education
গৌতম ভট্টাচার্য, সমাজকর্মী: সর্বশিক্ষা মিশন। এক গালভরা নাম। বিশেষ শিশুদের শিক্ষা প্রদানের জন্য grass root লেবেলের সরকারি ভাবনার প্রায়োগিক দিক। উদ্দেশ্য মহৎ। কিন্তু উদ্দেশ্যের বাস্তব চিত্রটায় বড়ই অবহেলার ছায়াছবি। সরকারি নিয়ম এবং নির্দেশানুসারে এখন সমস্ত শিশুই সরকারী বা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা সুবিধার মধ্যে সমস্ত রকম শিশুদের ভর্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিক্ষার অধিকার সকলের আছে এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই বিশেষ নির্দেশিকা। যা পালন করবে সবাই, সরকারি বা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি যৌথভাবে। বিশেষ শিশুদের (সেরিব্রাল পালসি, অটিজম, ডাউন সিনড্রোম, মানসিক প্রতিবন্ধী, সমষ্টিগত প্রতিবন্ধী) শিক্ষা প্রদানের পদ্ধতি যেহেতু একেবারেই ভিন্ন এবং তাদের প্রশিক্ষণে যেহেতু বিশেষ প্রশিক্ষকের প্রয়োজন তাই সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে সর্বশিক্ষা মিশনের অধীনে একজন বিশেষ প্রশিক্ষক নিয়োগ করা আছে যিনি তাঁর অঞ্চলের যাবতীয় সরকারি বিদ্যালয়ের বিশেষ শিশুদের প্রশিক্ষণের দায়িত্বে আছেন। এই কাজে তিনি দায়িত্ব (?) নিয়ে কাজ করলেও তাঁর তালিকার মধ্যে থাকা স্কুল গুলির প্রতিটিতে (সংখ্যাটা মোটেই কম নয়) তিনি সপ্তাহে একদিন ছাত্র ছাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট রিসোর্স রুমে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেবার সুযোগ পান। এবং সেটা নরম্যাল শিক্ষার কারিকুলাম অনুসারেই। 
অথচ আমরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তির পরিচয় আমরা জানি , প্রশিক্ষক জানেন, জানেন সরকারও , যেখানে তাদের বুদ্ধাঙ্কের মান সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে অনেক পিছনে। সর্বার্থে তারা পিছিয়ে পড়া। তারা শিখতে দেরী করে, তারা সাধারণ ভাবে নির্দিষ্ট পাঠ্যপুস্তকে দেওয়া বিষয়ের জটিল ভাষা বুঝতে পারে না, তাদের মনে রাখার ক্ষমতা কম এবং সর্বোপরি তাদের প্রাথমিক ভাবে অ্যাকাডেমিক বিষয়ে তৈরী করতে দীর্ঘ দিনের বিভিন্ন বিশেষ প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এসবের কোনো ব্যবস্থা নেই কোথাও। অথচ সর্বশিক্ষা মিশনের এই ভাবে নিয়ম রক্ষা করার কাজ দিয়ে কোন উদ্দেশ্য সাধিত হচ্ছে? এটা নিয়ে কেউ ভাবছেন না। বিশেষ শিশুদের সপ্তাহান্তে একদিন এইরকম দায়সারা প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে কতগুলি শিশু সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহের পাঁচদিনই বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক রয়েছেন। ফলে বিশেষ শিশুদের মধ্যে পড়াশোনার ভীতি এবং ফলশ্রুতিতে স্কুলছুটের সংখ্যার বাড়বাড়ন্ত। আবার দ্বিচারিতার অনন্য নিদর্শন হলো এই রকম দুর্ভাগ্যজনক ব্যবস্থায় এই বিশেষ শিশুরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একই পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিতে বাধ্য থাকে। যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে সব দিকে পিছিয়ে আছে বা থাকে, এটা যখন আইনগতভাবে সর্বজনবিদিত তখন তাদের জন্যে পরীক্ষা দেবার একই ব্যবস্থা? হাস্যকর নয় কি? তাদের জন্য না আছে প্রতিদিনের প্রশিক্ষক, না আছে তাদের উপযোগী কারিকুলাম। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা ব্যবস্থায় এদের উপযোগী নির্ধারিত বিষয় যেমন আছে তেমনি এদের পরীক্ষা দেবার পদ্ধতিও একদম পৃথক। সেসব মানছে কে? সুতরাং কাগজে কলমে সব সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সরকারি ব্যবস্থায় বাস্তব চিত্রটা হৃদয় বিদারক। এই বিশেষ শিশুরা সব অবস্থাতেই অবহেলিত। আগেও ছিল, এখনও আছে। অথচ সমস্যা নিরাময়ে প্রসাধনী উপকরণের ছড়াছড়ি।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours