আচ্ছা এই 'রোড শো'-এর ব্যাপারটা কী?
মাথার ওপর দাউদাউ দিবাকর, নীচে দলবল।
আগে পালের গোদা। পেছনে পাল।
ভোটের বাদ্যি বাজলেই হলো।
নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে রাজনৈতিক 'রোডশো'।
শেষ মুহূর্তে কেন?
ওই তো মশাই পাবলিক। আজকের কথা কাল ভুলে মেরে দেয়। সেই কবেই তো কবিগুরু গেয়েছিলেন- মনে রবে কিনা রবে আমারে! তারপর ওই যে "তবু মনে রেখ"!
তাই আর কী, রোডশো একেবারে শেষ মুহূর্তেই ভাল।
নামে কাঠফাটা, কিন্তু ফাটে অনেক কিছুই, যা বিভৎস রোদ। নেতা/নেত্রীর, দলবল নিয়ে পদযাত্রা। হাতজোড় নেতা/নেত্রীর। বিনয়ের অবতার। অধরে স্মিত হাস্য। তিনশো ষাট ডিগ্রি ঘোরে না মানুষের মাথা। তাই একশো আশি ডিগ্রিতেই সন্তুষ্টি।
জোড়হাত নেতা/নেত্রী একবার ডান, পরমুহূর্তেই বাম দিকে একশো আশি ডিগ্রি কভার করে, হাসিপ্রসাদ বিলোন। আর হনহন করে এগিয়ে চলেন পিচঢালা রাস্তায়।
সূয্যিদেবের বাপের সাধ্য কি, যাত্রাভঙ্গ করে!
এরেই কয় প্যাশন।
এত খেটেখুটে তবেই দুটো পয়সা রোজগার নেতা/নেত্রীর। সাতমহলার নিরাপত্তা আশ্রয়। কমপক্ষে তিনচার পুরুষের অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা।
আর পাবলিক তো মশাই ভাতঘুম সেরে ক্যালানি মুখে ভিড় করে তামাশা দেখে। তারপর চপমুড়ি গিলতে বসে। তাও নেতা/নেত্রীদের দেখে চোখ টাটানি।
যাই হোক, শো যখন হবে, তা হবে ভিড়ঠাসা রাস্তাতেই। চুলোয় যাক শহরের স্বাভাবিক গতি। আটকে থাকুক মরণাপন্ন রোগি অ্যামবুলেনসে। বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থত্যাগ। বাসে গাড়িতে বসে যাত্রীরা কুলুকুলু ঘামুন। এক ঘণ্টার রাস্তা পেরোন তিন ঘণ্টায়।
রাস্তা তখন পথিকের না। রাস্তা জগন্নাথদেবের। রাস্তা নেতা/নেত্রীর। রাস্তা দলবলের।
জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। ভক্তদের দর্শন দিতে প্রভু নেমে আসেন রাস্তাতে। বছরে একবার। মন্দিরের বিলাস- ব্যাসন, নিভৃত আশ্রয় ছেড়ে একেবারে নীল আকাশের নীচে।
প্রভু জগন্নাথদেবের সেই অ্যানুয়াল রথযাত্রাই কী অনুপ্রেরণা, দেশের রাজনৈতিক প্রভুদের রোড শোয়ের?
হতে পারে। কারণ, ধর্ম রাজনীতি এখন ঘেঁটেঘুঁটে একাকার। রীতিমত প্রতিদ্বন্দিতা চলেছে ধর্মজ্ঞানের। গাধিঁ মার্কস আজ বলতে গেলে ব্রাত্য।
জগন্নাথদেবই অনুপ্রেরণা রোড শোর। নইলে অন্যান্য দেবদেবীরা বিদায় লগ্নেই রোড শো করেন। বিসর্জনের ঘণ্টা বাজলেই রোডশো। আবার এসো মা।
নেতা/নেত্রীরাও অবশ্য তাই। বিদায়বেলায় রোডশো করে প্রত্যাবর্তন সুনিশ্চিত করতে চান। সেই জগন্নাথদেবের পরকাষ্ঠা হয়েই পথে নেমে পড়েন নেতা/নেত্রীরা।
তাঁর গা-ঘেঁষে পা মেলান দলের কয়েকজন। ঠিক যেন রথের ওপর জগন্নাথদেবের পাহারায় বসে থাকা পূজারির দল। হাবভাবে তাঁরাও নেতা/নেত্রীর থেকে কম যান না।
এমনি করেই এগিয়ে যায় রোড শো।
পথ ভাবে আমি দেব
রথ ভাবে আমি
মূর্তি ভাবে আমি দেব
হাসেন অন্তর্যামী.....
Post A Comment:
0 comments so far,add yours