সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুর:
সুধন্যখালিতে নামবোনা।ভালো লাগছেনা।সেই এক ই কৃত্রিমতা ছাপ।সাদিকের ছেলে বললো,না গো এটা খুব সুন্দর।পাহাড়ের ওপর ।নীচে বাঘ থাকে।
নেমে বুঝলাম,
এই সুধন্যখালি জায়গাটি আধুনিক স্কাই ওয়াকের মতো।অনেক উচুঁ পিলারের ওপর লম্বা ঢালাই রাস্তা।নীচে জলাভূমি।এখানে দাঁড়িয়ে দেখলাম বিশাল শিঙ ওয়ালা হরিণ পরিবার।গোটা দশেক।দু একটি বুনো শুয়োর।অজস্র হনুমান ও লাল কাকড়া।
এখানে অহরহ বাঘ আসে।কাছেই একটা মিঠা জলের সোর্স আছে।ভালো লাগলো এখানে ঐ চিড়িয়াখানার মতো ব্যাপারটা নেই।আমার চিড়িয়াখানার পশুদের দেখলে ভীষন কষ্ট হয়।
পশু হয়েও কেমন মনুষ্য জীবন যাপন করছে।
পেছন থেকে পরিচিত হাতের টান পরলো।দেখে যা,বাঘের পায়ের ছাপ।হাজারো হরিণ, ছাগল, শুয়োরের পায়ের ছাপের থেকে আলাদা।পদক্ষেপ ই বুঝিয়ে দেয় তার কৌলিন্য।সূতীব্র নখর, থাবা যেন কথা বলে।
আমার মতো ছাগল গোছের মানুষ জন হঠাৎই যদি কোনো প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বাঘের পাল্লায় পরেন তো সেই বাঘ মাথাটি চিবিয়ে ছেড়ে দেবে।লাবডুব যন্ত্রের ওপর দেগে দেবে থাবার শিলমোহর। যদি মনুষ্য রুপি ছাগল না হয়ে পশু ছাগল হতাম তাহলে বাঘের পেটে গিয়ে দু দন্ড শান্তি পেতাম।আপনারাও এই মুন্ডহীন প্রানিটির হাত থেকে মুক্তি পেতেন।
বেশ অনেকক্ষন এখানে কাটিয়েছিলাম।মনে হচ্ছিলো যদি লুকিয়ে থেকেই যাই রাতে, কেমন হতো সেই রাত।ওহ আবার রাত।আমি আর রাতের স্বপ্ন দেখবোনা।রাতের গল্প ও শোনাবোনা।
লঞ্চে ফিরে এসেছি সকলে।স্কাই ওয়াকের পর সবাই ক্লান্ত।লঞ্চের পেটের ভিতর সকলেই ঢুকে পরলো।প্রচণ্ড হাওয়া চলছে।ঠাণ্ডা কনকনে হাওয়া সোয়েটার চাদর ভেদ করে ঢুকছে।বোটম্যান ভাই বললো দিদি নীচে যাও।না ভাই ।ওখানে বড্ড দমবন্ধ লাগে।ওর নিজের কম্বল টা মেশিন ঘর থেকে বের করে দিলো।ভালো করে গুছিয়ে বসলাম।সূর্য মামা পাটে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দুটো কুমীর সুড়সুড় করে জলে নেমে গেল।একদল হরিণ এসেছে জল খেতে।বনবেড়াল ও দেখলাম।এই গোধূলীতেই পশু পাখিরা জল খেতে পাড়ে আসে।
আসলে সন্ধ্যা হলেই ওরা ঘুমিয়ে পরে।ওদের তো বিজলি বাতি নেই।টি ভি নেই।সাড়ে ছয়টার রান্নাঘর,ফাগুন বৌ এসব দেখা নেই।
ছোটদের হোম ওয়ার্ক,ড্রয়িং ক্লাস কিচ্ছুটি নেই।
সব্বাই আমাকে টা টা বাই বাই করে চলে গেল। কালো জলের ওপর লাল নীল আলো।ওগুলো সীমান্ত প্রহরীদের লঞ্চ।
ডিঙি নৌকারাও বাড়ি ফেরার পথে।
সেই অদ্ভুতুড়ে হঠাৎই পেছন থেকে ঠান্ডা হাতে গাল ছুঁয়ে, কি কেমন?এ কি?সাদিক পেছন থেকে বললো,সঙ্গমে দাদা আর ভাই চান করে এলাম।বোটের পাশে ই বাথরুম।বালতি ফেলে নাকি ওরা চান করেছে এই হাড় হিম শীতে।সাদিকের অভ্যাস আছে তা বলে তুমি।উত্তরের অপেক্ষা না করেই গায়ের চাদরটা কেড়ে নিলো।
বোটম্যানকে বলতে শুনলাম ভাই বিড়ি আছে?বিড়ি ধরিয়ে খানিক ধোয়া মুখের সামনে ছেড়ে বললো,অনেক অক্সিজেন নিয়েছো,কাল থেকেতো আবার, কার্বন।
অদ্ভুত এক অসীমের মধ্যে যেন বিলীন হয়ে যাচ্ছি।দিন যেন রাত্রির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলো।এমন নিশ্চিত নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের খোঁজে ই তো অবিশ্বাসী মানুষ ঘুরে মরে।
ফিরে আসা তো সেই প্রাণের ঠাকুরের দুয়ারে****
"আমারে তুমি অশেষ করেছো......(ক্রমশ)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours