সঞ্চারী চট্টোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার, কলকাতা:
প্রেম কিভাবে কোন পথে হয় এ প্রশ্নের জবাব বোধহয় মানুষ খুঁজে চলেছে সেই কোন আদিকাল থেকে । বহু তত্ত্ব , বহু গবেষণার পরও প্রেমের সঠিক কারণ কেউ উদঘাটন করতে পারে নি । তবে একুশ শতকের দু দশক পেরোনোর মুখে প্রেমের কারণ খোঁজার তত্ত্বে আরো একটি নতুন তত্ত্ব যোগ হয়েছে - স্যাপিওসেক্সুয়ালিটি । এখন প্রশ্ন হচ্ছে এর অর্থ কি ? আমাদের মা ঠাকুমাদের আমলে যখন প্রেম বিবাহ অতটাও প্রচলিত হয় নি , তখন পাত্রের রূপ অথবা বিষয় সম্পত্তিই সম্পর্ক স্থাপনের প্রধান মাপকাঠি ছিল । কিন্তু আজকের প্রজন্মে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে প্রত্যেকে শিক্ষিত এবং জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনী পছন্দের ব্যাপারে তারা মোটেই শুধু অর্থ বা রূপকে প্রাধান্য দেয় না । সঙ্গীর রুচি , কথা বলার পদ্ধতি , মনের গভীরতা ইত্যাদি বহু বিষয়কে তারা অগ্রাধিকার দেয় এক্ষেত্রে । সেই কারণেই এই প্রজন্ম জীবনসঙ্গীকে আগে বন্ধু বানাতে চায় , অভিভাবক নয় ।
তাইজন্যই এই প্রজন্মের অনেকের কাছেই সাংসারিক আলোচনার চেয়ে সঙ্গীর সাথে সামাজিক আলোচনা , প্রচলিত মতের বিপরীতে হাঁটার প্রবনতা ইত্যাদি বিষয়গুলিকেই আগে রাখা সঠিক বলে মনে হয় । প্রকৃতপক্ষে এরাই হল স্যাপিওসেক্সুয়াল । যৌনতার ক্ষেত্রেও স্যাপিওসেক্সুয়ালরা রূপের চেয়ে মেধাকে এগিয়ে রাখে । শারীরিক আকর্ষণ তাদের জন্য খুবই সাময়িক । কিন্তু সঙ্গীর সাথে নানা বিষয়ে মত বিনিময়ের পর তারা যখন একবার সঙ্গীকে বেছে নেয় জীবনের জন্য উপযুক্ত হিসাবে , তারপর তারা অন্য দ্বিতীয় পুরুষ বা নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয় না । ঠিক এই কারণেই একটি ডেটেই স্যাপিওসেক্সুয়ালরা নিশ্চিত হতে পারে না তাদের সঙ্গীর সম্পর্কে । অতিরিক্ত চিৎকার করে, মেজাজ দেখিয়ে যাঁরা নিজেদের মত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন, তাঁরা স্যাপিওদের দু’চক্ষের বিষ । একইভাবে বোকামিও বিলকুল অপছন্দ তাঁদের। যাঁরা নিজেদের অনুভূতিকে যুক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে পারেন, যাঁরা চট করে মেজাজ হারান না, জটিল পরিস্থিতিকেও শান্তভাবে সমাধান করার চেষ্টা করেন, সেরকম পুরুষকেই পছন্দ করেন স্যাপিও মেয়েরা । যদিও স্যাপিওসেক্সুয়ালদের মেধাপ্রীতির জন্য অনেকেই তাদের অহঙ্কারী বলে ভুল করেন । কিন্তু তাতে স্যাপিওরা মোটেই বিচলিত হন না । তাদের মনন ও মেধার প্রতি ভালোবাসা এবং নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাস তাদের নিজেদের ভাবনা থেকে টলাতে পারেনা কোনভাবেই ।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours