বিজন কুমার সরকার, সিনিওর জার্নালিস্ট, দিল্লিঃ দেশের
শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রে বর্তমান কায়েমি শাসক হয়েই শুধু সন্তুষ্ট থাকতে চায় না বিজেপি। ভারতের এই দক্ষিণপন্থী দলটির মনষ্কামনায় রয়েছে এক সুদূর প্রয়াসী লক্ষ্য। তাই গৈরিক পার্টি নিঃশব্দে রচনা করে চলেছে এক রাজনৈতিক গভীর চিন্তন। যে চিন্তনের অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়ার হর্স পাওয়ার হবে আপাতত পনেরো থেকে কুড়ি বছর লম্বিত। আর সেই যজ্ঞের নির্ভরযোগ্য উত্তরসুরী সাধক যে নির্দ্ধিয়ায় একজনই। তিনি অমিত শাহ। যিনি বর্তমান বিজেপির সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি। দিল্লির ক্ষমতাকরণ নামক মাকড়সার জালের যাঁরা পাটিগণিত নিয়মিত কষে থাকেন তাঁরা ক্রমেই এই ধরণায় অনেকটা বদ্ধমূল হয়ে যাচ্ছেন। কারণ ইতিমধ্যেই সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের পর কেন্দ্রে বিজেপি সরকার অনেকটা নীরবেই এক বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পদে অভিষিক্ত হলেন অমিত শাহ। পূর্বসূরী রাজনাথ সিং আপাৎকালীন অসন্তুষ্ট হলেও তাঁকে সীমান্ত পাহাড়ার দায়িত্বে কিভাবেই না পাঠানো হল তাও কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের নজর এড়ায়নি। আর এই অমিত অভিষেক থেকেই সুচনা হয়ে গেল এক গেরুয়া ব্লুপ্রিন্টের ভিত্তিপ্রস্থর। লক্ষনীয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই একদা ঘোষণা করেছেন, দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসনে অক্সিজেনে ঘাটতি যাতে না পড়ে তার জন্য ৭৫ বছরের উর্ধে কারও প্রধানমন্ত্রী থাকা উচিৎ নয়। আর সেটাই যদি মান্যতার মাইলস্টোন ধরা হয় তবে তাঁর নিজের যা বয়স তাতে পরবর্তী নির্বাচনে ফের বিজেপি জিতলেও তৃতীবারের পূর্ণ ইনিংস তাঁর পক্ষে ব্যাটিং করা অসম্ভব। তাহলে তখন লোক হাসানো নাইট ওয়াচম্যান খুঁজে কি লাভ? তাই সেই শূন্যতা ভরাটের উদ্দেশ্যে বিজেপি শিবির এখন থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর আসনটিকে ঘিরে। কারণ সাধারন পর্যায়ে ক্ষমতায়নের প্রোটোকলে প্রধানমন্ত্রীর পদের পরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মান্যতা গণতান্ত্রিক ভারতে। আসলে অমিত শাহকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আসনে বসিয়ে বিজেপি এই বার্তাই রাজনৈতিক মহলের অলিন্দে এখনই সতর্পণে ছড়িয়ে দিল আগামী অষ্টদশ নির্বাচনে তাঁদের দলের প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী বিজেপির বর্তমান সভাপতিই। এমনিতেই অমিত শাহ বয়সে যথেষ্ট তরুন। বিজেপি আড়ে বহড়ে ভারতের সবচেয়ে বড় দল। এমনকি পৃথিবীর মধ্যে সর্ব বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিজেপি আজ পরিগণিত সারা বিশ্বের কাছে। এমন একটি বিশাল ব্যপ্তি দলের নিরঙ্কুশ রাশ কিন্তু পুরোপুরি তাঁরই মুঠোয় এখনও পর্যন্ত।
এযাবৎ তাঁর নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার মতো দলে অভ্যন্তরে কোনও পরিস্থিতি সেভাবে দানা বাঁধতে পারেনি। এমনকি তাঁর ঘোষিত সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের মধ্যে ফিসফাসও করার পরিবেশ পরিলক্ষিত হয়নি। এহেন চাণক্যকে ঘিরে তাই বিজেপি এখন থেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছে ভারত শাসনের এক দীর্ঘ মেয়াদি আগাম ইনিংস খেলার। যেখানে ব্যাট ও বোলিং করার এমন অলরাউন্ডার আর দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব কেই বা থাকতে পারে? রাজনৈতিক গেরুয়া পিচে সেই অলরাউন্ডার যে অমিত শাহ তা নিয়ে এই মূহুর্তে কোনও দ্বিমত নেই সঙ্ঘ শিবিরেও। রাজনৈতিক বৃত্তে তাঁর অতি বড় সমালোচকেরাও মানেন আবডালে, বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার ও গেরুয়া দলের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমন্বয়কারী ক্ষমতায়ন ভড় কেন্দ্রের একটি মাত্র নাম হল অমিত শাহ। এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও গুডবুকে রয়েছেন তাঁর পছন্দের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাই দলের কঠিনতম নিয়ম হিমঘরে পাঠিয়ে দিয়ে অমিত শাহ একাধারে শপথ বাক্য পাঠ করলেন দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পদের। তেমনি রয়েও গেলেন ব্যতিক্রমী ভাবে দলের সভাপতি পদেও। এমনকি গোঁড়ামির দেওয়াল ভেঙ্গে আরএসএসও এই অমিত বিক্রমের মান্যতায় শিলমোহর দিতে বাধ্য হল নরেন্দ্র মোদীর আগাম শূণ্যতা পূরণের স্বার্থে। সুতরাং এই মূহুর্তের ডিফ্যাক্টো পিএম অমিত শাহ আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বাজির বাজিগড় তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours