সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজঃ
উপাখ্যান কি শুধুই কাগজের বইয়েই সীমাবদ্ধ? হয়তো না। কারণ রিংকির মতো মানুষেরা যে নিজেই জীবনলব্ধ উপাখ্যান হয়ে ওঠে। তারা পালটে দেয় পুস্তক সীমান্তের সাদা কালো কল্পিত লাইনগুলো। তারা নিজেই হয়ে ওঠে গতিশীল জীবনের একেকটা লড়াইয়ের নতুন উপাখ্যান।
শিলিগুড়ির ইস্টার্ণ বাইপাসের মাঝাবাড়িতে থাকে এই জীবন উপাখ্যানের নায়িকা রিংকি। আক্ষরিক অর্থে রিংকি দাস। এই অখ্যাত সরণিতেই তার বসবাস। বাবা সামান্য ডেকরেটর মিস্ত্রি। নাম প্রভাস দাস। মা কল্যাণীদেবী পরিচারিকার কাজ করেন স্থানীয় এলাকায়। দারিদ্রতা যেন অক্টোপাসের কামড়ের মতোই নিত্য বন্ধন। আর্থিক মন্দার জরাজীর্ণ অভিশাপের অন্দরমহলে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো রিংকি জন্মাবধি বেড়ে উঠেছে শারিরিক প্রতিবন্ধীকতাকে সাক্ষী রেখেই।
বর্তমানে তার বয়স কুড়ি ছুঁই ছুঁই। একটিও দাঁত গজায়নি এখনও। শুধুই কি তাই? দুটি পা লম্বায় ছয় ইঞ্চি থেকেও কম। কি অমানুষিক কষ্টকে অবলম্বন করেই না অপুষ্ট পা নিয়ে সে চলাফেরা করে এদিক ওদিক। আবার তার শারীরিক উচ্চতাও স্বাভাবিক নয়। মেরে কেটে মাত্র দেড় ফুট। তবু এই পৃথিবীতে রিংকি বেঁচে আছে নিজস্ব অহংকারে, স্বীয় দৃষ্টান্তে। বেঁচে থাকার এত বিরুদ্ধতার সম্মুখিন হয়েও হেরে যেতে শেখেনি রিংকি।
সে নাচতে জানে। ছবি আঁকতে জানে। সমস্ত জড়তা কাটিয়ে সে এখন স্কুলে যায়। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। চোখে তার স্বপ্ন, একদিন সে শিক্ষিত হবেই। অন্যের অনুকম্পাকে বিসর্জন দিয়ে শিক্ষার আবহে সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। ছবি আঁকাতে সে যে এলাকার সেরা। ছবি প্রতিযোগিতায় কত পুরস্কারই না তার ঝুলিতে। প্রকৃতির খেয়ালে প্রতিবন্ধকতার ঝুলিতে তার শরীর অপুর্ণ ঠিক। কিন্তু নিজস্ব খেয়ালে রিংকির জীবন ঝুলিতে অপূর্ণতা নেই। সেখানে আছে লড়াই, সংগ্রাম, শিল্পসত্ত্বা ও শিক্ষার ইপ্সা-আলো।
তাই রিংকির মা বলতে পারেন, ‘কে বললো আমার মেয়ে প্রতিবন্ধী? আমার রিংকি যে নিজেই একটা জীবন।



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours