Fiture
মহ: এনামুল হক, ফিচার রাইটার, বর্ধমান: এআই এম আই নেতা আসাদউদ্দিন ওয়েসিকে বাংলায় আসতে হ'ল বা আনতে হ'ল কেন? একটা মৌলবাদ এর চরম ব্যাপৃতি ঘটলে অপর একটি মৌলবাদ সংগঠনের পথ সুগম হতে বাধ্য। বিজেপির ফ্যাসিস্ট শক্তি কে বিপুল ভাবে সমর্থন করেছে বাংলার হিন্দু সম্প্রদায়ের একটা বিরাট অংশ। রাজ্যের যত্রতত্র চলছে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর কটুক্তি, চলছে কোথাও কোথাও জয় শ্রীরাম ধ্বনীর হুমকি। এই হুমকি এবং হুংকার বা মবলিঞ্চিং এর ঘটনা এই রাজ্যে স্বাধীনতার পরে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এই প্রথম এ কথা বলা যেতেই পারে। ইতিপূর্বে যা ঘটেছে সেটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে যদি ধরে নিই। এই বিদ্বেষের বিষবৃক্ষ রোপন দীর্ঘ সময় ধরে কারা কারা করছে? কাদের প্রতি এত বিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে বিভিন্ন মঞ্চে বাংলার শান্তি প্রিয় মানুষকে উত্তেজিত করে তোলার ঘৃণ্য চেষ্টা করা হচ্ছে অবিরাম ভাবেই। সে কথা রাজ্যের উদার ও বিদ্বজনেরা আমার থেকে লক্ষ গুণ জানেন। ভিন্ন রাজ্যে রাজ্যপালের (গভর্নর) পদে আসীন থেকেও যদি বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের মানুষ কে ক্রমশ কটুক্তি করেন তবে সেই সম্প্রদায়ের মানুষের মনে একটা ভীতি একটা অনিশ্চয়তার ঘন কালো অন্ধকার নেমে আসতে বাধ্য বা এসেছে। আর এটাই স্বাভাবিক। বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপির বেশ কিছু নেতা মন্ত্রীদের করা মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য গুলো রাষ্ট্রব্যাপী যে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করে চলেছে এমনকি এই পশ্চিমবঙ্গেও সেই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের কোনো খামতি নেই। সে কথা আর নতুন করে উল্লেখ করার দরকার হয় না। বিগত কয়েক বছর রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বর ঘৃণ্য বক্তব্য সকলেই অবগত আছেন।
বরঞ্চ বাংলার উদার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ চেষ্টা করেছেন সেগুলোর প্রতিত্তুর দেওয়ার। কিন্তু সেইভাবে বিদ্বেষীদের মনোভাবকে প্রতিহত বা বন্ধ করা যায় নি। কেন যায়নি? এখানেও অনেক খামতি আছে। আছে রাজনৈতিক দল গুলোর দ্বায়বদ্ধতার অভাব। ফলে বাংলা থেকে যদি কোনো প্রতিবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা রাজনৈতিক দল এই সম্প্রদায়ের পাশে সেভাবে আন্তরিকতার পাশে দাঁড়াতে সচেষ্ট না হয়। বা কৌশলে গা বাঁচিয়ে এড়িয়ে যেতে চাই। তাহলে তখন সেই শূন্য স্হান পূরণ করতে একটা কেউ না কেউ এগিয়ে আসতে পারে বা সুযোগ পেয়ে যায়। আর সেই কারণেই, আসাদউদ্দিন সেই সুযোগ পেয়ে গেলেন । কে যেন বলেছিলেন, " রাজনীতিতে কখনও কখনও যেমন কুকুর তেমন মুগুর নীতি গ্রহণ করতে হয় "। বাংলায় বাঙালি মুসলমান আজও বিভিন্ন দিক থেকেই চীরতরে অবহেলিত নিপীড়িত বঞ্চিত সে বার্তা আমরা ডঃ রাজেন্দ্র সাচার কমিশনের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট ভাবেই জেনেছি। আমি মোটেও কোনো সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত কে পোষণ করার পক্ষে না। এই সংখ্যাটা আজ নেহাত কম। বাংলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটা বিরাট অংশ রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের সরকারকে ভোট দিয়েছিল।সেই সরকার কতটুকু এই সম্প্রদায়ের জন্য উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে? চেষ্টা করলেও পারবে না। রাজ্যে ভোট হারাবার ভয় আছে। তৃণমূল দলের নেতা মন্ত্রীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই দেখছি, কে কতটা বড় হিন্দু তার প্রমাণ দিতে গিয়ে রাজপথে নেমে পুজো পার্বণ দ্বারা গলা ফাটিয়ে মিছিল মিটিং করেও প্রমাণ করতে হচ্ছে। তবুও এই দল সম্প্রদায়ের মন জোগাতে পারে নি। সেখানে কোন সাহসের উপর নির্ভর করে তারা বাঙালি মুসলমানের উন্নতির দিকে অগ্রসর হবেন? হিন্দু সম্প্রদায়ের থেকে ভোট হারানোর ভয় পেয়ে বসেছে রাজ্যের এই শাসক সরকার। ফলে গণেশ পূজো, ছট পূজো করেও শেষ রক্ষা হয়নি। হিন্দি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও হিন্দি ভাষীদের ভোট ধরে রাখতে পারে নি। শত চেষ্টা করেও বিজেপি কে এই রাজ্যে ঠেকাতে পারে নি। কেন পারে নি? অসাম্প্রদায়িক দলের নামাবলী গায়ে জড়িয়ে থাকা রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃরাও মনে প্রাণে মুসলমান বিদ্বেষী হয়ে ওঠে এবং বিজেপির প্রতি ঝুঁকে পড়ে। সম্প্রদায়ের প্রীতির টানেই সেটা হয়েছে বা ঘটেছে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। "১৯৩৭ সালে মহাসভার আহমেদাবাদ অধিবেশনে সভাপতি সাভারকার ঘোষণা করেন যে, ভারত একটি সুসংহত জাতিতে পরিণত হয়েছে বলে যারা মনে করে তারা নিতান্তই ভ্রান্ত, কেননা ভারতে দু'টি প্রধান জাতি বাস করে যাদের একটি হিন্দু, অপরটি মুসলমান।" এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা ঐ একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। সেটাই বড় বেদনার। আজ আসি। এর সাথেই আসরাফ আর আজলাফ যুক্ত করা উচিৎ ছিল। তা না হলে বক্তব্য সম্পূর্ণ করা যাচ্ছে না।
পোস্ট দীর্ঘায়িত করে লাভ নেই, তাই পরের পোস্টে সেটা তুলে ধরতে চাই। একটা মৌলবাদ অপর একটা মৌলবাদ এর জন্ম দেয়। ১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগের সময় এমনই ভয়ানক ভাবে হিন্দু মুসলমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল। সেই খেসারত আজও বইছে বাঙালি জাতির একটা শ্রেণী।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours