সোমনাথ রায়, প্রত্নগবেষক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, দুর্গাপুর:

হরিয়ানা বিধানসভার অধ্যক্ষ গিয়ান চাঁদ গুপ্ত এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রী কমল গুপ্ত সম্প্রতি হরিয়ানার হিসার জেলার অগ্রোহা প্রত্নস্থানে একটি ‘গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার’ বা জিপিআর সমীক্ষার উদ্বোধন করেছেন। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অভ ইন্ডিয়া (এএসআই) এবং হরিয়ানা আর্কিওলজি ও ম্যুজিয়াম ডিপার্টমেন্টের যৌথ উদ্যোগে এই প্রত্নস্থলটির উন্নতিকল্পে যে বৃহত্তর পরিকল্পনা করা হয়েছে এই সমীক্ষা তারই একটি অংশ। অগ্রোহায় সর্বশেষ খননকালে (১৯৭৮-৮১) একটি প্রাচীন সভ্যতার সন্ধান পাওয়া যায় এবং বর্তমানে এই জিপিআর সমীক্ষার লক্ষ্য ভূগর্ভস্থ স্থাপত্য শনাক্ত করা। এএসআই এবং হরিয়ানা সরকারের চুক্তির লক্ষ্য হলো অগ্রোহা প্রত্নস্থলের গুরুত্ব বৃদ্ধি করা। 

জিপিআর সার্ভে হল একটি ভূ-পদার্থগত পদ্ধতি যা ভূগর্ভস্থ স্তরগুলির গঠন এবং প্রোথিত স্থাপত্য সনাক্ত করতে সাহায্য করে। জরিপ শেষ হলে, অগ্রোহা প্রত্নস্থলে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলি সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।  

হরিয়ানার হিসার জেলায় আদমপুর তহসিলে হিসার থেকে ফতেহাবাদের দিকে ২২ কিমি দূরে ১০ নং জাতীয় সড়কের ধারে আগরোহা গ্রামে অগ্রোহাদের প্রাচীন প্রত্নস্থল ‘অগ্রোহার প্রাচীন ঢিবি’ অবস্থিত। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দী থেকে ১৪শ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এখানে মানুষের বসবাস ছিল।

পরম্পরাগত ভাবে অগ্রোহা প্রত্নস্থলটি অগ্রবাল সম্প্রদায়ের কিংবদন্তী রাজা মহারাজা অগ্রসেনের রাজধানী বলে অনুমান করা হয়। তক্ষশীলা ও মথুরার মধ্যবর্তী প্রাচীন বাণিজ্য পথে অগ্রোহা শহরটি অবস্থিত ছিল। ফিরোজ শাহ তুঘলগের হিসার-ই-ফিরোজা (হিসার) নামে একটি নতুন জনপদ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত অগ্রোহা বাণিজ্য এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল।

অগ্রোহা প্রত্নস্থল থেকে ৪টি ইন্দো-গ্রীক, একটি পাঞ্চ-মার্কড এবং আরও ৫১টি এগ্রোডাকার মুদ্রার একটি ভান্ডার পাওয়া গেছে। খননের সময় আগ্রেয় জনপদের (প্রজাতন্ত্র) মুদ্রার আবিষ্কার এবং সাহিত্যে এর প্রাচীন নাম অগ্রোডাক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট। এই স্থানটি ১৮৮৮-৮৯ সালে সি জে রজার্স দ্বারা খনিত হয় এবং ১৯৩৮-৩৯ সালে এচ এল শ্রীবাস্তবের তত্ত্বাবধানে এএসআই ৩.৬৫ মিটার পর্যন্ত পুনঃখনন করে। ১৯৭৮-৮৪ সালে হরিয়াণা সরকারের প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগের পি কে শরণ এবং জে এস ক্ষত্রী স্থানটিতে পুনরায় খনন করেন।

এইসব খননের ফলে অগ্রোহাতে একটি দুর্গ-জনপদ এবং খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দী থেকে ১৪শ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মানুষের অবিচ্ছিন্ন বসতির ইতিহাস প্রমাণিত হয়েছে। রোদে শুকোনো ইট দিয়ে তৈরি ব্যক্তিগত আবাসস্থল এবং জনগণের বাড়িগুলি ছাড়াও এখানে একটি বৌদ্ধ স্তুপ ও হিন্দু মন্দিরের অবশেষের পাশাপাশি অবস্থান বিভিন্ন ধর্মের সহাবস্থান এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দিক নির্দেশ করে। 

সমীক্ষার উদ্বোধনের সময় অধ্যক্ষ অগ্রোহাকে একটি বিশ্বমানের পর্যটনস্থলে পরিণত করতে সরকারের প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন। তিনি প্রত্নখননের মাধ্যমে আগ্রোহার ঐতিহ্যময় অতীত উন্মোচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। নগরোন্নয়ন মন্ত্রীও একই ভাবে অগ্রোহাকে ২৫ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে একটি বিশ্বমানের শহর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার রূপরেখা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে হরিয়ানার পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রচারের জন্য অগ্রোহার উন্নয়ন একান্তভাবে জরুরী।  

অগ্রোহা প্রত্নস্থলে জিপি আর জরিপটি এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ চিহ্নিত করে। অগ্রোহাকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারের এই প্রচেষ্টা এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক তাৎপর্যকে আরও বৃদ্ধি করে, দর্শনার্থী এবং ঐতিহাসিকদের একইভাবে আকর্ষণ করবে বলে আশা করা যায়।

(www.theoffnews.com Agroha archeological)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours