Fiture
সুমিত তালুকদার, ফিচার রাইটার উত্তর ২৪ পরগনা: জাপানের টোকিয়োতে ১৯৪৬ সালে আন্তর্জাতিক সামরিক বিচারশালা (International Military Tribunal for the Far East) –র অধিবেশনে নেতাজি সুভাসচন্দ্র ওরফে চন্দ্র বোসকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ (Warcriminal) বলে চিহ্নিত করা হোলো। তীব্র প্রতিবাদ করলেন উক্ত ট্রাইব্যুনালের অন্যতম সদস্য বিচারক ডঃ রাধাবিনোদ পাল (১৮৮৬-১৯৬৭)। একমাত্র তিনিই সেদিন খুব জোরালো ভাষায় নেতাজির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আজাদ হিন্দ সরকার ও আজাদ হিন্দ ফৌজের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে স্বাধীন রাস্ট্র গড়ার লড়াইকে এবং জাপানের সহযোগিতাকে শ্রদ্ধা ও প্রশংসা জ্ঞাপন করেছিলেন।
ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করে সাধারন মানুষকে হত্যা করার জন্য প্রকৃত প্রস্তাবে তাদেরই ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলা উচিত, এ কথা বলতে তিনি দ্বিধা করেননি। এরপর তিনি দেশে ফিরে ১৯৪৭, ২৩ জানুয়ারি কলকাতায় তথ্যসহ ঘোষণা করলেন যে নেতাজি সুভাষচন্দ্রকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসাবে আদৌ গণ্য করা যায় না, তাঁর আকষ্মিক অন্তর্ধানও রহস্যাবৃত এবং ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইহোকুতে কোনো বিমান দুর্ঘটনা হয়নি। বিচারক ডঃ রাধাবিনোদ পালের এই সপ্রমাণ ঘোষণা নেতাজির মৃত্যুবিষয়ক সত্য উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে তৈরি করে এক নতুন বিতর্ক। স্বাধীনতার পর জওহরলাল নেহরু দেশের প্রধানমন্ত্রীর গদি লাভের প্রতিযোগিতায় নেতাজির সগৌরব ও সশরীর উপস্থিতি কখনই মেনে নিতে চাননি। তাই যে কোনো দুরভিসন্ধির অজুহাতে নেতাজির মৃত্যুই ছিল তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্য। মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রেও ছিল তাঁর তীব্র অনীহা। অবশেষে জনগণের দাবি মেনে ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর আজাদ হিন্দ ফৌজের মেজর ও তৎকালীন মন্ত্রীসভার এম.পি. শাহনওয়াজ খাঁন – কে নিয়ে তৈরি হোলো ‘ শাহনওয়াজ কমিশন’ নামে এক তদন্ত কমিশন। এই প্রথম তদন্ত কমিশনও নেহরুর বক্তব্যকে সমর্থন করে ঘোষণা করল যে গণতন্ত্রী চিনের অন্তর্ভুক্ত তাইপে-র তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু সত্যি এবং জাপানের রেনকোজি মন্দিরে রাখা ভস্ম নেতাজির দগ্ধ দেহাবশেষ। কমিশনের সাক্ষ্যপত্রে স্বাক্ষর করলেন স্বয়ং কমিশনার, এবং শঙ্কর মিত্র পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধি। কমিশনের তিন নম্বর সদস্য সুভাষচন্দ্রের সহোদর ভ্রাতা সুরেশচন্দ্র বসু স্বাক্ষর করেননি এবং তিনি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেন। তিনি পুনরায় ডঃ রাধাবিনোদ পালকে দিয়ে এ ব্যাপারে তদন্ত করার কথা বলেন। কিন্তু নেহেরু তা সমর্থন করেননি। এরপর শাহনওয়াজের পদোন্নতি হয় এবং রেলওয়েজের ডেপুটি মিনিস্টার করা হয় তাকে। নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য তবু থেমে থাকে না। সশরীর নেহেরু আর অশরীরী নেতাজির মধ্যে শুরু হয় বাঁচা মরার লড়াই এক কূটনৈতিক সংঘর্ষ। নিরুপায় নেহেরু ফিনিক্স পাখির মতো অমর নেতাজিকে পুনরায় খোসলা তদন্ত কমিশন গঠন করে মৃত প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গোপাল দাস খোসলাকে নিয়ে গঠিত খোসলা কমিশন আদৌ নিরপেক্ষ ছিল না কেননা মিঃ খোসলা ছিলেন নেহেরু পরিবারের ঘনিষ্ট এবং ইংল্যান্ডে সুভাসচন্দ্রের পরীক্ষায় সাফলতাকে ঈর্ষা করতেন। খোসলা কমিশনও ব্যর্থ হয় নেতাজির রহস্যময় অন্তর্ধান ও মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে । সে সময় পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার শৌলমারি আশ্রমে সাধু সারদানন্দ নেতাজি বলে প্রচারিত হয়। তিনি আসলে অনেকের মতে রাশিয়ায় ছিলেন ছদ্মবেশে। নেহেরুও
সুযোগ বুঝে নেতাজির সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগকে নস্যাৎ করবার জন্য শৌলমারির সাধুকে নেতাজি বলে চালানোর চেষ্টা করেন। “Back From Dead” গ্রন্থের ১২ পৃষ্ঠায় এক মন্তব্য থেকে জানা যায়- “ Nehru planned some holy men across the country beginning with the infamous Shoulmari Baba. This also helped hushing up the Soviet connection altogether” আসলে নেহেরু কখনই চাননি নেতাজি দেশে ফিরে আসুক। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর লাল ফৌজের হাতে বন্দি নেতাজির সোভিয়েত রাশিয়ার ট্রান্স- সাইবেরিয়ান রেলওয়ের শেষে উরাল পর্বতমালার মধ্যে গোপন স্থান থেকে প্রত্যাবর্তনের সামান্যতম সম্ভাবনাকেও নেহেরু কূটনৈতিক চালে বানচাল করেছিলেন। আসলে নেতাজি বারবার মরিয়া প্রমাণ করিয়াছেন, তিনি মরেন নাই!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours