Old temple
সঞ্চারী চট্টোপাধ‍্যায়, ফিচার লেখিকা, কলকাতা: "ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল ।" কালীমাতার চরণতলে যে লাল জবা শোভা পায় সেই লাল রঙই ফাগের রঙ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে দক্ষিনেশ্বরের আকাশে বাতাসে সেই কোন সুদীর্ঘকাল থেকে । আর বসন্ত আসলেই যে দোলের রঙে এই পূণ‍্যভুমি সেজে ওঠে তারই মূর্ত প্রতীক হয়ে যেন সারাবছর দাঁড়িয়ে থাকে দক্ষিনেশ্বরের দোলপিঁড়ি , বর্তমানে দক্ষিনেশ্বরের সবচেয়ে জনবহুল স্থান অনাদিকালের ইতিহাস বুকে নিয়ে । প্রকৃতপক্ষে দোলপিঁড়ি অঞ্চলের যে জমি তার মালিক বাংলার বিখ‍্যাত সাবর্ণ চৌধুরী পরিবারের বংশধরেরা । ১৬৯৬ খ্রীষ্টাব্দে ইংরেজদের কাছে কলকাতা গোবিন্দপুর ও সুতানুটির জমিদারি স্বত্ত্ব বিক্রির পরই সাবর্ণ চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপ্রসাদ রায়চৌধুরী ও ভবানীপ্রসাদ রায়চৌধুরী বরিষা থেকে এসে প্রথম বসবাস শুরু করেন দক্ষিণেশ্বর গ্রামে । তাদের গৃহদেবতা ছিলেন শ‍্যাম রায় । দোলযাত্রার দিন শ‍্যামরায়ের পূজা ও উৎসব হতো প্রবল জাঁকজমকের সাথে । দোলের দিনে ফাগের রঙে লাল হয়ে যেতো চৌধুরী বাড়ি । এ প্রসঙ্গে তখনকার কবিয়ালরা ছড়া কেটে বলতেন "দোলপিঁড়িতে ধুমধাম । দোলে সাবন্নের শ‍্যাম ।" এই থেকেই এই স্থানের নামকরণ হয় দোলপিঁড়ি । এরপর প্রায় দুশো বছর পর স্বাধীনতার সময়ে কমলকৃষ্ণ অধিকারী , মোহন চ‍্যাটার্জী , শম্ভু বেরা প্রমুখেরা দোলপিঁড়ির হৃত গৌরব ফেরাতে বদ্ধ পরিকর হন এবং তৈরী হয় দোল মঞ্চ । অধিকারী মশাইরা বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী হওয়ায় সম্পূর্ণ বৈষ্ণব রীতি মেনে দোলের যাবতীয় নিয়মাবলী পালন করেন । দোলের আগের দিন মহাপ্রভুকে স্মরণ করে অধিবাস শুরু হয় ।
অধিবাসের দিন অষ্টপ্রহর নাম সংকীর্তন হয় । পরের দিন অর্থাৎ দোলের দিন নগরকীর্তণে বের হন এলাকার অধিবাসীবৃন্দ । এই পরিক্রমা দোলপিঁড়ি থেকে শুরু হয়ে অনাথ ভান্ডার , মুক্তোকেশী হয়ে লাল বাহাদুরের বাড়ি ঘুরে মেঘনাদ মাঠ , বাচস্পতি পাড়া , মুচিপাড়া হয়ে আবার দোলপিঁড়িতেই ফেরে । তারপর দুপুরে মহাপ্রভুর ভোগ হয় চিঁড়ে মুড়কি দই সন্দক লবণ সহযোগে ফলার বানানোর মাধ‍্যমে । খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই উৎসবে আবির ছাড়া অন‍্য রং ব‍্যবহৃত হয় না । দোল উপলক্ষে সাবর্ণ চৌধুরীদের সময় থেকেই মেলা বসার রেওয়াজ ছিল । সেই রেওয়াজ আজও রয়ে গেছে তবে তা আয়তনে অনেক ছোট হয়ে গেছে । দোলপিঁড়ির দোলের আরো এক বিশেষত্ব , এখানে চাঁচড় পোড়া বা নেড়াপোড়া দোলের আগের দিন নয় বরং দোলের পরের দিন হয় । এছাড়াও জন্মাষ্টমীর দিনও ভোগ বিতরণ করা হয় দোলপিঁড়ি থেকে । বর্তমানে দুর্গোৎসবও ধূমধাম করে পালিত হয় দোলপিঁড়িতে ।
এইভাবেই বহুযুগের ওপার হতে ফাগের রং দোলপিঁড়ি থেকে গোটা দক্ষিণেশ্বরে ছড়িয়ে যায় , আর দক্ষিণেশ্বরবাসী সেই রং মেখে শুদ্ধ হয় , পবিত্র হয় ।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours