মনিজিঞ্জির সান্যাল, লেখিকা, শিলিগুড়ি:
হঠাৎ বৃষ্টি এলো তুমুল বেগে এবং ভাসিয়ে দিল আমাকে এবং আমার শহরকে । স্মৃতিতে ভেসে উঠল শিলং এবং আমার অমিতো রয় ( অমিত রয় ).....
অমিত রয় কে আমি পছন্দ করি, ব্যারিস্টর । অবশ্য রায় পদবী থেকে ইংরেজি ছাঁদে ' রয় ' ও 'রে ' তে রূপান্তর ধীরে ধীরে । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি, এ -র কোঠায় পা দেবার আগেই অমিত অক্সফোর্ডে ভর্তি হয় ; সেখানে পরীক্ষা দিতে দিতে এবং না দিতে দিতে ওর সাত বছর কেটে গেল । বুদ্ধি বেশি থাকাতে পড়াশোনা বেশি করেনি , অথচ বিদ্যেতে কমতি আছে বলে তো মনে হয় না ।
অমিতের সাথে একটা ব্যাপারে আমি একদম একমত " ফ্যাশন হল মুখোশ , স্টাইলটা হল মুখশ্রী "। অমিতের নেশাই হল স্টাইলে ।কেবল সাহিত্য- বাছাই কাজে নয় , বেশ ভূষায় ব্যবহারে। ওর চেহারাতেই একটা বিশেষ ছাঁদ আছে --পাঁচজনের মধ্যে ও যে কোনো একজন মাত্র নয়, ও হল একেবারে পঞ্চম; অন্যকে বাদ দিয়ে চোখে পড়ে ......খুব চমকে গেলেন তো ! আসলে পরিবারের সবাই মিলে মেঘালয় গিয়েছিলাম সেই সেবার , তারপর চেরাপুঞ্জির বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম নিজের মতো করে। হ্যাঁ আবার যাব , বহুবার যাব ।
আহা "শিলং" আর শিলং মানেই তো কতো কি !!!!!!!!! কবিগুরুর " শেষের কবিতা " " রক্ত করবী " আরো আরো কতো কি । তাই এই মুহূর্তে আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী 'অমিত ' আর অবশ্যই ' লাবণ্য '। আহা নিজেকে লাবণ্য ছাড়া এই মূহুর্তে আর কি-ই বা ভাবতে পারি । আসলে বৃষ্টি এলে আমার মনটা একেবারে পালটে যায় যে।
কিন্তু এই মুহূর্তে চোখের সামনে ভেসে উঠছে আঁকাবাঁকা সরু রাস্তা , ডান দিকে জঙ্গলে -ঢাকা খাদ । রাস্তায় কোনো যাত্রী নেই , তাই কোনো আওয়াজ না করে অসতর্ক ভাবে অমিত নিজস্ব স্টাইলে আপন মর্জিতে গাড়ি চালাচ্ছে । এমন সময় বাঁকের মুখে এসেই দেখল, নিচ থেকে একটি গাড়ি উপরে উঠে আসছে কিন্তু পাশ কাটাবার জায়গা নেই । ব্রেক কষতে কষতে গিয়ে পড়ল তার উপরে---পরস্পর আঘাত লাগল এবং অন্য গাড়িটা খানিকটা গড়িয়ে পাহাড়ের গায়ে আটকে থেমে গেল ।
একটি মেয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল । সদ্য মৃত্যুর হাত থেকে একটুর জন্য বেঁচে যাওয়া এক রমণীর ছবি, যাকে অমিত দেখল দুর্লভ অবসরে । "পৃথিবীতে হয়তো দেখবার যোগ্য লোক পাওয়া যায়, তাকে দেখবার যোগ্য জায়গাটি পাওয়া যায় না । "
অমিত গাড়িতে টুপিটা খুলে রেখে এসে তার সামনে দাঁড়ালো । যেন একটা পাওনা শাস্তির অপেক্ষায় ।
"লাবণ্য ".......
হ্যাঁ এই মুহূর্তে লাবণ্য আর অমিত আমার হৃদয় জুড়ে । কিছু কিছু দৃশ্য বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে , যেমন-
" হে অচেনা,
দিন যায়, সন্ধ্যা হয় , সময় রবে না -----
তীব্র আকস্মিক
বাধা বন্ধ ছিন্ন করি দিক ;
তোমারে চেনার অগ্নি দীপ্তশিখা উঠুক উজ্জ্বলি ,
দিব তাহে জীবন অঞ্জলি । "
আবৃত্তি শেষ হতে না হতেই অমিত লাবণ্যের হাত চেপে ধরল । লাবণ্য হাত ছাড়িয়ে নিল না । অমিতের মুখের দিকে চাইল , কিছু বললো না ।
এরপর কোনো কথা বলবার কোনো দরকার হল না । লাবণ্য ঘড়ির দিকে চাইতেও ভুলে গেল ।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours