সঞ্জয় সরকার, সাংবাদিক বিষ্ণুপুরঃ শনিবার ছিল জামাইষষ্ঠী। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহরে প্রায় সব বাড়িতেই ছিল জামাই আদরের ঘটা। পঞ্চব্যাঞ্জন সহ লুচি মিষ্টি তো ছিলই। তাঁর সঙ্গে ছিল জামাইদের জন্য উপহারের আয়োজন। কেউ দিয়েছেন জামাকাপড় তো কেউ আবার জামাইকে খুশি করেছেন মোবাইল বা দামি ঘড়ি দিয়ে। জামাইষষ্ঠীর চিরকালের দস্তুর যে এটাই। কিন্তু এবারের জামাইষষ্ঠীতে বিষ্ণুপুর শহরের দুই জামাই সেই দস্তুর ভেঙে তাঁদের শাশুড়ির কাছ থেকে সেরা উপহার পেলেন। দুই শাশুড়ির দেওয়া সেই উপহার নিয়ে খুশি মুখে সস্ত্রীক বাড়িতে ফিরলেন তাঁরা। বললেন ‘জামাইষষ্ঠীর উপহারে জামাকাপড়, ঘড়ি মোবাইল তো অনেকেই দেয়। সেগুলি থাকে আর কত দিন। কিন্তু এবার আমাদের শাশুড়িরা যা দিয়েছেন সেটা আমি কেন আমার ছেলেমেয়েরাও বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত তার সুফল পাবে। বিশুদ্ধ বাতাস নিয়ে বাঁচবে’।
বিষ্ণুপুর শহরের গোপেশ্বর পল্লীতে কাছাকাছি দুটি বাড়িতে বসবাস করেন দুই বন্ধু বীণা গুণীন এবং রাধারানি দে।
তাঁদের দুই জামাই প্রশান্ত বিশ্বাস ও উৎপল বায়েন এঁরাও পরস্পরের বন্ধু। প্রতিবছরের মত এবারও সকাল সকাল দুই বন্ধু সস্ত্রীক গিয়েছিলেন শাশুড়ির জামাইষষ্ঠীর আমন্ত্রণ রক্ষা করতে। বিণা গুণীনের বাড়িতে দুই জামাইয়ের ষষ্ঠীর রীতি রেওয়াজ পালনে পর জামাই উপহারে দুই শাশুড়িরা তাঁদের হাতে দিলেন ছোট ছোট দুটি করে গাছের চারা। যার একটি ছিল সেগুন অন্যটি একটি ফলের গাছ। দুই জামাই সেই উপহারের দেখে প্রথমে একটু হতচকিত হলেও পরে হাসি মুখে সেই উপহার স্বীকার করলেন। জামাইরা জানালেন, এটা তাঁদের কাছে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ উপহার। গাছের অভাবে পরিবেশ তাঁর ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। এখন বাচ্চা থেকে বুড়ো মোবাইল বা ইন্টারনেট নিয়ে ব্যাস্ত। গাছ এখন আর কেউ লাগায় না। তাই দূষণের মাত্রাও বেড়ে চলেছে। আমাদের শাশুড়িরা যে ভাবনা নিয়ে আমদের গাছ লাগানোর বিষয়ে উৎসাহিত করলেন তা একটা দৃষ্টান্ত। একে সামনে রেখে সবারই উচিত গাছের চারা উপহার দিয়ে পরিবেশ বাঁচাতে সাহায্য করা’। শনিবার অভিনব উপহারের এই ছবি ‘ট্রোল’ হয়ে ঘুরে বেড়াল বিষ্ণুপুর শহরে।
জামাই আদরে শেষে কেন গাছকেই বেছে নিলেন? প্রশান্ত বিশ্বাসের শাশুড়ি রাধারানি দে বলেন ‘কুড়ি বছর ধরে জামাইদের জামাকাপড় বা অন্য কিছু দিয়েছি। সেগুলির একটাও কী ওরা দেখাতে পারবে? কিন্তু আজ ওঁদের যা দিলাম তা সারাজীবন সবাইকে দেখাতে পারবে। গত ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়েছে। তখনই আমার দুই বন্ধু ঠিক করেছিলেম এবারে জামাইষষ্ঠীতে জামাইদের উপহার হিসাবে গাছের চারা দেব। সেই মত আমরা বাজার থেকে চারটি ভাল দেখে চারা গাছ কিনে এনেছিলাম। আজ সেটা দিয়েই জামাইদের সারপ্রাইজ দিলাম’। অভিনব এই উপহার পেয়ে খুশি দুই জামাইও। প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন ‘আজ জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার পেলাম। এই গাছ দুটির সঙ্গে আজকের দিনটার স্মৃতি আজীবন জড়িয়ে থাকবে। গাছের অভাবে পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে। দূষণের মাত্রা বাড়ছে। তাই গাছ উপহার দিয়ে আমাদের শাশুড়িরা আমাদের শহরকে সুস্থ রাখার বার্তা দিয়েছেন। পরিবেশকে সুস্থ রাখতে অন্যদেরও এমনভাবে এগিয়ে আসা উচিত। উপহারের এই গাছদুটি আজকের দিনটিকে ইতিহাস করে রাখবে’।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours