প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:

পরিত্যক্ত মন্দির ছুঁয়ে আছে পাথর, কাঠ... 
 জড় জীবনের আলোকিত পৃথিবী ছুঁয়ে আছে-
 অকাল সূর্য, 
 তবে কি নকল  চোখ আমার..।। 

পূর্ব পটের হাত ধরে বহমান জৈন মন্দির। উচ্চতা ৩০- ৩২ ফুট। ভগ্নপ্রায় ঘর অন্ধকার শুঁকে আছে , হাড়মাসড়ার মাকড়া পাথরের দেউল। কৃত্রিম নয়, বলের মতো কাল জুড়ে আছে  ষোড়শ কাল। অতীতের জ্বালা নয়, পাগলের মতো খুঁজে চলে ৫- ৬ টি জৈন দেউল ; অঞ্চল ভিত্তিক দেউলগুলির সংলগ্ন করে গড়ে উঠেছে  ৬ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট পার্শ্বনাথের মূর্তি৷ দেউলের সান বাঁধানো পুকুর থেকে বেশ কয়েকটি জৈন তীর্থঙ্করমূর্তি আজও শিবমন্দিরে স্থান পেয়েছে। মূর্তিগুলির মধ্যে একটি মহাবীর ও একটি নেমিনাথের মূর্তি। 

তবে প্রাচীনের পাথরে আজও খুঁজে  ফেরে সাদাকালো মাথার ভিড়ে ইতিহাস। মাটি থেকে প্রাপ্ত উদ্ভট আঁধার,  কিছু হিন্দু ধর্মের উপাদানের কথাও উল্লেখ করে। কখনও মনে হয় ঈশ্বর খুঁজিতে খুঁজতে
শাশ্বত আয়তক্ষেত্র জুড়ে আছে স্বস্তিকা চিহ্ন৷ খণ্ড দেববিগ্রহ এবং জৈন ধর্মের সংমিশ্রণ এখানেই দেখা যায়। তবে বৈভাষিক খিদে গ্রাস করেছে চুল্লি আর ধাতব মাঠ,  যার ফলে প্রবাসী হয়েছে সবুজের সমারোহ। 
আজ নিজের মতো করেই বলতে ইচ্ছা করে -

আমার আবেগের অসুখ, 
মনের দরজায় তান্ত্রিক যন্ত্রণার সুখ.. 
সীমানায় আঁকা মুখ... 
জীবন্ত আবার।। 

   এইভাবেই তো প্রত্নতত্ত্ব ঋণ আমাদের। খাঁদাসিনি জুড়ে আছে অস্ত্র, মাটির তৈজসপত্র আর তার সাথে পাথুরে মন্দির৷ "হাড়মাসড়ার রায় পরিবার " প্রবন্ধ বলে, এখানে বেশ কিছু ভিক্ষুনিবাস ছিলো। এমনকি
ক্ষুদ্র বৌদ্ধ ও জৈন প্রস্তর বিগ্রহ পরিলক্ষিত হয়৷ 

মাকড়া পাথরের তৈরি মন্দির, কেশাতড়ায় আজও বর্তমান। মুখে আঁচল চেপে যদি কপাল ছোঁয়া কালের জ্বর দেখি, তবে মন্দিরের ক্লান্তিময় বনোগল্প সুখে জর্জরিত প্রাণের আবেষ্টনীকে উল্লেখ করে। আর সেই টলমল স্তূপের পাথরেই তৈরি হয়েছে বহু বাড়ি, যার ভিত্তি ধরে আছে আঞ্চলিক বনমোরগের ঘনকালো আহ্বান..  অধিবাসী ক্লান্তি হাঁপায়। 

এরপর আসি সুলগীর কথায়। এক জনহীন মৌজা, বুক পেতে আছে ৪, ৬ ও ৩ গড়ে গোলাপী আভাযুক্ত ঘন দুধ রঙের প্রস্তর খন্ডের ধ্যানমূর্তি দ্বিভুজা শাসনদেবী৷ কালের বশে এ মূর্তি বুদ্ধ মূর্তি বলে অনেকের ভ্রম হয়৷ প্রাজ্ঞ গবেষণা প্রকাশ করে যে, এটি যক্ষিণী অম্বিকা মূর্তি। এর দুইপাশে আছে দুই শিশু। এরা অম্বিকার দুই ছেলে শুভঙ্কর ও প্রিয়ঙ্কর। 

ইন্দাপুর থানা 

প্রোথিত ভগ্ন অম্বিকা মূর্তিতেই দাঁড়িয়ে কলামী। 

মানুষের ভিতর যেন কালের আঁশ ; আর এই আঁশ জুড়েই আছে বিমল পাত্রের বাড়ির জৈন মূর্তি দেহ। এই মূর্তির লাঞ্ছনভাগ রয়েছে হাতি।হাতি দ্বিতীয় জৈন তীর্থঙ্কর অজিতনাথের লাঞ্ছনচিহ্ন।  

জোড়দা জুড়ে আছে জৈনমূর্তি।  সংস্কার যেন প্রশ্নের মুখে কুয়াশাজড়ানো সংস্কার, বিলুপ্ত আজ। 

ফুলকুসুমা শায়িত আছে পুরানো গৌরবে, প্রাপ্তি হরগৌরী মূর্তি ও যক্ষিণী মূর্তি। 

বাগালকুন্দিতে প্রাচীন জৈন মন্দিরের চিহ্ন আছে। 

পোড়ামাটির কূপে পরিপূর্ণ করে আছে পাঁচপোখারিয়া। পরিত্যক্তের অভিমান আর করুণার গল্প যেন উঁকি দিয়ে যায় নির্দ্বিধায়। 

ভগ্নপ্রায় জৈন মন্দির নিয়েই আছে হিকিম কানালীর পাড়৷
 
বসুবলদ জুড়ে আছে ষাঁড়েরডিহি এবং শিবমন্দিরের জৈনমূর্তি নিয়েই বৈপরীত্যের বালিয়াড়া। 

 হীড়বাঁধ থানা

ভোজদা গ্রামে তখন সংস্কারের ধুম। আর সেই মুহুর্তে সাংড়া নামক পুষ্করিনীর সংস্কার সাধন করেই জৈন মঠ পাওয়া যায়৷ এই  মঠ মুসলিম আক্রমণের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এই মূর্তির লাঞ্ছন চিহ্ন সর্প, তাই তার স্থান নিকটবর্তী শিবমন্দির৷ 

শীলাবতী জুড়ে আছে ঋষভনাথ, পার্শ্বনাথ ও অম্বিকা মূর্তি।  বামনি গ্রাম ছুঁয়ে আছে জৈনমূর্তি৷ পাইড়া এবং ঝরিয়াকোচার নাম  মানেই মহামায়ার নাম উল্লেখ্য৷ 

দেউল শরীর ছুঁয়ে আছে অবারিত৷ স্পর্শ ছুঁয়ে, আশচর্যের ধারাপাত.. বিকল্পের শাশ্বত আহ্লাদ... 
শিলাবতী উপত্যকা।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

1 comments so far,Add yours

  1. অসাধারণ উপস্থাপনা। মন ছুঁয়ে গেল সুধী।

    ReplyDelete