old temple
ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ মানকর গ্রামটির তিনটি অংশে বিভক্ত, মানকর, রাইপুর ও মল্লিকপাড়া! বর্ধমান মহারাজ পরিবারের দীক্ষাগুরু শ্যমসুন্দর গোস্বামীর পুত্র ভক্তলাল মহারাজা কীর্তিচাঁদ ও চিত্রসেন রাইকে দীক্ষাদেন এবং গুরুদক্ষিনা স্বরূপ ১১২৯ সালে রাইপুর মৌজা ব্রক্ষ্মোত্তর পান!তাঁর প্রপৌত্র অজিতলালের দৌহিত্র হিতলাল মিশ্র ছিলেন অত্যন্তগুনী মানুষ! জনহিতকর কাজের সাথে তিনি আধ্যাত্মিক ও সংস্কৃতিমান মানুষ! তিনি সাংখ্য বেদান্ত ,গীতা এবং ভাগবতের ভাষ্য রচনা করান! তিনি মানকরের রাজবাড়ী বলে পরিচিত জমিদার বাড়ী 'রঙমহল ' বা 'রাইমহল ' নির্মান করেন!এটি বৃহত্তর মানকরের যে অংশে অবস্হিত সেই অংশের নাম 'রাইপুর '! . ডঃ বিনয় ঘোষ, (কালপেঁচা ) ১৯৫৪-৫৫ সালে যুগান্তর পত্রিকায় 'কালপেঁচার বঙ্গদর্শন ' ধারাবাহিক রচনায় একটি অধ্যায়ে মানকরের বিবরন প্রকাশ করেন! পরে ১৯৫৭ সালে পুস্ককারে প্রকাশিত হয়! ঐ গ্রন্হের ২১০-২১৬ পৃষ্ঠায় ' বর্ধমান - মানকর ' অধ্যায়ে তিনি লেখেন," মানকর গ্রামের অতীত গৌরব আর অবশিষ্ট নেই,অতীতে মানকর ছিল ব্রাক্ষ্মন প্রধান গ্রাম !
ব্রাক্ষ্মন ভোজন করাতে চৌদ্দ মন ময়দা লাগতো!ইনফ্লুয়েঞ্জা আর ম্যালেরিয়ার মহামারীতে একদা গ্রামটি মহাশ্মশানে পরিনত হয়েছিল! প্রায় এক'শ বছর আগেও ( বর্তমান সময় থেকে পৌনে দু'শ বছর পুর্বে) প্রায় সাত'শ ঘর ব্রাক্ষ্মন ও সাত'শ ঘর তাঁতির বাস ছিল! ব্রাক্ষ্মনরা বিদ্যাচর্চা ও যজযাজন করতেন! তাঁতীরা তাঁত বুনতেন! তাঁত শিল্পে মানকরের খ্যাতি ছিল ভারত জোড়া ! এখানকার ' বেনারসী চেলী ' এককালে দেশে বিদেশে সমাদৃত ছিল! মানকরের তসরের ছিল জগৎজোড়া খ্যাতি ! পন্ডিত প্রবর মহেশ বিশ্বাস পলু পোকার চাষ সম্পর্কে ' কীট - কৌতুক ' নামে গ্রন্হে উল্লেখ করেন - ' পরে তসর, খায় ঘি তার আবার খরচ কি? এককালে এই প্রবাদ বাক্য সবার মুখে মুখে ফিরতো! মাছ ধরার ' মুগো সুতোর বয়ান শিল্প এবং সুক্ষ্ম মাছ ধরার কাঁটার( বড়শী) ব্যবসা এককালে মানকরের একচেটিয়া ছিল! মানকর অতীতে কাঁসা পিতল সহ অনান্য সামগ্রীর বড় বানিজ্য ক্ষেত্র ব্রাক্ষ্মন গঞ্জ ছিল! মানকরের কর্মকাররা সোনার গহনার যে ' ডাইস ' বানাতেন অবিভক্ত বাংলা দেশের কোথাও এমন নিপুন ' ডাইস ' পাওয়া যেত না! পিতলের শিল্পের জন্যও মানকর বিখ্যাত ছিল!
আমি কি মানকরের কারিগররা বন্দুক তৈরী ও রেল ইঞ্জিন মেরামতির কাজেও দক্ষ ছিলেন! মানকর ' তামাকের জন্যও খ্যাতি অর্জন করেছিল! স্বামী তপানন্দ তাঁর ' আত্মকথায় ' উল্লেখ করেছেন, তাঁর পিতা মানকরের মাখন কুন্ডু ও নীল কুন্ডুর ব্যবসার মুহুরী ছিলেন! ব্রিটিশ শাসনকালে মানকরে ব্যাপকহারে নীল চাষ হতো! আজও একাধিক নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ অতীতের সাক্ষ্য বহন করছে।। ( চলবে)
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours