সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজঃ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের নাম যে ভারতবর্ষ তা সারা বিশ্বের মান্যতা পেয়েছে গভীর ভাবেই। কিন্তু এই মান্যতার এমনি মেলেনি। এই দেশে একটি ভোটেরও যে কত গুরুত্ব তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে অন্যান্য বারের মতো এবারেরও সবার নজর কিন্তু গুজরাটের গির জঙ্গলের বানেজ পোলিং স্টেশনের দিকে। কেন? কেনর উত্তরেই লুকিয়ে আছে ভারতীয় গণতন্ত্রের এক ধারাবাহিক গৌরবগাথা। এই পোলিং বুথ এই কারনেই সমগ্র দুনিয়ার কাছে চর্চার বিষয়, আসলে এখানে ভোটদাতার সংখ্যা মাত্র একজন। গভীর অরণ্যে মাত্র একজন ভোটার অথচ তার ভোটগ্রহণের জন্য পাঁচজন পোলিং অফিসার দুই পুলিশকর্মী নিয়োগ করে দেশের নির্বাচন কমিশন। প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এই ভোটকর্মীরা ও পুলিশেরা জুনাগাধ জেলার এই গহন জঙ্গলে আসেন। আর এখানেই যে ভারতীয় গণতন্ত্রের অপার বৈচিত্র। একটি মাত্র বিশালাকার গভীর বনাঞ্চল। সেখানে বসবাস করেন শুধু একজন মাত্র বৃদ্ধ মানুষ। দেশের নির্বাচনের একটি মাত্র ভোটাধিকার প্রয়োগের ঈপ্সা। আর সেখানেই প্রতিবারই আয়োজিত হয় সুষ্ঠ ও অবাধ নির্বাচন। সত্য সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ! তাই না?
গুজরাটের এই গভীর অরণ্যে রয়ে গিয়েছে এক শিবের মন্দির। সেই মন্দিরের নিত্য উপাসনায় যুক্ত পুরোহিত ভারতদাস দর্শনদাস। বহুজনেই তাঁকে গুরুজী বলেও সম্বোধন করে থাকেন। এই জঙ্গলের আয়তন ১,৪১২ বর্গ কিলোমিটার। এখানকার মাটির রঙ অনেকটা কালচে খয়েরি। সেখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে একটি নদী। এমন কি সেই জঙ্গলে উন্মুক্ত ভাবেই বিচরণ করে আনুমানিক ৩০০ টি সিংহ। এছাড়া বুনো মোষ, ময়ূর, হরিণ তো সেখানে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে থাকেই। এমনই শাপদ অরণ্যে ভারতদাস দর্শণদাস একা থাকতে ভয় পান না মোটেও। তাঁর মতে শিবের এই মন্দিরে যখন থাকেন স্বয়ং ভোলানাথ তাঁকে রক্ষা করে থাকেন। বছর ৬০ এর এই গুরুজী সর্বদা চোখে একটি চশমা ব্যবহার করে থাকেন। গায়ে থাকে খদ্দরের পোষাক। দীর্ঘ বারো বছর যাবৎ তিনি এই মন্দিরে পুজোর দায়িত্ব সামলে চলেছেন একক ভাবেই।
গুরুজী কিন্তু বেজায় খুশি। কারণ তাঁর জন্য দেশের নির্বাচন কমিশন এখানে একটি নির্বাচন বুথের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তিনিও সগৌরবে ভোট দেন নিবিহ্নে তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে। ভারতদাস দর্শনদাস নিজেই বলেন, “আমি স্নান সেরে পুজো সম্পন্ন করে প্রাতঃরাশ শেষ করি। তারপর বেলা এগারোটা নাগাদ ভোট দিতে যাই।” তিনি এও বিলক্ষণ জানেন, সংসদে অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকার পড়ে গিয়েছিল একটি মাত্র ভোটের কারণে। তিনি তাই বলেন, “আমি জানি গণতন্ত্রে একটি ভোটের গুরুত্ব কতখানি। আমি ভোট দিতে পেরে সম্মানিত। একমাত্র ভারতই দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে তার গণতন্ত্র কত মাধুর্যময়।”
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours