politics
জীবন রায়, প্রাক্তন সি পিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:  রামমোহন বিদ্যাসাগরের কাল থেকে ভারতে ফরাসি বিপ্লবের পরিনাম স্বরুপ উদারনৈতিক ভাব শ্রোত ভারতে প্রবেশ করতে শুরু করে। রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় প্রাচিন ভাবসত্বার সাথে, ইতিমধ্যে স্থিমিত হতে শুরু হওয়া ইউরোপীয় রেনেশা, অন্যপ্রান্তে অক্টোবর বিপ্লবের শ্রোত ধরে নতুন মানবিক সুর্য্যচ্ছটা বেয়ে, উদারনৈ্তিকতকেই মানবিক পর্য্যায়ে উঠিয়ে আনেন। ইতিহাসের কি বিচিত্র খেলা, একদিকে সে ভাংগলেও অন্য দিকে সে গড়ে চলে। রেনেঁশার সহযোগে ফরাসি বিপ্লব, ১৭৮৯ যখন ইতিহাসে যুক্তিবাদ এবং আধুনিকতা নিয়ে এলোঃ এই প্রবাহ ভাটা শুরু হতে না হতেই, আধুনিকতার সর্বচ্চ ধাপের ঠিকানা জানিয়ে অক্টোবর বিপ্লব জানিয়ে দিলো - 'সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে কেউ নাই'। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নিধনের পর, আধুনিকতার মানবিক রুপটা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে অনেক দূরে এগিয়ে গেলো। 
এইভাবে কার্ল মার্ক্সের প্রকৃতি বিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সংযুক্তির বিষয়টি সমাজ বিজ্ঞানের হাত ধরে, জ্ঞান এবং সংস্কৃতির সমস্ত প্রবাহে শ্রোতস্বিনী হওয়ার সুযোগ পেলো। দ্বিতীয় যুদ্ধের পরিনাম হিসেবে পূর্ব জার্মানী সহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ নিজেদের সমাজতন্ত্রি হিসেবে ঘোষনা, পরবর্তী কালে চিন এবং কিউবার বিপ্লবে এবং সাথে সাথে ভারত সহ, তৃতিয় বিশ্বে, এসিয়া আফ্রিকা এবং লাতীন আমেরিকার দেশগুলি স্বাধীন হয়ে যাওয়া এবং তাদের প্রধান পাচটি দেশ (পঞ্চশীল) এর উদ্যোগ গোষ্টি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতীক গোষ্টি গঠনের সাথে সাথে বিশ্বে এক প্রান্তে আমেরিকার শক্তি বাড়তে থাকলেও, বিকল্প শক্তি হিসেবে, সামরিক এবং অর্থ নৈ্তিক শক্তি হিসেবে সোভিয়েত রাশিয়ার আবির্ভাব সাধারনভাবে যুদ্ধোত্তোর কালে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দুর্বল হোল/ পরিনামে, দ্বিতীয় যুদ্ধকালে যে গতিতে জাতী ভিত্তিক সমাবেশের প্রকৃয়া শক্তিশালী হোল, অতীতে কোন দিন ঘটে নাই। সেই সর্তেই বিশ্বে জ্ঞান বিজ্ঞান এবং এক অখন্ড সংস্কৃতির যাদু স্পর্শে জাতীয়তাবাদের বৌদ্ধিক এবং সৃজনের সাথে সাথে মানবিক অভিমুখের মিশ্রনেই মধ্যবিত্তদের হাত ধরেই, বুর্জোয়া উদারনৈ্তিকতাবাদ অনেকটাই বিপ্লবী চেহারা নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। এখন বিশ্বায়নকে শিখন্ডী দাড় করিয়, তলে তলে সারা বিশ্বে যখন জাতীগুলির অনেকগুলি ছলে বলে ভেংগে দেওয়া হয়েছে, বহুজাতীকে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে এবং সেই পথে যখন জাতীয়তাবাদ তার বিশ্বযুদ্ধত্তোর স্বতস্ফুর্ততা হারিয়েছে, জ্ঞান এবং সংস্কৃতিগত অখন্ডতা দুর্বল হওয়ার সাথে সাথে মধ্যম বর্গের জাতীয়তাবোধ দুর্বল হয়েছে,জাতীয়তার লক্ষ বিবর্জীত হয়ে ক্রমে ব্যক্তিগত আকাংখ্যাগুলিকে চরিতার্থ করায় ইচ্ছা যেমনভাবে জাতীয় চিন্তার উপরে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পেয়েছে, তেমনভাবে জাতী ভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামোগুলিকেই ভেংগে ফেলার আমেরিকান প্রয়োজনীয়তায় সারা বিশ্ব ক্রীড়নক হয়েছে। 
এইভাবেই ক্রমে, বুর্জোয়া উদারনৈতিকতা ক্রমে অপ্রাসংগিক হয়ে গেছে। সম্প্রতি রাসিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে, এই অপ্রাসংগিকতার কথা উল্লেখ করেছেন। (চলবে) 


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours