Fuchka walar chele
সঞ্জয় সরকার, বিষ্ণুপুরঃ দারিদ্রর সঙ্গে শিক্ষার লড়াইটা বড্ড কঠিন এবং অসমও বটে। শোনা যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছটবেলায় তাঁর বাবার সঙ্গে স্টেশনে চা বিক্রি করে পড়াশোনা করেছেন। এ ছেলের কাহিনিও অনেকটা তাই। দরিদ্র ঘরে জন্ম। তাই দারিদ্র দেখেই বড় হয়েছে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় অদম্য ইচ্ছা ওঁকে তাড়া করে নিয়ে গিয়েছে। তাই স্কুল থেকে ফিরে বাবার সঙ্গে গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে ফুচকা বিক্রি করেও রাতে পড়াশোনা করে এবার মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। যে পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেই ঘরের ছেলের পড়ার ইচ্ছে থাকলেও ভাল টিউশন নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না। তাই স্কুলে টিফিনের সময় না পারা পড়া বুঝে নিত স্কুলের শিক্ষকদের কাছে। এভাবেই মাধ্যমিকের চৌকাঠ পেরল বাঁকুড়ার পাত্রসায়র থানার কুশুদ্বীপ পঞ্চায়েতের মাঞ্চা গ্রামের ছেলে সৌভিক দাঁ। বাবা অমিত দাঁ সামান্য ফুচকা বিক্রেতা। দিদি রিয়া দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। মাঞ্চা গ্রামে মাটির বাড়ির একটি মাত্র ঘরে বাবা মা ও দিদির সঙ্গে বড় হয়ে উঠেছে সৌভিক। দারিদ্রর সঙ্গে লড়াই করেও এবার মাধ্যমিকে ৬২৬ নম্বর পেয়ে স্কুলের নাম উজ্জল করল সৌভিক। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ছাত্রকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত কুশুদ্বীপ মাখনলাল বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক শ্যামল দাস। তিনি বলেন ‘সৌভিকের বাবা ফুচকা বিক্রি করে সংসার চালান। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে সৌভিক ওর বাবার সঙ্গে ফুচকা বিক্রি করতে যায়। তার মধ্যেও পড়াশোনা করে এবার মাধ্যমিকে স্কুলের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। আমাদের স্কুলের গর্ব সৌভিক। উচ্চমাধ্যমিক পড়ার জন্য আমাদের স্কুলেই ওকে ভরতি করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ওঁর পড়ার বিষয়ে সরকারি সাহায্য পাওয়ার জন্যে’। সৌভিক জানায় ওর মামা পেশায় জয়পুরের একটি হোটেল কর্মী কার্তিক দত্ত ওকে পড়ানোর জন্য নিয়মিত অর্থিক সহায়তা করেছেন। সেই টাকায় তিন জন শিক্ষকের কাছে আলাদা ভাবে পড়তে পেরেছে। তবে ওঁদের অবস্থার কথা জেনে ওই শিক্ষকরা নামে মাত্র টাকা নিতেন। এবারের মাধ্যমিকে সৌভিক অংকে ৯৯ পেয়েছে। বিজ্ঞানের বাকি বিভাগ গুলিও নব্বইয়ের ঘরে। অংক ভাল লাগায় সৌভিক বড় হয়ে অংকের শিক্ষক হতে চায়। পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল আর গল্পের বইয়ে মন পড়ে থাকে ওঁর। তাও আবার মাইকেল বা সুকান্ততে। সৌভিক বলে ‘মাইকেল মধুসূদন দত্তর বই পড়তে ভাল লাগে। সুকান্তর কবিতাও আমার খুব প্রিয়। সময় পেলেই আমি স্কুলের লাইব্রেরীতে গিয়ে এই বইগুলি পড়ি’। অমিতবাবু সকালে থেকে নিজেই বাড়িতে বসে ফুচকা ভাজেন। বিকালে ছেলে স্কুল থেকে ফিরলে বাপ-ছেলেতে মিলে মাঞ্চা, কুশুদ্বীপ সহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে ঘুরে ফুচকা বিক্রি করে রাতে বাড়ি ফেরেন। সৌভিক বলে ‘বাবার একার পক্ষে এত দূরে ঘুরে ফুচকা বিক্রি করতে কষ্ট হয়। তাই আমি বাবার সঙ্গে যাই। তাতে বাবার কিছুটা সুবিধা হয়’। এখন তো পড়ার চাপ আরও বাড়বে এখন কী বাবার সঙ্গে যাওয়াটা বন্ধ থাকবে? সৌভিক বলে ‘বাবার বয়স হচ্ছে। দিদির এখনও বিয়ে হয়নি। তাই আমাকে সংসারের দায়িত্ব নিতে হবে। এখনও বাবার সঙ্গে বেরবো। তবে পড়াশোনাতেও জোর দেব। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন করে উচ্চমাধ্যমিকে আরও ভাল রেজাল্ট করবো’।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours