Dr Bidhan Ch Roy

রণজিৎ গুহ, সমাজকর্মী ও লেখকঃ আজ ১লা জুলাই -ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিন। আমাদের দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে চিকিৎসক দিবস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বছরের নানা দিনে চিকিৎসক দিবস পালিত হয়।কানাডায় পয়লা মে।ইরানে ২৩শে অগাস্ট। আমেরিকায় ৩০শে মার্চ।ব্রাজিলে ১৮ই অঅক্টোবর। ভিয়েতনামে ২৮শে ফেব্রুয়ারি। কিউবায় ৩রা ডিসেম্বর। কেন জানিনা ইউনেস্কো বা অন্য কোনও মান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা চিকিৎসক দিবস হিসাবে নির্দিষ্ট কোনও দিন ঘোষণা করেনি।বেশ বিষ্ময়কর যে অন্যান্য দেশে তাদের নির্ধারিত চিকিৎসক দিবস পালিত হচ্ছে বহু বহু বছর ধরে। আমেরিকায় ১৮৪২ থেকে। ভিয়েতনামে ১৯৫৫ থেকে। অথচ আমাদের দেশে মাত্র ১৯৯১ থেকে চিকিৎসক দিবস পালিত হচ্ছে। কিভাবে পালিত হচ্ছে সে অন্য কথা। আমার অভিজ্ঞতা বন্ধুবান্ধব বা একান্ত পরিচিতজনরা ছাড়া কোনও রুগীই সাধারণ ভাবে ডাক্তারবাবুদের শুভেচ্ছাটুকুও জানান না। উপহার দেওয়া বা কৃতজ্ঞতা জানানো তো ভাবাই যায় না।ডাক্তারবাবুদের অবশ্য শুভেচ্ছা বা উপহারের অভাব হয়না এদিন।ওষুধ কোম্পানি বা চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক আছেই। এ কথা চিকিৎসকদের নিন্দেমন্দ করার জন্য নয়।অকৃতজ্ঞ উপকৃত রোগীদের কথাটা স্মরণ করিয়ে দেওয়া। এসব কথা থাক। ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় কেমন মানুষ ছিলেন বা কেমন মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন তার দুটো গল্প শোনাই।গল্প নয় ঘটনা।একটি লিখেছেন সাহিত্যিক বিমল মিত্র। অন্যটি সাহিত্যিক নারায়ণ স্যান্যাল। বিমল মিত্র জানাচ্ছেন। বিধান রায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ওয়েলিংটন থেকে রাইটার্স যেতেন। সকালে বেলা হাতে গোনা কয়েকটি রোগী দেখতেন। আগে থেকে নাম লেখাতে হতো। একটা লোক রোজ এসে দাঁড়িয়ে থাকে, নাম লেখানো নেই, তাই দেখাতে পারে না। রায়বাবু দু চারদিন লোকটিকে খেয়াল করে শেষে একদিন বিরক্ত হয়ে ডেকে পাঠালেন।"কিহে, রোজ রোজ এসে দাঁড়িয়ে থাকো! ব্যাপার কি?: -আজ্ঞে, আপনাকে দিয়ে চিকিচ্চে করাতে চাই। -তা রোগীটি কে হে? -আজ্ঞে, আমি। বিধানবাবু, একবার তাকিয়ে ভাল করে দেখলেন তাকে তারপর বললেনঃ না হে, এ রোগ সারার নয়। তাছাড়া, আমার আজ সময় ও নেই। তুমি বরং কাল এসো গিয়ে। পরদিন লোকটি আসতেই তার হাতে একটা চিঠি দিয়ে বললেনঃ এটা নিয়ে রাইটার্সে যাও, আমার সেক্রেটারির সাথে দেখা করো। দারিদ্র কি আর ওষুধ দিয়ে সারে? নারায়ণ স্যান্যাল এক ঘটনার দীর্ঘ বিবরণ দিয়েছেন।সংক্ষেপে বলি। বাকুড়া জেলায় এক হাসপাতাল বাড়ির নির্মাণ হবে।প্রি ফেব্রিকেটেড মেটেরিয়াল দিয়ে।জেলা শাসক পুলিশ সুপারকে নিয়ে বিধান রায় সরেজমিনে দেখতে বুঝতে এসেছেন। সাথে প্রি ফেব্রিকেশন এর প্রস্তাবক ও নারায়ণ বাবু। বাকিটা নারায়ণ বাবুর কলমে। "আমরা পৌঁছলাম অকুস্থলে। একেবারে সাইট পর্যন্ত গাড়ি গেল না। রাস্তা ব্লক করে পড়ে আছে লোহা-লক্কড়। প্রায় পঞ্চাশ গজ দূরে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে চললাম আমরা সদলবলে। সবার আগে সেই ধুতি এবং ফুলশার্ট পরা সাড়ে ছয়ফুট উঁচু মানুষটি-উনসত্তর বছর বয়সেও যিনি খাড়া হয়ে হাঁটছিলেন। অকুস্থলে পৌঁছেই শশী ঘোষ মশাই মুখর হয়ে ওঠেন। এ জাতীয় প্রি-ফ্যাব বাড়ির কী সুবিধা তা সবিস্তারে বুঝিয়ে বলতে থাকেন। আমি তো তাজ্জব! উনি এত খবর কোথা থেকে পেলেন? কিন্তু ওঁকে থামিয়ে দিয়ে বিধানচন্দ্র আমাকে নাম ধরে ডাকলেন, বললেন, ওহে, শোন তো এদিকে। আমি এগিয়ে আসি। ওঁর সঙ্গে আমার যে কথোপকথন হয়েছিল তা সেদিনই ফিরে এসে আমি ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলাম। তাই আজ প্রায় পঁচিশ বছর পরেও সেটা হুবহু লিখতে পারছি। উনি প্রশ্ন করলেন, তোমার এ হাসপাতালের মাপ কত? লম্বা এবং চওড়া? আমি বলি লম্বায় একশ’ সাঁইত্রিশ ফুট এবং চওড়ায় তেত্রিশ ফুট। - হুঁ। তাহলে প্লিন্থ এরিয়া কত হল? - সাড়ে চার হাজার স্কোয়ার ফুট স্যার। - না! চার হাজার পাঁচশ’ একুশ। যা হোক, এর এস্টিমেটেড কস্ট কত? - তেষট্টি হাজার তিনশো টাকা। - হুঁ! তাহলে পার-স্কোয়ার ফুট প্লিন্থ এরিয়া রেট কত দাঁড়ালো? - মনে মনে হিসাব কষে বললাম, প্রায় চৌদ্দ টাকা স্যার।
বিধানচন্দ্র হাসলেন। বললেন, পাকা ইটের আর. সি. ছাদের বাড়ি করলে এখানে প্লিন্থ-এরিয়া কস্ট কত হবে তোমার মতে? আমি মাথা চুলকে বলি, ঐ তের-চৌদ্দ টাকাই হবে স্যার! বিধানচন্দ্র এবার শশী ঘোষের দিকে ফিরে বললেন, হল? শশী ঘোষ মশাই অপাঙ্গে আমার দিকে তাকিয়ে দেখলেন একবার। আমি কেন ভস্ম হয়ে গেলাম না তা আজও জানি না। বিধানচন্দ্র বললেন, তাহলে আমাকে এ জঙ্গলের মধ্যে কী দেখাতে নিয়ে এলে শশী? এত এত ফরেন এক্সচেঞ্জ খরচ করে আমরা যে অ্যাসবেসটাস্ ছাদের বাড়ী বানাচ্ছি, সে বাড়ি ওর চেয়ে কমেও এ ছোকরা ইট-কাঠ দিয়ে বানাতে পারত! তাতে আর কিছু হোক না-হোক এ তল্লাটের মিস্ত্রি-মজুর দুটো পয়সার মুখ দেখত। তাই নয়? কি হে ছোকরা, তুমি কী বল?" জন্মদিনে প্রণাম জানাই ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়কে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours