ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য ফিচার রাইটার দুর্গাপুরঃ ...নাম? রেজিস্টার চোখ রেখেই জিঞ্জাসা করল অঙ্কন! অঙ্কন ব্যানার্জী, এই 'আশালতা বৃদ্ধাশ্রমের সর্বময় কর্তা!
- পারমিতা! পারমিতা মুখার্জী ! পা-র-মি-তা.. অস্ফুট উচ্চারন করে রেজিস্টার থেকে মুখ তুললো অঙ্কন! অবাক চোখে আপাদমস্তক নিরীক্ষন করলেন এই বৃদ্ধাশ্রমে সদ্য আগত নতুন আবাসিক পৌঢ়া মহিলাকে! তারপর দুচোখে অপার বিষ্ময় নিয়ে জিঞ্জাসা করলেন তুমি?
বিষ্ময়ের ঘোর পারমিতার চোখে মুখেও! ...সেও অস্ফুট স্বরে বলল," তুমি এখানে!"
আমি এই বৃদ্ধাবাসটা করেছি মায়ের নামে! আগে মা আর আমি দুজনেই চালাতাম এখন একা!
- মাসিমা নেই ?
হতাশার সুরেই অঙ্কন বলল, " মানুষ কি চিরদিন থাকে? চার বছর হ'লো মা চলেগেছেন ....তোমার খবর বলো! এখানে কেন এলে?"
- আমি এখন একা নিসঙ্গ, দু মাস আগে হঠাৎ শুভদীপ চলে গেছে হার্ট অ্যাটাকে, একমাত্র ছেলে অর্ঘ্য আমেরিকা প্রবাসী, মেয়ে রুনা ব্যাঙালোরে সেটেল্ড! ছেলে মেয়ের চাপেই বাড়ীটী বিক্রি করতে হ"লো!....তোমার ছেলে মেয়ে?
স্মিত হেসে অঙ্কন বলল, "আমি অকৃতদার "
- মানে? তুমি বিয়ে করলে না কেন?
- কেন? সেটা কি নতুন করে জানার প্রয়োজন আছে?
- না মানে আমতা আমতা করে বলল পারমিতা
- বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে ফিরে এসে শুনলাম তোমার বিয়ে হয়ে গেছে! তাই আর চাকরী না নিয়ে এই বৃদ্ধাশ্রমটা তৈরী করলাম. মা চেষ্টা করেছিল আমাকে সংসারী করার কিন্তু আমি রাজী হইনি, মা বুঝতে পেরছিল সব তাই জোর করেনি!
হঠাৎ অঙ্কনের হাতে পারমিতার চোখের দুফোঁটা অশ্রু মুক্তো হয়ে ঝরে পড়ল অঙ্কনের হাতে..তার সার শরীর রোমাঞ্চিত হল! এক অনীর্বচনীয় তৃপ্তিতে ভরে গেল! না পাওয়ার যন্ত্রনা এক নিমেষে হারিয়ে গেল!তার সম্বিত ফিরল পারমিতার ডাকে, " অঙ্কন, আমি কি আবার নতুন করে শুরু করতে পারি না? মায়ের স্মৃতিভরা এই বৃদ্ধাশ্রমকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে? এক সাথে নতুন করে পথ চলতে....."
Post A Comment:
0 comments so far,add yours