর্গী দস্যুরা, সর্বস্ব লুঠ করল , এমন কি শ্বশুর বাড়ীর ঠিকানা লেখা লাল খেরো খাতাটাও বর্গীরা পুড়িয়ে দিল!
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোন রকমে আদি সপ্তগ্রামে পৌঁছে দেখে, ইতিমধ্যেই তার খুড়তুতো শ্যলকরা সম্পত্তির দখল নিয়েছে,গঙ্গারামকে হুমকী দেয় যদি সে আদি সপ্তগ্রাম ত্যাগ না করে তাহলে আর একটি পা তারা খোঁড়া করে দেবে!
পাঁচ সাত বছর না থাকায় ইতি মধ্যে নেদের পাড়ার পৈত্রিক ভিটেও বেদখল হয়ে গেছে!
বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করে গয়ারাম! ঘটনাচক্রে উলোর আনন্দময়ী তলার " আনন্দময়ী কালীমায়ের " পুজো দিয়ে ফেরার পথে তাকে চিনতে পারে রসিকলাল রায়ের মা! তিনি দেখেন মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে এক খোঁড়া ভিক্ষুক ভিক্ষা করছে!তাঁকে একটি পয়সা ভিক্ষা দিয়েই চমকে ওঠেন বৃদ্ধা, জিঞ্জাসা করেন, তার নাম কি গঙ্গাচরন?
(চলবে)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours