জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা: তৎকালীন রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়নের কাছ থেকে, জীবন রায় তার জন্মদিনে পাওয়া এক বার্তায়, রবীন্দ্রনাথ এবং নেহেরুর দুটি উদ্ধৃতি পেয়েছিলেন । এই উদ্ধৃতি দুটি যেমন দু'জন কালান্তরের পথিক সম্পর্কে প্রেঢ়কের অগাধ জ্ঞান এবং সাথে সাথে দু'জনের ভাবগত একাত্মতার দিকটিকেও উন্মুক্ত করবে। রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতিটি এ রকমঃ " Time is endless in thy hands, my lord, Thy Centuries follow each perfecting a small wild flower" ( হে প্রভূ তোমার হাতে এক অনন্ত সময়, তাই তুমি পারো,শতাব্দীর থেকে শতাব্দীতেে, একটি বনের ফুলকে, তিল তিল করে তার পূর্নতায় পৌছে দিতে) প্রকৃ্তির বিবর্তন তত্ব সম্পর্কে রবীন্দ্র ধারনাই কেবল নয়, এই দুটি লাইনে দেখিয়ে দিয়েছে,
প্রকৃ্তি বিজ্ঞানের এই গুঢ় তত্বকে কাব্যিক রুপ দেওয়ায়, উনবিংশ শতাব্দীর কবিতে পূর্ন প্রস্ফুটিত বিংশ শতাব্দীর প্রতিচ্ছবি এবারে শুনুন নেহেরুর শব্দ কথায়, রবীন্দ্র মর্মবানীঃ আন্তর্জাতীকতার আলোকে জাতীয় দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে, সেই মহামানবিকতা এবং বিশ্বভারতীর কথাই উল্লেখ করতে গিয়ে, যুদ্ধ এবং স্বাধীনতাত্তোর কালের বিপুল সম্ভাবনা এবং আশার বানী শুনিয়ে বল্লেনঃ "The World has arrived at a turning point, It is the temper and approach of science allied to philosophy and with reverence for all that lies beyond that we must face life." (বিশ্ব এখন ইতিহাসের চৌ-মাথায়। বিজ্ঞানের অগ্নিশিখায় উদ্দিপ্ত হয়ে দর্শনের সাথে একাত্ম হতে চাইছে এবং পরম শ্রদ্ধায় জীবনের মুখোমুখী হতে, উদ্দিপিত করছে। ভালো করে যদি নেহেরুর লেখা এই কটি ছত্রকে দেখার চেষ্টা হয়, বোঝা যাবে তিনি অতি সন্তর্পনে তার এবং রবীন্দ্রনাথের ভারত- খোজকে একাত্ম করে নতুন বিশ্বকে দেখার চেষ্টা করছেন। এই কয়েকটা লাইন একপ্রান্তে যেমন স্বাধীনতাউত্তর ভারতকে, পূর্বকালের ভারত থকে পৃথক করছে, অনুরুপভাবে স্বাধীনতা উত্তর কালে নেহেরুকে পৃ্থক করছে মহাত্মা গান্ধীর 'রাম রাজ্য' থেকে। এই পৃ্থকতার বিন্দুতেই, রবীন্দ্রনাথ এবং নেহেরু রাজনৈ্তিক দর্শন একাত্ম হচ্ছে। প্রসিদ্ধ ফরাসী দার্শনিক রোঁমা রোলার, ভারত ডায়রিতে স্বাধীনতা উত্তর কালে সম্ভাব্য ভারত কোন পথে চলবে সে প্রশ্নে, এই দুই মহান নেতার আস্মান-জমীন, মতপার্থক্য এবং শান্তিনিকেতন সম্পর্কে মহাত্মার অপ্রাসংগীকতার বিস্তৃত লিখা আছে। ---- এক যায়গায়, রোঁমা রোঁলা, রবীন্দ্রনাথের কাছে জানতে চেয়েছিলেনঃ উনার বিশ্বভারতী কিংবা প্রাচ্য-পাশ্চাত্বের মেল বন্ধনের প্রশ্নে ভারতের আভ্যন্তরীন সমর্থনের পরিমাপ জানতে চাইলেন। ---- উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বল্লেন, 'এক জন ও না'। এই উত্তরটি এবং তার সাথে, 'চন্ডালিকা' লেখা ও মঞ্চস্থ করার পর, সে যুজ্ঞে বাংলার অন্য এক কবি সংগীত গুরু, যে মন্তব্য করেছিলেন - সে সব থেকে ----- একপ্রান্তে নেহেরু এবং অন্যপ্রান্তে সাম্যবাদী আন্দোলনকেও বুঝতে হোত, কয়েক হাজার বছরের অতি-পশ্চাতপদতাকে ডিংগিয়ে, ভারতের গনতান্ত্রিক রুপান্ত্র কতটা বিপদ জনক ছিলো;। সেই রোঁমা রোঁলাই লিখছেন। শ্রদ্ধেয় ডি এল রায়, রবীন্দ্রনাথকে আক্রমনাত্ম ভংগিতেই, 'বুড়ো খোকা' বলে সম্বধিত করতেন। রোমা রোলা লিখেছেনঃ ' চন্ডালিকার' পর, দ্বিজেন্দ্র রায়, বলছেন "চন্ডালিকার পর কি বাংলা সমাজটা আর বেচে থাকবে। "। রবীন্দ্রজীবনের বিয়োগান্ত দিক হোল ১৯৪১ সালের ৭ই আগষ্ট তারিখে এই ধারনা নিয়ে চলে গেলেও, যেন তার বিশ্ব ভারতী কিংবা মহামানবের সাগর তীরে, আকাশ ভরা সূর্য্যতারার মাঝখানে ভারতের স্থান - কে মেনে নেওয়ার মতো একজনো এদেশে নেই - ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট, ভারতের আকাশ যখন অশোচক্র শোভিত তিন রঙ্গা পতাকা যখন পত পত করে উড়ছিলো তখন রবীন্দ্রসত্বাকে উর্ধে তুলে ধরে আকাশে মাথা তুলে জওহর লালা নেহেরু ঘোষনা করেছিলেন ---------- "The World has arrived at a turning point, It is the temper and approach of science allied to philosophy and with reverence for all that lies beyond that we must face life." পরের ইতিহাস যারা অবগত, তারা জানেন, স্বাধীন ভারতের শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির অভিমুখ নির্ধারনে নেহেরু, প্রশান্ত মহালানবিশ সমেত বিস্বভারতীর কারিগড়দেরকেই কাজে লাগিয়েছিলেন এবং প্রথম নির্বাচন কমিশনার ছিলেন, বর্ধমান জেলা থেকে যাওয়া তৎকালিন সময়েরর রাজ্য সচিবালয়ের প্রধান। অন্যপ্রান্তে, নেহেরু ভাবসত্বার সাথে সাথে রবীন্দ্রভাবনার সমাপন ঘোষিত হোল, ২০১৯শে এদের দুজনকে বাতিল ঘোষনার,যে একটা ভিত্তি নির্মান করা হয়েছে তাই নয়, ---- ভারতীয় আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার রুপান্তরনের যে বুর্জোয়া উদারনৈ্তিক ভিত্তি, যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পূর্ব কাল থেকে উত্তর কালে এরা দু'জনে মিলে নির্মান করেছিলেন ----- তার সাথে ভারতীয় একতা ভিত্তিক যে সাংবিধানিক কাঠামো নির্মান করা হয়েছিলো তার সব কিছু ধ্বংস করে দেওয়ার পুর্ব সর্তটি ২০১৯ নির্মান করে দিয়েছে ২০১৯ এর নির্বাচন নিশ্চিত করে দিয়েছে। ---- মনে করা হচ্ছে, যেন ২০১৯ ইতিমধ্যেই যদি নেহেরু বধের পালা শেষ করে থাকে, তবে রবীন্দ্রবধের কাজটা শেষ করতে পারলেই, বুঝি ভারতীয় সাম্যের নিধন সময়ের অপেক্ষা। তাই, আর এস এস এর শিক্ষা সেলের প্রধান দাবী করেছেনঃ " NCERT to remove English, Urdu, and Arabic words, a poem by the revolutionary poet Pash and a couplet by Mirza Ghalib, the thoughts of Rabindranath Tagore, extracts from painter MF Husain’s autobiography" যদি মেনে চলা হয়, ২০১৯ সেই ভিত্তিটার বিনাশ করতে চেয়েছে, যেখান থেকে, জনগনের গনতন্তের ধারাটা সুত্রবদ্ধ করা যেতে পারতো । এই সিরিজের পঞ্চম অংশে যে আন্তর্জাতীক অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে ---- তাতে নিশ্চিত বোঝানো গেছে, ভারতবর্ষে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যিক অনুদানই দুই মহাকাব্যের ধারাবাহিক সত্বা হিসেবে এবং নেহেরুর ইতিহাস চেতনাকে ভিত্তিতে রেখেই ---- ই এম এস এর ভারতীয় ইতিহাসের মার্ক্সবাদী উত্তোরন, বি টি আর এর শ্রেনী রুপ সংক্রান্ত আবিস্কারগুলি এবং জ্যোতি বসুর সংসদীয় প্রয়োগ রীতির সমন্বয় সাধন করে, ---- জনগনতন্ত্রের কর্মনীতি এবং শ্রমিক নেতৃত্বের সর্ত সমুহ চিহ্নিত করা সম্ভব হোত। এই কারনে একপ্রান্তে নেহেরু এবং রবীন্দ্রনাথের যেমন বিস্তৃত গবেষনা প্রয়োজন, অন্যপ্রান্তে প্রয়োগের দিক থেকে বি টি আর-জ্যোতি বসু যুগলবন্দির রসায়নটিকেও পূর্ন উন্মোচন প্রয়োজন। ভারতীয় ইতিহাসের এক বহুমুখীন ব্যখ্যায়, এই লেখক অন্ততঃ নেহেরু গ্রন্থাবলির অন্তত ১৮টি পুস্তকের কভার পেয়েছি। রবীন্দ্র রচনার সমুদ্র মন্থন করে, নির্য্যাষটিকে চিহ্নিত করার যোগ্যতাই এই লেখকের নেই।
তিনি যখন মার্ক্সের জ্ঞান তত্বের কাব্যিক রুপ দিচ্ছেন তখন হতবম্ব হয়ে যেতে হয়ঃ তিনি লিখছেনঃ "ওরে, চারি দিকে মোর একি কারা মোর, এ কী কারাগার ঘোর-- ভাঙ্ ভাঙ্ কারা, আঘাতে আঘাত কর্। ওরে আজ কী গান গেয়েছে পাখী, এসেছে রবির কর।। পাগল হয়ে যেতে হয়। সব শেষে, জীবনের শেষ লেখায়, মায়াবিক বিশ্বে অস্তিত্বের সর্ত এবং আনন্দের সেতুবন্ধন করতে যা লিখে দিলেন, তাতে হতবাক হতে হয় এবং প্রতিটি মার্ক্সবাদীর অনুধাবন করা উচিতবলে মনে হয়েছেঃ "সত্যেরে সে পায় আপন আলোকে-ধৌত অন্তরে অন্তরে। কিছুতে পারে না তারে প্রবঞ্চিতে, শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে আপন ভান্ডারে।



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours