fiture
মুজতবা আল মামুন, সাংবাদিক, কলকাতা : এই মাসের শেষে আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশিত হবে। হাতে আর ক'টা দিন। ক্যাম্পগুলোতে নাগরিকত্বের শুনানি চলছে। তার মধ্যে এই বিপর্যয়। মানুষগুলো প্রাণ বাঁচাবে না, নথিপত্র বাঁচাবে ? এভাবে বন্যায় বহুবার এদের ঘরছাড়া হতে হয়েছে। নাগরিকত্বের দরকারি নথিপত্র ভেসে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে। কখনও দাঙ্গা লাগিয়ে, অগ্নিসংযোগ করে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। একবস্ত্রে তাদের পালাতে হয়েছে। নথিপত্র ট্যাঁকে গোঁজার সময় পায় নি। তাই যুগ যুগ ধরে সে রাজ্যে বাস করেও তারা তালিকার বাইরে। কিংবা বাইরে হতে চলেছে। নোংরা রাজনীতির খেলায় তারা দেশহীন হতে চলেছে। জানি অনেকে বলবেন, নষ্ট হওয়া নথির ডুপ্লিকেট কপি বার করে নিলে তো হয় ! ওখানকার দুর্ভাগা কিছু মানুষের সঙ্গে ফোনালাপ হচ্ছিল। এই প্রশ্নটা ওদের করেওছিলাম ? জবাব যা পেয়েছি, তা বাঞ্ছিতই ছিল। দিন আনা দিন খাই এই প্রান্তিক মানুষগুলোর বেদনার বারোমাস্যা সেই আমরা উপলব্ধি করতেই পারবো না, যারা চার দেওয়ালের মধ্যে, নিশ্চিন্ত একটা ছাদের নিচে রাত কাটাই। 
উপলব্ধি করতে পারবো না আমরা, যারা দুবেলা একমুঠো যাই হোক কিছু খেতে পাই, আগামীকালও জুটে যাওয়ার মোটামুটি নিশ্চয়তা আছে। আমরা জানি না, ভাগ্যাহত মানুষগুলোর একবেলার খাবার জোগাড় করতে গিয়ে কতটা এফোর্ট দিতে হয়। এক একটা নথির ডুপ্লিকেট কপি তুলতে এক একটা সরকারি অফিসে দিনের পর দিন হত্যে দিতে হয়। একদিনে কাজ হওয়ার কোনও গল্প নেই। তা করতে গেলে, রুজি- রোজগার অনিশ্চিত হয়ে যায়। ভাবুন, এই ভয়াবহ বন্যায় এরা জীবন বাঁচাবে, না কাগজপত্র বাঁচাবে ? পরিবারকে একটা নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে তুলবে না, ক্যাম্পে লাইন দেবে ? জানি না শুনানির দিন বাড়বে কী না ? যদিও এই সংক্রান্ত একটা মামলা সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে আছে। কেন্দ্র ও আসাম সরকার সুপ্রিম কোর্টেআবেদন করেছে যে, শুনানি এ মাসের মধ্যে শেষ হলে ভাল হয়। তাহলে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশে সুবিধা হয়। আবার কয়েকটা সংগঠন বিপরীত অবস্থান নিয়ে, তালিকা তৈরিতে ব্যাপক দলীয়করণের অভিযোগ এনে, আবার প্রথম থেকে প্রক্রিয়া শুরু করার আবেদন জানিয়েছে। ক্যাম্পে নথিপত্র যাচাইয়ে কর্মরত বেশ কিছু আধিকারিকের অভিযোগ, নিয়ম মেনে নথি যাচাই হচ্ছে না। যাকে বাদ দেবে মনে করছে, প্রামাণ্য নথি থাকা সত্বেও বাদ দেওয়া হচ্ছে। নিরপেক্ষ আধিকারিকদের সরিয়ে দিয়ে, হার্ডকোর সমর্থক কর্মীদের পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে।
অভিযোগ, বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের ওপরই বেশি কোপ দেওয়া হচ্ছে। বাঙালি ঐক্য নষ্ট করে হিন্দু-মুসলিম ভাগ করা হচ্ছে। তাতে কিছুটা ফলও পাচ্ছে বিজেপি। অভিযোগ, নাগরিকত্ব পাওয়ার লোভে এক শ্রেণীর মানুষ সম্প্রীতির গলা টিপে, বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এখন একটাই দাবি, সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন মতো তালিকা তৈরি হোক। আর বন্যার কারণে, শুনানির দিন বাড়ানো হোক। একজন যথার্থ নাগরিক যেন বাদ না পড়েন।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours