বাঙালীর চিরকাল বদনাম ঘরকুনো বলে। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে সেই বদনাম ঘুচেছে এখন। শিক্ষিত যুব সমাজ আর নিজেদের দেশের চৌহদ্দির মধ্যে আটকে না থেকে বেরিয়ে পরছে দেশান্তরে।তাদের পৃথিবী আর আটকা পরে নেই ভারতের মধ্যে।
জন্মভূমি আর কর্মভূমি আমারও আলাদা হয়ে গেছে প্রায় ১০ বছর হতে চলল।যখন বিদেশে আসার সুযোগ এল অজানা আনন্দে মন নেচে উঠল। দারুণ উত্তেজনা। নতুন একটি দেশকে খুব কাছ থেকে দেখা আর জানার আগ্রহে মন ব্যকুল। অবশেষে দেশের পাততাড়ি গুটিয়ে রওনা হলাম অজানার উদ্দেশে।
দেশের নাম কাতার। ছোট্টো নাম ছোট্টো দেশ।১১,৪৩৭ কিমির দেশে লোক সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ ৫০০ জনের মতন। এর ১৫ শতাংশ কাতারি আর বাদবাকি ৮৫ শতাংশই বিদেশি। মোট ৮৬ টি দেশের নাগরিকের রুজিরুটির আস্হানা কাতার। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ কাতারের GDP জন প্রতি ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ডলার।
কাতারের অর্থনীতি নির্ভর করে গ্যাস এবং তেলের ওপর। আরব সাগর পারের এই দেশটি রাজতন্ত্র দ্বারা শাষিত। মহামান্য রাজা তামিম বিন আহমদ আল থানি বিদেশে তাঁর পড়াশুনা শেষ করে দেশের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেন। উন্নত ও উদার মানসিকতার সুশাসক তিনি। গত ১০ বছরে অনেক পরিবর্তনের সাক্ষী হলাম আমি।
কাতারের মাটিতে পা রেখেই মনে হল এত কম লোক কেন এখানে! ঝা চকচকে রাস্তা। শুধু বড় বড় গাড়ি চোখের সামনে দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। ঝলমল করছে হাইরাইজ বিল্ডিং। চোখধাঁধানো শপিংমল। ঠিক যেন সপ্নের মতন। আমাদের বাংলা থেকে একদম আলাদা। ভিন্ন জগত ভিন্ন কালচার। কত দেশের কত লোক আর কত ভাষা তাদের। তবে কথোপকথনের ভাষা মূলত ইংরাজি এবং আরবি।
কাতারের অপরাধের পরিমান অন্যান্য দেশের তুলনায় নগন্য। তার বড় কারন এই দেশের কড়া বিচারব্যবস্থা। এই দেশে সবচেয়ে বেশি ফিলিপিনসের লোক কাজের সন্ধানে আসে। আর চোখে পরে বাংলাদেশিদের উপস্হিতি। ইউরোপিয়ানরাও পিছিয়ে নেই এই দৌড়ে। সুরক্ষিত দেশের সুরক্ষা কবচ কে না চায়!
দেশটা রাজতন্ত্র হলে কি হবে রাজামশাই কিন্তু মর্ডান। ছোটোবলার রুপকথার গল্পের মুকুট পরা হাতে তলোয়ার নেওয়া ইয়া লম্বা গোঁফওয়ালা মানুষ মোটেই নন। হাসিখুশি উচ্চ শিক্ষিত খেলা পাগল একজন মানুষ।২০০৬ সালের এশিয়ান গেমসের আগে কাতারের নাম হয়তো অনেকেই শোনেন নি। আর আজ গোটা বিশ্ব কাতার কে চেনে ২০২২ সালে বিশ্বকাপের হোস্টিং দেশ বলে। কিন্তু তার আগেও কাতারকে লোকে চেনে আলজাজিরা নিউজ চ্যানেলের জন্য । যারা সর্বপ্রথম ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার সম্প্রচারন করে।
কাতার মুসলিম দেশ হলেও ধর্মের বাড়াবাড়ি চোখে পরে না তেমন। তবে রমজান মাসটা খুব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন এরা। সেই সময় দৈনন্দিন রুটিন গুলোও বদলে যায়। ৫ ওয়াক্তের নামাজ পড়ে সন্ধ্যার ইফতারের পর কাজ শুরু হয় এখানে। কাতারের সব বাসিন্দাই খুব আনন্দের সঙ্গে এই নিয়ম পালন করেন।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় কাতার অনেক বেশি প্রগতিশীল। সরকারি সব বিভাগ গুলোতে কাতারি মহিলাদের উপস্হিতি বিশেষ ভাবে চোখে পরে। মহিলারা নিজেদের ঘর-সংসারের মধ্যে বদ্ধ করে রাখেননি। শিক্ষা সংস্কৃতি এবং জীবিকার ক্ষেত্রেও অনেক দেশের থেকে এগিয়ে রয়েছেন তাঁরা।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours