News
কাজল ভট্টাচার্য, বরিষ্ট সাংবাদিক, কলকাতা: (দেশ সেবা করতে কী বাঁধভাঙা উৎসাহ নেতা-নেত্রীদের। উন্নয়ন, সুশাসনের গ্যারান্টি। জনদরদী এই নেতারা একবারও মুখ খোলেন না এই হাই ভোল্টেজ ধর্ষণ প্রসঙ্গে। রাজনীতির প্রভুদের এই আশ্চর্য নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন প্রতিবেদক) ।
দেশের আর  একটি মেয়েও ধর্ষিতা হবে না। 
একবারও তো বুক চাপড়ে এই প্রতিশ্রুতি কেউ দিলেন না। আর দেবেনই বা কেন? 
ধর্ষণ তো ভোটবাজারে কোনও ইস্যু না। নইলে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে কিশোরী মণিকা মাহাতর অপহরণ, গণধর্ষণ, খুনের ঘটনায় তোলপাড় হয়ে যেতে পারত রাজ্য-রাজনীতি। 
ভোট বয়কটের অবশ্য ডাক দিয়েছিল জনসাধারণ।  সুশাসন উন্নয়নের হাজারো প্রতিশ্রুতি ভোটবাজারে। 
কিন্তু নরেন্দ্রমোদিহোক বা রাহুল গাঁধি, কেউ একবারও তো ধর্ষণমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার করলেন না! বললেন না, আর একটিও নির্ভয়া হবে না। হবে না সুজেট। 
মণিকা মাহাতরা নির্ভয়ে টিউশন পড়তে যাবে। বেটি বচাও বেটি পড়াও। কন্যাশ্রী। এরকম প্রকল্প করেই দায় ঝেড়ে ফেলেছেন রাজনীতির প্রভুরা। আদলগুলি, যাঁরা দিল্লির মসনদে বসার জোরস্বপ্ন দেখছেন। তাঁরাও অন্যান্য হাজারো ইস্যু নিয়ে বাজার গরম করলেন। কড়া মোদি বিরোধিতা করলেন। প্রতিশ্রুতি বিলোলেন সুশাসনের। কিন্তু ধর্ষনমুক্ত সমাজ গড়া তো নিশ্চিত ভাবেই সুশাসনের মধ্যেই পড়ে। তবে এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ কোন যুক্তিতে? নাকি ধর্ষণ নিয়ে বেশি নাড়াঘাঁটা করতে গেলে বিপদ। কেঁচো খুড়তে বেরিয়ে আসতে পারে সাপ। ঠিক যেমন "#মি2" এর দৌলতে ফাঁস হয়ে যেতে বসেছিল গণমান্যদের নারীশরীর লোভী ক্লিনশেভড চেহারাটা। দেশে এক বছরে ঠিক কজন মেয়ে ধর্ষকের শিকার হতে পারেন? সংখ্যাটা শুনলে যে কোনও সভ্য মানুষের মাথা ঘুরে যাবে। চব্বিশ হাজার ন'শো তেইশজন। তবে হিসেবটা খানিক পুরনো। 2012 সালের। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যূরোর এক পরিসংখ্যান এই হিসেব দিচ্ছে। তবে বাস্তবে এই সংখ্যা তো হিমশৈলের চূড়ামাত্র। কেন? আরেকটু পিছোই। মোট একশোটা রেপের ঘটনার মধ্যে একাত্তরটাই অজানা থেকে যায়। জানিয়েছে 2006 সালের ব্যূরো রিপোর্ট। সাল তারিখের হিসেবে স্পষ্ট, রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল 'অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইমিনিস্টার' মনমোহন সিং জমানায়। কংগ্রেসকে তুলোধনা করতে মোদিজি, অমিত শাহজি একবারও ওই পরিসংখ্যান তুলে ধরলেন নাতো? মনে আছে তো নির্ভয়াকে? 2012 সালের সেই তোলপাড় করা গ্যাংরেপের ঘটনা। রাজা-বাদশাহদের মহানগর দিল্লির রাজপথেই লম্পটদের হাতে শুধু ধর্ষিতাই না, নারকীয় যৌন অত্যাচারে প্রাণ গেছিল সেই মেয়ের। মোদি, রাহুল, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দিল্লির হালটা একবার শুনবেন? তাঁদের নাকের ডগাতেই গড়পরতার হিসেবে রোজ পাঁচটি যৌন নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। 2018 সালের মে মাস পর্যন্ত সাতশো আশিটা ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল, দিল্লি পুলিশের রিপোর্ট। এদিকে বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও, কন্যাশ্রী নিয়ে কিন্তু অবিরাম ঢাক পেটানো চলেছে। কিন্তু সেই বেটিদের হাল কী? প্রতি পনেরো মিনিটে দেশের একটি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, খবর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা CRY এর। আর ওই সংখ্যা বেড়ে চলেছে ঝড়ের গতিতে। পাটিগনিতের হিসেবে গত দশ বছরে ওই সংখ্যা বেড়েছে শতকরা পাঁচশো ভাগ। বান্দোয়ানের ক্লাস টুয়েলভের ছাত্রী মণিকার গণধর্ষণ, খুনের ঘটনা চাপা পড়ে গেল নির্বাচনী রাজনীতির খেয়োখেয়িতে। কলকাতার সুজেট, কামদুনি, মধ্যমগ্রামের সেই ধর্ষিতারা তো এখন ইতিহাসের পাতায়। শাসক, বিরোধী, সবাই চুপ। কোথায় গেলেন মুখর নারীবাদীরা? তাঁদেরও মুখে কুলুপ। ধর্ষন কি তাহলে "ও তো একটা ছোটখাট বিক্ষিপ্ত ঘটনা"? এমনটাই তো শুনি। বেশ কতোই না ফাইলপত্র ঘেঁটে হাতের চেটোতে কড়া পড়ে গেল রাহুলজির। 'চৌকিদার চোর হ্যায়' বলতে বলতে, ফেঁসে গেল গলা। পাল্টা চালে রাহুলজির তিন পুরুষের ঠিকুজি কোষ্ঠি ঘেঁটে কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির ইতিহাস হাজির করলেন মোদিজি, অমিতজি। নির্ভয়ার প্রসঙ্গ উঠলো না কেন মোদিজি? সেও তো ছিল মনমোহন সরকারের অপশাসনের এক চরম নিদর্শন। এই রাজধানীর বুকেই তো ধর্ষণ করা হয়েছিল এক আট মাসের শিশুকে। আর রাহুলজি আপনিই বা কী বলেন? রাফেল ইস্যুটাই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ আপনার কাছে ? ধম্ম-কম্ম, মন্দির, ভ্রষ্টাচার, কৃষক সবকিছু নিয়ে আপনি কতই না সোচ্চার হলেন। শুধু বাদ পড়ল ধর্ষণপ্রসঙ্গ। মানবদরদী মানবাধিকারের দাপুটেরাই বা এই সময়টাকে হাতছাড়া করেন কেন? নাকি তাঁরাও নির্বাচনী যোগনিদ্রায় গিয়াছেন। নারীমুক্তি, নারীর অধিকার নিয়ে যাঁরা হামেশাই সোচ্চার হন, সেই নারীবাদিরাই বা এই স্বর্ণসুযোগ হাতছাড়া করেন কেন?  তাহলে কি শাসকদলকে ভজতে গিয়ে মুখেকুলুপ এঁটেছেন সবাই? "রাজা তুমি ল্যাংটো!" বলার স্পর্ধা রাখে না কেউ। অলক্ষ্যে থেকে হাসছেন নির্ভয়া সুজেটরা। উন্নয়ন, রাজধর্ম, কন্যাশ্রী, বেটি বাঁচাওয়ের গালভরা বুলি শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে মণিকা, তাপসী মলিক, কামদুনির সেই ধর্ষিতারা। আমাদের কানে সেই অট্টহাস্য পৌঁছয় না। "সবাই চোপ। ভোটরঙ্গ চলছে।" মঞ্চে মঞ্চে দাপটে অভিনয় করে গেলেন রাজনীতির কুশীলবরা। দিল্লির মসনদে এবার নতুন সরকার। কে বলবেন- ফিরে আয় নির্ভয়া ? কাম অন সুজেট ।।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours