মোনালিসা মুখোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার, হুগলি:
কালীপুজোর রাতে ঠাকুমার বাড়ি লক্ষ্মীপুজো হত। এদেশীয় ঘটিদের এ এক বড় আনন্দের পুজো। কুলো বাজিয়ে অলক্ষ্মী বিদায় একটা মজার ছিল ছোটবেলায়। সারা দুপুর সেজ জেঠিমা চাল বাটায় বানাত লক্ষ্মী নারায়ণ কুবের। কুবেরকে কি দিয়ে যেন সবুজ করত। গোবর দিয়ে অলক্ষ্মী। তার মাথায় চুল। কপালে সিঁদুর। অবাক হয়ে সেজ জেঠিমার কারিকুরি দেখতাম। ভোগ রান্না, ফল কাটা, নাড়ু করা, আলপনা এসবের হইচইতে ভরে উঠত বাগান, পুকুর, গোয়ালঘর, ঠাকুর দালান নিয়ে আমাদের দুশো বছরের পুরোনো ওই বাড়িটা। ইতুপুজো, জয় মঙ্গলবার খুঁটিনাটি সবেতেই জমজমাট হয়ে উঠত।
ভাইবোনেদের হুল্লোড় মাত্রা ছাড়া হলে বড় জেঠুর গলার আওয়াজ আসত "কি রে যাব নাকিরে ল্যাজকাটা হনুমানগুলো?" ওটুকুই যথেষ্ট খানিক্ষনের বিরতির জন্য। বাড়ির বাগানে প্রচুর হনুমান আসত। আম খেত, কাঁঠাল গাছে তান্ডব করত। ভাঁড়ার ঘরে চুরি করত। তাদের সাথে নিজেদের আলাদা করার জন্য খানিকক্ষণ ভদ্র হতাম সব। প্রেস্টিজ ইস্যু ভাই।
পুজো শুরু হত সন্ধ্যে বেলায়। লম্বা দালানে বাজি পোড়ানো, চরকি ঘুরত, রঙমশালের আলো। মা, জেঠিমাদের ব্যস্ততা সাথে পুরোহিত ঠাকুরের মন্ত্রোচ্চারণ সব মিলিয়ে এক আলো ঝলমল পরিবেশ। সেই আলোর একটুকরো আজ ফিরে এল স্মৃতি হয়ে। স্মৃতির রঙমশালের আলোয় নিজেকে দেখছি। ছোটকাকু ছিল মাই ডিয়ার সবার। তার ক্যামেরায় বন্দী হত মুহূর্তগুলো। ঠাকুমার সাথে সেজ জেঠিমা, মা, আমরা বোনেরা। বাকি ক'জন ভদ্র হবার চেষ্টাতে তখন কোথায় হুল্লোড় করছিল মনে নেই। মনে আছে আমরা বেশ ছিলাম এখনও বেশ আছি। খালি দুটো বেশ থাকার আকাশ পাতাল তফাৎ। একটা বেশ থাকা সাধছে মিলনের সুর আরেকটা বেশ থাকা সুর তুলছে হারাবার বেদনা। সময়ের সাথে অনেক কিছু পালটে যায় একেবারে। ফিরে পাওয়ার যো টি নেই তাকে। এভাবেই তারা বন্দী থাকে মনে আর ফটো ফ্রেমে সুখ স্মৃতির সাক্ষী হয়ে।
'দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না।'
(www.theoffnews.com childhood worship)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours