Choto golpo
চন্দ্রাবলী বন্দ্যোপাধ্যায়, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজঃ 
রিক্সার হর্নটা বার কয়েক বাজিয়েই, নিজেই রিক্সার সীটের উপর উঠে বসে রাখাল । রাখাল গোমস তার নাম, কটা রঙটা রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গেলেও নীল চোখ বলে দেয় তার বংশ পরিচয় । কাজল দিদিমণিকে সে রোজ রিক্সা করে নিয়ে যায় স্কুলে, দিদিমণি অবশ্য রাখাল বলেই ডাকে। 
আজকাল কাজল দিদিমণির ডাক শুনেই বুঝতে পারে দিদিমণির মুড কখন কেমন । যখন রেগে থাকে তখন গোমস বলেই ডাকে, আর ভাল মুডে থাকলে, -- হ্যারে রাখাল আজ কি খেলি, কি রান্না করলি, তোর দেশে যাবার টাকার জোগাড় হল কিনা, আরো কত কি গল্প । রাখালের বিদেশী বাবা বাঙালী মায়ের গর্ভ সঞ্চার করে, তার নিজের দেশে পাড়ি দিয়েছে । অভাগী মা অগত্যা চার্চের ফাদারের কাছে, রাখালকে রেখে নিরুদ্দেশ । এখন রাখাল তার বাবার দেশে ফিরতে চায়, -- এ কথাগুলো অনেকবার শুনেছে কাজল, তবুও বারবার কথাগুলো বলে তৃপ্তিলাভ করে রাখাল । ফাদারের পর এই একটা মানুষই তো আছে, যে রাখাল কে ভালবাসে, স্নেহ করে । তাই দিদিমণির কাজে কোনো ফাঁকি পড়েনা । 
কিন্তু তাও একদিন ফাঁকি পড়লো । কাজল স্কুলে যাবার টাইমে অনেকক্ষণ বসে অপেক্ষা করার পরেও যখন রাখাল এলো না, তখন অন্য রিক্সা ধরে স্কুলে চলে গেল । কিন্তু মনে একটা খটকা লেগেই রইলো, রাখালের ব্যতিক্রম দেখে । কাজল মনে মনে চিন্তিত হয়ে পড়লো রাখালের শারীরিক পরিস্থিতির কথা ভেবে । ছেলেটা বড্ড বেশী পরিশ্রম করে, এক নেশায় পেয়ে বসেছে বাবার কাছে ফিরতেই হবে । বিকেলে বাড়ি ফিরে কাজে মন বসাতে পারেনা কাজল, কি হল ছেলেটার ভেবে বেরিয়ে পরে রাখালের বস্তির দিকে । কাজল আগেও একবার এসেছিল রাখালের বাড়ি । রেল বস্তিতে থাকে রাখাল, কিন্তু রাখালের বাড়ির কাছাকাছি যেতেই, কাজল শুনতে পেল অদ্ভুত সুরের মূর্ছনা । রাখালের দুয়োর গোড়ায় পৌঁছে চমকে ওঠে কাজল -- একি !! এতো রাখালের ঘর থেকেই আসছে, বিষন্ন সুরের মায়াজাল, গুমরে গুমরে কেঁদে ওঠা রাত, বেহালার সুরে । সি. এল. এফের সল্প আলোয় দেখলো, জানালার ধারে হাতল ভাঙা চেয়ারে বসে ধ্যানস্থ সুরের প্রতিমূর্ত রাখাল গোমস । বাক রুদ্ধ হয়ে যায় কাজল, এতদিন তাকে সামান্য রুক্সাওয়ালা বলেই জেনে এসেছে, তার একি রূপ !! পায়ে পায়ে বাড়ি ফিরে এলো কাজল । পরের দিন কাজে ফাঁক পড়েনি রাখালের, সে তার নিয়ম মত রিক্সার হর্ন বাজিয়ে বসে রইলো সীটের উপর । কিন্তু কাজল এলো না, এলো কাজলের কাজের মাসি । রাখালকে ডেকে নিয়ে গেলো কাজলের ফ্ল্যাটে । কাজল অনেকক্ষণ রাখালকে বসিয়ে রাখলো তার সামনে । রাখাল ভেবে পেলোনা দিদিমণি কি মুডে আছে, তাকে এখনোও ডাকেনি নাম ধরে । কিছুক্ষণ পর সব স্তব্ধতা কাটিয়ে, অবিবাহিতা, বয়স্কা কাজল বলে ওঠে -- কিরে,,, পারিসনা আমাকে মা বলে ভাবতে ? স্তম্ভিত রাখাল!! নীল চোখের কোণে একটা আস্ত সরোবর টলটল করে নতুন প্রাপ্তির আনন্দে, হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে রাখাল । কাজল বলে,- কাঁদিস না বাবা, আমি আছিতো, তোর মা । আমিই তোকে পাঠাবো তোর বাবার কাছে । রাখাল বলে, -- মা পেয়েছি দিদিমণি, বাবা থাকনা তার দেশে । কাজল বলে -- উহু দিদিমণি না, এবার থেকে শুধু মা ।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours