ভবানীপ্রসাদ ভট্ট্যাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ রাজা হরিশ্চন্দ্র সম্পর্কে ঐতিহাসিক প্রমান্য নথি প্রমানে গবেষক মহল তৎপর হলেও সঠিক ঐতিহাসিক প্রামান্য তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থ হ'ন! তাঁর অবস্হান কোথায় ছিল সে বিষয়ে গবেষকদের মতভেদ আছে ,গবেষক ভট্টশালী মহশয় মনে করেন, রাজা হরিশ্চন্দ্র অধুনা বংলাদেশের ঢাকা জেলার সভারের রাজা ছিলেন! কিন্তু ধর্মমঙ্গল কাব্যে রাজা হরিশ্চন্দ্রের উল্লেখ থাকায় এই যুক্তি কোন ভাবেই মানা যায়না, কারন ধর্মমঙ্গল রাঢ় ভূমের কবিরা রচনা করেছেন এবং পটভূমিও রাঢ় কেন্দ্রিক!আচার্য যোগেশ চন্দ্র বিদ্যানিধির বলেছেন, রাজা হরিশ্চন্দ্র বঙ্গের বর্ধমানের অন্তর্গত অমরার গড়ের রাজা ছিলেন! কিন্তু এ সব যুক্তি অনুমান ভিত্তিক , কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই!
অনেক গবেষক মনে করেন রাজা হরিশ্চন্দ্র ও মহামান্ডলিক ইছাই ঘোষ সমসাময়িক!
কিন্তু এই অনুমান একেবারেই অমূলক কারন ইছাই ঘোষের সময়কাল একাদশ দ্বাদশ শতক এবং তখন গৌড়ের সিংহাসনে আসীন প্রথম মহীপাল এটা ইতিহাস স্বীকৃত! অন্যদিকে মঙ্গলকাব্যগুলি রচিত হয়েছে খ্রীষ্টীয় ষোড়শ শতকের পরে অর্থাৎ প্রায় পাঁচ'শ বছর পর ! তাই শুধুমাত্র মঙ্গলকাব্যে রাজা হরিশ্চন্দ্রের উল্লেখ থাকায় তাঁকে ইছাই ঘোষের সমসাময়িক মনে করার যুক্তিই ধোঁপে টেকে না! আর ইছাই ঘোষ ছিলেন শক্তির পূজারী মা চন্ডীর ভক্ত, অন্যদিকে হরিশ্চন্দ্র ছিলেন ধর্মরাজের উপাসক! তাই বিপরীত ধর্মীয় মানসিকতার দুজন রাজা পাশাপাশি রাজত্ব করলেন কোন দ্বন্দ্ব হ'লো না, এটা একপ্রকার অসম্ভব! আবার ইছাই ঘোষ একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তি তাঁর প্রামান্য নথি থাকলেও তাঁর সমসাময়িক রাজা হরিশ্চন্দ্রের কোন প্রমান্য নথি নেই ! তাই রাজা হরিশ্চন্দ্র ও ইছাই ঘোষের সমসাময়িক এটা কষ্টকল্পিত যুক্তিহীন অনুমান!
তবে মঙ্গলকাব্যের যুগে বঙ্গে একজন হরিশ্চন্দ্র নামে একজন রাজা ছিলেন!ঐতিহাসিক কোন প্রামান্য নথি না থাকলেও সাংস্কৃতিক প্রমান পাওয়া যায়!আর সেই অর্থে দেখলে ভারতবর্ষের প্রকৃত কোন ইতিহাস নেই,যা আছে তা রাজা রাজাদের কাহিনী , যেখানে সেই সময়কালের আর্থ সামাজিক, সাংস্কৃতিক , অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক কোন মূল্যায়ন নেই, নেই আম জনতার জীবন জীবিকা বা ধর্মীয় ভাবনা! তাই আমাদের ইতিহাসকে জানতে সমসায়িক সাংস্কৃতিক ও কাব্যগ্রন্হগুলির উপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়!
রাজাদের হরিশ্চন্দ্র নামে এক রাজার উল্লেখ আছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার বরাকরের নিকট বেগুনিয়ায় অনেকগুলি পাথরের মন্দিরের প্রবেশ পথে দুটি মন্দিরের বামে যে মন্দিরটি আছে তার দরজার ঠিক ওপরে একটি ফলক বা লিপিতে লেখা আছে "ওঁ!! শাকে নেত্র বসুচিচন্দ্র গনিতে
পূন্যে বুধাহেতিথামবষ্টম্যাং
রুচিরং প্রতিষ্ঠীতাবতী পক্ষেসিতে ফাল্গুনে!
ঐশম্ দেবকুলম যথাবিধি
হরিশচন্দ্রস্য ভুরিশ্রিয়ো ভুশক্রস্য
হরিপ্রিয়া প্রিয়তমা উচ্চৈঃ ফল প্রাপ্তয়ে!
এর অর্থ রাজা হরিশ্চন্দ্র তাঁর প্রিয়তমা পত্নী হরিপ্রিয়া দেবীর এই নামে এই মন্দির নির্মান করেন! পাশের মন্দিরতে কোন লিপি না পাওয়া গেলেও এটির গঠন শৈলী দেখে সহজেই অনুমেয় এই মন্দিরটিও একই ব্যক্তি দ্বারা একই সময়ে নির্মিত ।।
..................... ( চলবে )
Post A Comment:
0 comments so far,add yours