রণজিৎ গুহ, সমাজকর্মী, লেখক ও প্রাক্তন ইস্পাত কর্মী:
জ্ঞান যদি আমাদের প্রজ্ঞায় পৌঁছে দিতে না পারে তবে তা অনিবার্যভাবেই সঞ্চয়ীর অবিনয়ী অহংকারের মত অশালীন বোঝা হয়ে ওঠে। প্রজ্ঞা বলতে বুঝি যা কিনা যাবৎ আনুগত্য ও আরোপিত শৃঙখলা থেকে সকল ভাবনাকে মুক্ত করে।উন্মুক্ত করে দেয় যুক্তির নির্মল আকাশ। সমদর্শীতার আবহে নির্ভীক অকপট উচ্চারণের স্বাধীনতা দেয় প্রজ্ঞা।উচ্চারিত হয় অকম্পিত মানব আদর্শ ' যত মত তত পথ'।
এই মানব আদর্শর অনুসারী দীপ্ত আকাংখা ' শত পুষ্প ফুটে উঠুক'।
ভক্তি প্রাবল্য বা গৌরবময় অতীত রোমন্থন ব্যাধি আমাদের প্রয়োজনীয় অনুসন্ধিৎসায় নিরন্তর ব্যাঘাত ঘটায়।অনুগতদের উচ্চকিত প্রশস্তি অথবা গোষ্ঠী অভিভাবকদের প্রশ্রয়, উচ্চাকাঙ্খা প্রলোভন আমাদের চিরন্তন অনুগামী মানসিকতাকে উদগ্র করে তোলে। ফলে আমাদের অন্তঃস্থিত অনুপম নেতৃত্ব ক্ষমতা বিকশিত হতে বাধা পায়।মুক্তমন দূষণ জাড়িত হয়ে সঙ্ঘ অনুশাসনের রজ্জুতে নিজেকে সমর্পণ করে। বৈচিত্র্যর অনুপঙখ আন্তরিক মান্যতা ও স্বীকৃতিই আমাদের প্রকৃত সদর্থকভাবে সেক্যুলার ভাবনায় প্রাণিত করে।একক বৈশিষ্ট্যর উত্তুঙ্গ অবস্থানই বৈচিত্র্য বিষ্ময়ের আবশ্যিক এবং প্রাথমিক শর্ত।প্রজ্ঞা সর্বদা অকুন্ঠচিত্ত।প্রজ্ঞা ভাবনা নির্ভীক ঘোষণা করে ধর্মীয় বা সামাজিক কোন ক্ষেত্রেই কোনও তত্ত্ব বা মতাদর্শ সার্বভৌম নয়।
" আমাদিগকে শিক্ষা করিতে হইবে যে,একই সত্য লক্ষ ভাবে প্রকাশিত হইতে পারে, এবং প্রত্যেক অভাবটিই নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে যথার্থ।আমাদিগকে শিক্ষা করিতে হইবে কোন বিষয়কে শত প্রকার বিভিন্ন দিক থেকে দেখা চলে,অথচ বস্তুটি একই থাকে "এই উপলব্ধি বা অনুভবের জগৎ বিশ্বাসের জগৎ থেকে যোজন ব্যাবধ্যানে বাস করে। বিশ্বাস অনায়াসে সত্যকে অস্বীকার করতে পারে।অনুসন্ধান স্পৃহাকে দমিত করে।প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ষোলআনা।
অন্যদিকে উপলব্ধি সত্যকে নিকটবর্তী করে।তীব্র সুচারু অনুসন্ধানে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রাণপাত করার প্রেরণা যোগায়।
বিশ্বাস গোষ্ঠী গঠনে সহায়ক হয়।সমাজ কর্তৃত্বও করায়ত্ব হয়।প্রজ্ঞা জনিত উপলব্ধি সত্য অনুসন্ধানে প্রায়শই একক। অথচ সমগ্র মানব প্রজাতি অগ্রসর হয় প্রজ্ঞাজনিত উপলব্ধির হাত ধরেই।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours