poribesh
রণজিৎ গুহ , সমাজকর্মীঃ  "এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি— নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।" সুকান্ত ভট্টাচার্য অঙ্গিকার করেছিলেন আমাদের সকলের হয়ে। আমরা কথা রাখিনি কেউই। অনিহা ও ব্যার্থতার দায় চাপিয়েছি অন্যের উপর। সুইডেনের এক কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ আমাদের ঝুঁটি ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে আমাদের আবশ্যিক দায়কে।বিভিন্ন দেশের সরকার, বাণিজ্য সংস্থা বা অন্য কর্তৃপক্ষ তো দায়ী বটেই একই সঙ্গে যৎসামান্য হলেও আমাদের ব্যাক্তিগত দায় অস্বীকার করি কিভাবে? ষোড়শী গ্রেটা জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক আলোচনা সভায় উপস্থিত সকলকে এক গুরুতর প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়।' এখানে উপস্থিত প্রাপ্তবয়স্ক আপনারাই এ গ্রহের জলবায়ু সংকটের জন্য দায়ী। এই গভীর সংকট থেকে বেরিয়ে এক নিশ্চিত প্রাকৃতিক ভারসাম্যের আবহে আমাদের বড় হয়ে ওঠার কি কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েছেন?' অ্যাসপার্গার সিনড্রোমে আক্রান্ত গ্রেটা থানবার্গ ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে স্কুল বাদ দিয়ে টানা তিন সপ্তাহ সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে বসে থাকেন গ্রেটা। এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে কেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, সেজন্য প্রতিবাদ। এরপর, সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ঘোষণা করেন যে প্রতি শুক্রবার তিনি সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন, যতদিন পর্যন্ত না তারা তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ব্যাপারে যথাযথ ব্যাবস্থা নেয়। উল্লেখ্য, তার এই প্রস্তাবের সাথে ফ্রান্সের প্যারিস চুক্তির সাদৃশ্য রয়েছে। গ্রেটার শুক্রবারের ধর্না ' ফ্রাইডেজ ফর দ্য ফিউচার ' নামে পরিচিত হয়। গ্রেটার ডাকে সাড়া দিয়ে ১৫ই মার্চ শুক্রবার জার্মানি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ ১০৫টি দেশের ১,৬৫৯টি স্থানে শিক্ষার্থীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে। বিশ্বব্যাপী বহু বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক গ্রেটার আন্দোলনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।এমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেটা থানবার্গকে' বিবেক দূত ' বলে সম্মানিত করেছে। নরওয়ে ডেনমার্কের কয়েকজন সাংসদ গ্রেটার নাম শান্তি নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করেছেন। জলবায়ুর বিপজ্জনক পরিবর্তন প্রতিরোধের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে গ্রেটা থানবার্গ আন্দোলন বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন।আগামী সেপ্টেম্বরে পরিবেশের জন্য পড়ুয়াদের ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের সামান্য অনুরণন এদেশে এবঙ্গেও অনুভুত হচ্ছে। প্রকৃতি ও প্রাণীজগতের পারস্পরিক দেওয়া নেওয়ার সম্পর্ক কিভাবে নষ্ট হচ্ছে মানব প্রজাতির অবহেলায় বা লোভ লালসায় তা নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে সন্দেহ ও অবিশ্বাস আমাদের জাতি বৈশিষ্ট্য। গ্রেটা কার কথা গাইছে কাকে আড়াল করছে? কর্পোরেট পুঁজির এ এক নতুন কৌশল নয়তো? কিংবা এই জলবায়ু সংকট বিরোধী আন্দোলন আসলে রাস্ট্রবিরোধী আন্দোলনের সুসজ্জিত মুখোস কি না? পড়ুয়াদের আন্দোলনে টেনে এনে তাদের লেখাপড়ার কতটা ক্ষতি হবে আন্দোলনের নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে? সংগঠনহীন জন আন্দোলন কতটা ফলপ্রসূ?? ইত্যাদি বহুবিধ প্রশ্ন থাকায় আমরা সুইডিশ কিশোরীর আন্দোলনে এখনও সক্রিয় হতে পারিনি।? আরও কিছুটা আরাম আয়াসের প্রলোভনে মনে রাখছিনা প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদেরই সম্পদ। তাকে রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্বও আমাদের। অথচ জলবায়ু সংকট ক্রমশ ঘনিভুত হচ্চে। আগামী প্রজন্ম এক অতি বিষাক্ত আবহাওয়ার মধ্যে পঙ্গু জীবন যাপনে বাধ্য হবে। হয়তো বা এ গ্রহে গণবিলুপ্তির আরও এক আবহ আগত প্রায়। 


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours