Old temple
ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ  মানকরের  পূর্বপ্রান্তটি  মল্লিকপাড়া  নামে পরিচিত! মল্লিকপাড়ার কবিরাজ  বাড়ীর  সুবিশাল  প্রাসাদের  তিনি অংশ  আজও  এই  পরিবারের  অতীত  ঐতিহ্যের স্মৃতি বহন  করছে!
>              কবিরাজ  বংশের  আদি  নিবাস  ছিল  বর্তমান  বাংলাদেশ!প্রায়  তিন'শ বছর  পূর্বে  দুটি  বৈদ্য পরিবার ভাগ্যান্বেশনে  চলে  আসেন  মানকরে! তাঁদের  পেষা ছিল  কবিরাজী! অল্পদিনের  মধ্যেই  তাঁরা সুচিকিৎসার  জন্য  প্রভুত  সুনাম  অর্জন  করেন! তাঁদের  কবিরাজী  চিকিৎসা  এতটাই  সুখ্যাতি  লাভ  করে, বর্ধমানের  মহারাজের  দরবারে  পৌঁছে  যায়!তাঁদের  চিকিৎসায়  চমৎকৃত  হয়ে  তাঁদের  রাজবৈদ্যরূপে  নিয়োগ  করা  হয়!
>               রাজাদের নিয়োজিত  হওয়ার  পর  রাজানুগ্রহে  তাঁরা  প্রভূত  বিত্তশালী  হ'ন!তাঁদের  রাজবাড়ী  সদৃশ্ বিশাল  অট্টালিকা  দু'টি  বড়  কবিরাজ বাড়ী  ও ছোট  কবিরাজ  বাড়ী  নামে  পরিচিত!
>           রাজবাড়ী  সদৃশ প্রাসাদ, দুর্গাবাড়ী, অতিথি  নিবাস, চাঁদনী, বালাখানা  এবং  কূলদেবী  মা  আনন্দময়ী মন্দির  কবিরাজ  বাড়ীর  অতীত  ঐতিহ্যের  সাক্ষ্য বহন  করছে!কবিরাজ  বাড়ীতে  মা দুর্গা, মা লক্ষ্মী, সরস্বতী, শিব  ও তিনি দেবতার  মন্দির  আছে  এবং  আজও  নিত্য পুজা  হয়! তবে  কবিরাজ  বাড়ীর  কুলদেবী  মা  আনন্দময়ীর  পুজা  আজও  জাঁকজমক সহকারে  অনুষ্ঠিত  হয়!মা  আনন্দময়ী  মূর্তিটি  অনুপম  স্হাপত্যের নিদর্শন! কষ্টিক  পাথরের  দেবীমূর্তি  মা  কালীর, কিন্তু  চতুর্ভুজা  দেবী  এখানে  দেবাদিদেব  মহদেবের  বুকের  ওপর  দন্ডায়মানা  নন!শায়িত  শিবের  নাভিমূল  থেকে  একটি  প্রস্ফুটিত শ্বেত পদ্মের  উপর দেবী অধিষ্ঠিতা ! তাঁর  ডান  দক্ষিন পদ  বাম  পদের  উপর  স্হাপিত! প্রতি  অমাবশ্যায়  দেবীর  সন্মুখে  ছাগ  বলি  দেওয়া  হয়! মন্দির  গাত্রে  খোদিত  ফলক  থেকে  জানা  যায়  ১২২২ বঙ্গাব্দের  ২রা  ফাল্গুন, মঙ্গলবার, মাঘী পূর্নিমাতে  পত্নী  দুর্গাদেবীর  সহিত  রাজ্য বল্লভ  গুপ্ত কর্তৃক  আনন্দময়ী নামে  আদ্যাকালী  প্রতিষ্ঠা  করেন!
>          তৎকালীন  কবিরাজ  বাড়ীর  খ্যতনামা  চিকিৎসকরা  কবিরাজী  চিকিৎসায়  পারদর্শিতার  জন্য  তাঁদের  খ্যাতি  ছড়িয়ে  পড়েছিল  রাজ্যের  বাইরেও!  অবিভক্ত  উত্তর  প্রদেশের প্রাক্তন  মুখ্যমন্ত্রী  হেমবতী নন্দন  বহুগুনা  এই  কবিরাজ  পরিবারের  সন্তান! তাঁ প্রপিতামহ  এলাহবাদ  রাজবাড়ী  রাজবৈদ্য  ছিলেন ! সম্ভবতঃ বর্ধমানের  মহারাজার  পরামর্শেই  তাঁকে  রাজবৈদ্য  নিয়োগ  করেন  এলাহবাদের  তৎকালীন  রাজা! তিনি  বহুগুনের  অধিকারী  ছিলেন, তাই  তাঁকে  ' বহুগুনা ' রাজ  উপাধী  দেওয়া  হয়!
>          বাংলা  চলচ্চিত্রের  প্রখ্যাত  অভিনেতা  রঞ্জিত  মল্লিকের  মাতুলালয়  মানকরের  কবিরাজ  বাড়ী!
>            কবিরাজ  বাড়ীতে  বাংলা  চলচ্চিত্রের  প্রবাদপ্রতিম  চিত্রপরিচালক  মৃনাল  সেন  তাঁর  ' ২২ শে  শ্রাবন  চলচ্চিত্রের  সুটিং  করেন  এই  কবিরাজ  রাড়ীতে!
>                মানবদেহের  কোষে  জীন  আবিস্কারক  নোবেলজয়ী বিঞ্জানী ডঃ হরগোবিন্দ  খুরানার  সহযোগী  ছিলেন  মল্লিকবাড়ীর  সন্তান  ডঃ নবকুমার  গুপ্ত, তিনি  ছিলেন  আমেরিকার  নেব্রাস্কা নিঙ্কন  বিশ্ববিদ্যালয়ের  অধ্যপক  ও গবেষক! তিনি  ক্যানসার রোগের  ওষুক  আবিস্কারের জন্য  গবেষনা  করছিলেন  কিন্তু  গবেষনা  সম্পুর্ন  হওয়ার  পূর্বেই  তিনি  অকালে  প্রয়াত  হ'ন! তিনি 
আমেরিকায়  থাককালীন  এক  মূহুর্তের  জন্যও  নিজের  জন্মভুমিকে  ভোলেন  নি! প্রতি  বছর  দুর্গাপুজার  চারদিন  নিজের বাড়ীতে  চলে আসতেন,পুজোর  আনন্দ আত্মীয়  পরিজনদের  সাথে  ভাগ  করে  নেওয়ার  জন্য! মানকর  রাজাদের উন্নয়নে  তাঁর  প্রভুত  দান  আছে! তিনি  এখানে  এলে  দুঃস্হদের  সাহায্য  করতেন!
> ( চলবে)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours