Rabindranath
জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভাঃ    দ্বন্দ্বতত্ত্বকে যারা ইতিহাসবোধের সাথে আত্মস্ত করার সুযোগ পেয়েছেন, তারা যেমনে নেহেরু- রবীন্দ্রনাথ মহাসঙ্গমে যে নব্য  ভারতীয় আধুনিকতার রুপকল্প কেমনভাবে  ----  নেহেরুর হাত বেয়ে, দ্বিতীয় পরিকল্পনা এবং বিজয়লক্ষী-স্তালিন চুক্তির যুগলবন্দির,   শ্রোতবেয়ে  আধুনিকতার  রুপবৈশিষ্টের ভেতর দিয়ে যে  'ভারতআত্মা' টিকে ঘিড়ে আমার প্রজন্মের মানুষজন স্বাধীন ভারতকে চিনেছিলো, --- সেখানেই যেখানে  'স্বস্তিকার' বিশ্ব থেকে,  ভারত নিজেকে পৃথক করেছিলো, ২০১৯ তে এসে  সব কিছু উল্টে গেলো তখন তো স্বাভাবিক ছিলো  'নেহেরু; একা  উল্টাবেন কেন?  ---- রবীন্দ্রনাথকে যে যেতে হবে, সেটা তো স্বাভাবিক। বিদ্রোহ এবং বিপ্লবের সংগিতের পর আত্মসুদ্ধির মন্ত্র তো মুছে দেওয়ার প্রানপন চেষ্টা হবে, সেটাই তো এখন প্রতিবিপ্লবের পথ হতে হবেই।কিন্তু এসবের মধ্যে  যাবে, প্রধানতঃ   সেই 'মহামানবিক শক্তি' যা হিটলার নিধনের সমুদ্র মন্থনে  উত্থিত হয়েছিল। সেখান থেকেই ১৯১৭ এর বানী,  বিশ্ব-ভাবজগতকে প্লাবিত করে জানিয়ে দিয়েছিলো  ---- সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে আর কেহ নেই।রবীন্দ্র  কাব্য  কিঞ্চিত বুঝেছি। তবু এটা বুঝেছি, এই কাব্যের অন্তিম কথাটি, রামায়ন এবং মহাভারতেরই, ধারাবাহিক এবং মহামানবিক সত্বা।  কয়েকদিন পূর্বে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের নামে একটা কথা চালু হয়েছিলো। কথাটার উৎস  উনি হোন কিংবা না হোন কথাটা যে সত্য, তা বোঝা যায়, যখন দেখা যায়, সব রকম উদারবাদের উপরে যখন  বিশ্বজোরা ফ্যাসিস্ত আক্রমন  চলছে এবং যুগপদ ভারতেও যখন আক্রমনের তিভ্রতা বাড়ানো হচ্ছে জীবনবোধের কোনায় কোনায়, অনুভুতির পারদে পারদে, তখন 'তথাকথিত বুর্জোয়া উদারবাদিরা নির্লিপ্তঃ রবীন্দ্রনাথকে শ্রেফ নাচ-গান এবং কবিতার বাঙ্গালি কবির বাইরে,  তাহাতে অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছেন না।  রুশ সভাপতি অনুভুতির কোন গভীরতা থেকে কথা কয়টি বলেছেন  তিনি জানেন, অভিজ্ঞতার আলোকে, নিশ্চত বলা যায় একেবারে ঠিক কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন  'উদারনীতিবাদ তার প্রাসঙ্গিতা হারিয়ে ফেলেছে। এতোসব, ইংগিত এবং শেষপর্য্যন্ত যখন রবীন্দ্রনাথকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হোল, তখনো যখন কোলকাতায় যারা নিজেদের বৌদ্ধিক দিক দিয়ে 'বিশ্বত্রাতা' জ্ঞানে জ্ঞান জগতকে 'উজ্জ্বল' করছেন বলে মনে করছেন, তারা আসলে হয় রবীন্দ্রনাথের বিশ্ববিক্ষা সম্পর্কে ধারনা কোন ধারনাই নেই, অন্যথায় সব মানবিক আবেগে ভয়ংকর ক্ষয় রোগে ভুগছেন। অপরদিকে, উদারবাদীরা যদি জাহান্নামে গিয়ে থাকেন, তখন যারা পড়ে রইলেন, তারা যে নিজেদেরকেই হারিয়ে ফেলেছেন দিন দিন, সেটাই আজ ভারতে সব থেকে বড়  বিপদের কারন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।যদি দেখা যায়, শ্রদ্ধেয় নেপাল মজুমদারের, আন্তর্জাতীকতা ব্যতিরেখে, কেউ নেপাল মজুমদারের লেখা ভিত্তি করে,  রবীন্দ্রনাথের জাতীয়-আন্তর্জাতীক ভাবের একাত্মতায় একটা অখন্ড দার্শনিক ভাবনা, বাংলার সাম্যবাদীরা, দেশকে দিয়েছেন কিনা জানা নেই। অথচঃ আজ বোঝা যাচ্ছে, তাড়া বাদ দিয়ে, কোন সামগ্রিকতায় রবীন্দ্রনাথকে খুজে পাওয়া সম্ভব ছিলো না।  এই অজ্ঞেয়তাই যে কমিউনিষ্টদের রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কেই নয়, সাধারনভাবে দুরগামী ভাবনাই ক্রমে সংকুচিত হয়েছে। তারা দেখতেই পান না,  ---- যে পথে শ্রীমোদি দেশকে টেনে নামিয়েছেন, সেখানে তাকে শেষ পর্য্যন্ত জাতীয় পতাকায় স্বস্তিকাকে সংস্থাপিত করা এবং জাতীয় সংগীতকে বদলে দিয়ে, "বন্দেমাতারম' নিয়ে আসা ছাড়া অন্য কোন পথা খোলা নেই। ----- অন্যদিকে, ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্নতা চলে যাওয়া এবং দাসত্ব চলে আসার পর থেকে, বর্তমান 'সংবিধানটাকেই' যদি  একধরনের 'নৈতিক অধঃপতন' বা aberration হিসেবে দেখাতে শুরু করেন, মনে হয়না, কেউ আপত্তি করবেন।সরকারীয়ানার দাপটে যাদের একথাটাও, যাদের  বলতে শোনা যায় না - 'বন্দেতারম' এবং 'বঙ্কিম চন্দ্র' আসলে সিপাহী বিদ্রোহী পুর্ব ব্যক্তিত্ব এবং তখনো এদেশে রেনেশা জোনাকির আলোর মতো কিছু এসে থাকতে পারে, তার বেশী কিছুনয় ----- তাদের পক্ষে, একটা ভোটে জিতে, আন্তর্জাতীক প্রতিযোগিতায়, রাতারাতি দলের পোষাক গেরুয়া করে দেওয়া যে কত ভয়ংকর সেটা বোঝা সম্বব নয়। যদি আমায় জিজ্ঞাসা করা হয়, বলবো,'এই পোশাকটাই ইংল্যান্ডের বিপরীতে বিশ্বকাপে হেরে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারন এবং সেটা শুধু খেলোয়ারদের উপর প্রভাব ফেলে নাই। দর্শকদের স্বতঃস্ফুর্ততাকে নষ্ট করেছে।  শ্রমিক আন্দোলনে সর্বাত্মক ঐক্যকামীতার বিষয়টিকে দলীয় আনুগত্বের অধীন নিয়ে আশা হয়, তখন শ্রমিক আন্দোলনে সাংস্কৃতিক অভিমুখকে সুকিয়ে দিইয়ে, কিভাবে সৃজন বিমুখ করে তোলে, তার স্বাক্ষী এই কলমের লেখক নিজে। রবীন্দ্রনাথের দেড়শত বার্ষিকী উপলক্ষে দুর্গাপুর শিশু আকাদমী নিজেই এক বিপুল কর্মসূচী নিয়ে, যেমন অসংখ্য কেন্দ্রিয় কর্মসূচী করছিলো এবং সেই কর্মসূচীকে যখন বাড়ী বাড়ী নিয়ে যাচ্ছিলো, দুর্গাপুরের ইউনিয়নকে প্রস্তাব করেছিলাম  ---
--- দুর্গাপুরের মতো সংগঠিত শিল্পের ইউনিয়ন হিসেবে, যে ইউনিয়ন সরাসরি নগর জীবনের সাথে যুক্ত সেই ইউনিয়নের উচিত হবে, তারা নিজেরা অন্ততঃ ইউনিয়ন দপ্তরে একটা বড় করে আলোচনা চক্রের আয়োজন করুক। তারা সে পরামর্শে কান না দিলেও, সামনা-সামনি হেসে উরিয়ে দেয় নাই। ট্রেড ইউনিয়ন নেতারদের শ্রেনী সৃজন, যে বিন্দুতে সেখানে আমায় অট্টহাস্যে উড়িয়ে দিতেই পারতো।যারা ইউনিয়নের রাজনৈ্তিক নেতৃত্বে ছিলেন, তারা তখন জীবন রায় নিধনের পথে ইউনিয়নটারই নিধন করছিলেন, আর নিচু বা মাঝারি স্তরের নে্তারাও  ইতিমধ্যে ভাবাদর্শে সৃজনমূখীনতার কাব্যিক অভিমুখের প্রশ্নে  নিশ্চল। এই সুত্রেই জানিয়ে রখতে ভালো লাগে, সেবারে আকাদমির পরিচালনায় 'রবীর আলো' নাম দিয়ে দেড়শ' বার্ষিকীর একটা স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করেছিলো। ৪৬৫ পাতার বই। সম্ভবতঃ বাংলার সবথেকে বৃহৎ স্মারক ।অনেকটাই গবেষনা মুলক।  যাইহোক লেখাটি শেষ করি, সোস্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত  রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে   আর এস এস এর চিন্তা ভাবনা সম্পর্কীত একটি সংবাদ পরিবেশন করার মধ্যে দিয়ে। এটাই সম্ভবতঃ শেষ পরিকল্পনা।এই পরিকল্পনাটি এমন এক ভদ্রলোক ফাস করে দিয়েছেন, যিনি আর এস এস এর শিক্ষা-সংস্কৃতি সংক্রান্ত কমিটর প্রধান। সংবাদটি এরকমঃ "  RSS’ Dina Nath Batra wants Tagore, Urdu words removed from NCERT textbooks। Headed by Dina Nath Batra, RSS-affiliated Shiksha Sanskriti Utthan Nyas has made a five-page list of recommendations for changes in NCERT textbooks."


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours