vromon kahini
সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুর: লঞ্চ থেকে নামলাম এক দ্বীপে।এখানেই আমাদের রাতের ঠিকানা।চারিদিকে ঘোর অন্ধকার।দুরে সোলার আলো জ্বলছে।আমাদের গন্তব্য হোটেল প্রমীলা।ইট পাতা রাস্তার ওপর সাবধানে পা ফেলে চলেছি।আকাশে বিরাট জ‍্যোৎসার চাদর। বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে দুই তিনটি হোটেল।আমাদের জন্যে দোতলা ও তিনতলায় ছয়টি ঘর রাখা।বেশ ভালো ব‍্যবস্থা।সকলের মন চা চা করছে।সাদিকের লোক জন মালপত্র দিয়ে গেল চা আনতে।
প্রমীলা বাহিনীর আড্ডায় চলছে বিশ বা বাইশ বছরের গৃহস্থ জীবনের সাফল্যের ধারাবিবরনী।এখানের সবচেয়ে প্রিয় বিষয় ,তার সবচেয়ে প্রিয় পোষ‍্যটির অকর্মণ্যতা। এখানে আপনি সেই দুর্গার, শিববন্দনা স্মরন করতেই পারেন---- অতিবড় বৃদ্ধ পতি,সিন্ধিতে নিপুণ। কোন গুন নাই তার ,কপালে আগুন। আমার দিকে চেয়ে বললেন এক বৌদি, তোমার দাদাতো তোমার ভীষন নাম করে‌। দেখ কেমন একা হাতে অফিস বাড়ি সব সামলাচ্ছে।এখানে মৃদু হেসে নীরব থাকাই শ্রেয়। আমার মত "হিম্যান*গোছের ওমেনরা হেভি সেন্টু খায়।গদগদ হয়ে যদি বলেছেন কোন এক ঝড় বাদলের রাতে মাসকাবারীর থলে হাতে টোটো সন্ধানী আপনাকে দাদা লিপ্ট দিয়েছেন ও সৌজন্যর কফি পান করেছেন তবেই হয়েছে চিত্তির। এর মাঝেই গরম চায়ে বলতে বলতে শ্রীমান দেবরের প্রবেশ। আমাকে ভালো করে চা খাওয়াও।নয়তো মনমতো কফি পাবেনা ফিরে গিয়ে।। সেটা ঠিক বৌদি। কোথাও কোথাও তো ফোন করে দুধ,চিনি আছে কিনা জানতে হয়। কথাটা সত্যিই।অগোছালো জীবনের পথচলায়,সাজানো কাপ,ধোয়া ওঠা কফির পারিপাট‍্য নেই।
তবে করে নাও,দেখো ওখানেই হবে বলে রান্না ঘরের অবাধ প্রবেশের অধিকার ও সাজানো পেয়ালা পিরিচে নেই। হতাশা বা হুতাশ কোনটাই নেই। নিজের ঘরে এসে দেখলাম জিমের বেশ ঠাণ্ডা লেগেছে।আসার আগে দো বুদ জিন্দেগী কি,কিছু হোমিওপ্যাথি ওষুধ নিয়ে এসেছি ।জিম ও তার দিদির কথায় "জেঠুর ওষুধ"।প‍্যাকেটে লেখা,নাক বন্ধ, গলা খুসখুস,পেট গুড়গুড় আরো।যেটায় প্লাস দিয়ে সব আছে নাক বন্ধ*জ্বর*গলা ব‍্যথা সেটা খাইয়ে জামা কাপড় বদলিয়ে তাকে দিলাম শুইয়ে। দিদি এলো নাচতে নাচতে।জামা দাও।জামা দাও।আই লাভ ইউ মা এটা আমার বেস্ট জন্মদিন। সবাই যে যার ঘরে। বারান্দায় এসে বসলাম।আকাশে চাদেঁর রঙ লাল।*ব্লাডি মুন *। কালো আকাশের গায়ে একাকী জেগে থাকা ।মাঝে মাঝেই ভেসে আসছে জলের শব্দ।কখনওবা ঝুপ করে পার ভাঙার শব্দ।যেন গোপনেই ক্রমাগত ভাঙছে কোন সম্পর্ক। আমাদের কল্পনায় ঐ লাল দূরবর্তী গোলক কত কি।মামা,বুড়িমা,প্রেয়সীর মুখ। কিন্তু তার নিজের কথা কেউ শুনেছে? হয়তো বা তার একান্তই নিজস্ব অন্তক্ষরণে সে আজ ব‍্যাথায় রক্তাক্ত।
 বুকের মধ্যে কেমন একটা অজানা কষ্ট, গান হয়ে বেড়তে চাইছে "এ কুল ভাঙে,ও কুল গড়ে,এইতো নদীর খেলা। (ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours