fiture
মহঃএনামুল হক, ফিচার রাইটার, বর্ধমান: একদা অখন্ড বাংলার রাজধানী ছিল এই মুর্শিদাবাদ। ক্লাইভের মন্তব্যে তৎকালীন সময়ে মুর্শিদাবাদকে লন্ডনের সাথে সমতুল্য ধনসম্পদ নগরীর তথ্য পাওয়া যায়। সেই মুর্শিদাবাদ জেলা বর্তমান ভারতের সবচেয়ে দারিদ্রতার তকমা পেয়েছে। দারিদ্রতায় ভারতে ষষ্ঠতম জেলা এই মুর্শিদাবাদ। জেলায় না আছে কলকারখানা, না আছে উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান। আজও এই জেলায় একটিও বিশ্ববিদ্যালয় নেই। কেন নেই? উচ্চ শিক্ষা যাদের প্রয়োজন তারা বঞ্চিত হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। যাদের সুযোগ আছে তারা বাইরের জেলায় গিয়ে হোস্টেলে থেকে বহু ব্যয় করে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে। কিন্তু যাদের আর্থিক অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে লড়াই করে এগিয়ে যেতে হয়, তারা কি ভাবে উচ্চ শিক্ষার জন্য বাইরে থেকে অর্থ ব্যয় করে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করবে? এখানে একটা কথা উল্লেখ না করে পারলাম না, এই জেলাটি একটি মুসলিম অধ্যুষিত জেলা অথচ এখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার হার খুবই নগণ্য। কারণ হিসেবে অবশ্যই আর্থিক অনটন এবং জেলার মাটিতে আজও বিশ্ববিদ্যালয় না থাকা।
প্রাক্তন আই, পি, এস, নজরুল ইসলামের একটা মন্তব্য তার বই থেকে তুলে দিচ্ছি। "মুসলমানেরা শিক্ষায় এত পিছিয়ে কেন? হাজার জনের হাজার মত থাকতে পারে। আমি একটি মুসলমান প্রধান এলাকার মুসলমান নিরক্ষর দরিদ্র পরিবারে জন্মে, তাদের সঙ্গে বেড়ে উঠেছি, উচ্চ শিক্ষিত - প্রতিষ্ঠিত হয়েও তাদের সঙ্গে থেকে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, মুসলমানদের শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ার সবচেয়ে বড়ো কারণ মুসলমান প্রধান এলাকায় বিদ্যালয় - মহাবিদ্যালয় - বিশ্ববিদ্যালয়ের একান্ত অভাব এবং ছেলে মেয়েদের দূরে ছাত্রাবাসে রেখে পড়াবার মতো আর্থিক সংগতি অধিকাংশ মুসলমানদের না থাকা। " নজরুল ইসলাম বহু নেতা মন্ত্রীদের সাথে দরবার করেও জেলায় একটা বিশ্ববিদ্যালয় এর অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হন। 2007 সালের 13 ই মার্চ থেকে 2009 সালের 21 মে পর্যন্ত তিনি শত চেষ্টা করেও জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন করাতে পারেন নি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তো দূর অস্ত তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেষ্টাতেও বিফল হন। এরপর অনেক সময় অতিবাহিত হয়ছে। জেলার বিভিন্ন দলীয় সংগঠন আন্দোলন করে পথে নেমেছেন। FUM (ফোরাম ফর ইউনিভার্সিটি অব মুর্শিদাবাদ)র সভাপতি সহ সকল সদস্যরা ফারাক্কা থেকে লালগোলা পদযাত্রা করে আন্দোলন করেছেন জেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি নিয়ে।
 তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আইনজীবী মোজাম্মেল হক। সুভঙ্কর সরকার। শিক্ষক রাইহানুল হক, এছাড়াও জেলার হাজার হাজার শিক্ষানুরাগী মানুষজন।
তবুও সরকার দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি।
গত 2018 সালের 11 ই ফেব্রুয়ারি কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার প্রাঙ্গণে জেলার কয়েক শত মানুষ শিক্ষক, আইনজীবী, পড়ুয়া, ব্যবসায়ী, এবং ফোরামের সদস্যবৃন্দ এসে উপস্থিত হন।
মেলা প্রাঙ্গণে নগরের বুদ্ধিজীবী, পত্রকার, লেখক চিত্রসাংবাদিক, গবেষক, অধ্যাপক এবং শিক্ষনুরাগী সমাজের সচেতন মানুষের কাছে জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন কতটা জরুরী সেই বার্তা পৌঁছে দিতে।
মানববন্ধন করে নগরের সুশিক্ষিত জ্ঞানী মানুষজনের কাছে আমাদের প্রতি বঞ্চনার ঘটনা গুলো তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলাম।
তবুও আমাদের জন্য রাজ্যের বুদ্ধিজীবিরা এক কলম লেখেন নি।
বিধানসভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে একপ্রস্থ আলোচনা হয়।
পরে জানতে পারি, জেলার কৃষ্ণনাথ কলেজ কে বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রস্তাব করেছে রাজ্য সরকার।
সেটাও বিশবাঁও জলে, কাগজে কলমে হয়েছে আর কি। ঠিক যেমন আলিগড় ক্যাম্পাস কাগজে কলমে হয়েছে আর কি।
অথচ প্রতিবেশী জেলা নদীয়ায় গোটা এক গুন্ডা বিশ্ববিদ্যালয় আছে আম্বানীদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সহ আর কি।
কেন হ'ল না আজও এই জেলায় একটিও পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়?
এই উত্তর আজও অজানা।
জনসংখ্যার অনুপাতে গোটা ছয় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা হিসেব তাই বলে।
কিন্তু আজও একটিও বিশ্ববিদ্যালয় নেই কেন?
যদি উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান না না থাকে নাগালের মধ্যে, যদি উচ্চ শিক্ষার সুযোগ না পায় জেলার মানুষের ছেলে মেয়ে রা তবে উচ্চ বেতনের চাকরি জোটাতে কিভাবে?
উচ্চ আয় ছাড়া জেলার আর্থিক হাল ফেরাতে পারবে কি ভাবে?
সবাই চাকরি পেয়ে যাবে সে কথা মোটেও বলছি না।
তবে যারা মেধা থাকা সত্ত্বেও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছে বা আজও হচ্ছে তাদের ক্ষতির হিসেব কারা দিবে?
পরিশেষে বলি ঐ যে বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোছলমানদের বড্ড বেশি বেশি তোষণ করে চলেছে, তাদের থেকে জানতে বড্ড ইচ্ছে করে এটাও কি এক ধরনের তোষণ?
জেলায় সম্ভবত 63 শতাংশ মুসলিম।
উচ্চ শিক্ষায় সুযোগ কিন্তু অমুসলিম ছেলে মেয়েরায় বেশি পাবে।
সেখানে চাকরি হলে বড় জোর দুই শতাংশ মুসলিম ছেলে মেয়ে রা দখল করতে পারবে। বাকি আটানব্বই শতাংশ চাকরি কিন্তু অমুসলিম ছেলে মেয়েরা পাবে।
আমি বর্ধমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের খুবই কাছে থাকি তাই দেখেছি দেখছি একটা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাছাকাছি থাকলে কিভাবে জনজীবন কে দ্রুততার সাথে স্বচ্ছ ভাবে বদলে দিতে পারে।
আমার জেলার ছেলে মেয়ে দের জন্য অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় চাই।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours