সাজিয়া আক্তার, রেসিডেন্সিয়াল এডিটর (বাংলাদেশ), দ্য অফনিউজ:

শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্য সচেতনরা কত কিছুই না করে থাকি আমরা। শরীরের বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলতে ওজন কমানোর ডায়েট বেশ কার্যকর। এমনই এক ঝোঁকের নাম কিটো ডায়েট, যার প্রথম শর্ত শর্করা পুরোপুরি বাদ দেওয়া। অর্থাৎ ভাত, রুটি অথবা কোনো শর্করা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যাবে না। কিন্তু ওজন কমাতে আসলেই কি কার্বোহাইড্রেট বাদ দেওয়া উচিত?

ভাত-রুটি ও সব ধরনের কার্বোহাইড্রেট না খেয়ে মাত্র দুই সপ্তাহে লক্ষণীয়ভাবে ওজন কমলেও মারাত্মকভাবে চুল পড়তে শুরু করে। অনেক কিছুই মনে থাকে না। শরীরের শক্তি কমে যায়; দেখা দেয় আলসার ছাড়াও নানা শারীরিক সমস্যা। 

অনেকেই দ্রুত ওজন কমাতে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেন ভাত। অনেকে আবার রুটি খাওয়াও পরিহার করেন। এমন প্রবণতা সম্পূর্ণ ভুল, জানালেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ। তিনি বলেন, ‘সাধারণত, যাদের খিঁচুনি আছে, তাদের মস্তিষ্কে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে আনাতে কিটো ডায়েটের পরামর্শ দেওয়া হয়। কেউ দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের ডায়েট করলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে!’ সঠিক পরামর্শ—প্রতিদিনের খাবারে শর্করা রাখা জরুরি এবং ওজন কমানোর উদ্দেশ্যেই তা গ্রহণ করতে হবে।

কেন বাদ দেওয়া যাবে না কার্বোহাইড্রেট?

আমাদের শরীরের শক্তির মূল উৎসগুলোর একটি ভাতে বিদ্যমান শর্করা। আটা বা ময়দার রুটি, বিভিন্ন ফল, দুধ ইত্যাদিতেও শর্করা থাকে। বিজ্ঞান বলে, সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন ছয় ধরনের খাবার গ্রহণ করতে হবে; সেগুলো হলো, শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, মিনারেলস ও পানি। এ তালিকায় শর্করার স্থান সবার ওপরে। ‘শরীরের পুরো ক্যালরি চাহিদার প্রায় অর্ধেক আসে শর্করা থেকে,’ বলেন শামছুন্নাহার নাহিদ।

খেতে পারেন রুটিও

ওজন কমাতে ভাত খাওয়া ছেড়ে দিলে শক্তি জোগাতে শরীর চর্বি ও আমিষ ভাঙতে শুরু করে। চর্বি হঠাৎ কমতে শুরু করলে শরীরে একধরনের বিষাক্ত কিটোন বডি সৃষ্টি হয়। এটি বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে প্রভাবিত করে। শরীর যথাযথ পুষ্টি না পাওয়ায় নিম্ন রক্তচাপ থেকে শুরু করে কোষ্ঠকাঠিন্য, কিডনির সমস্যা, এমনকি হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। সারা জীবন ভাত বা রুটি অথবা যেকোন শর্করা–জাতীয় খাবার না খেয়ে থাকা সম্ভব নয়। স্বাভাবিকভাবেই কিছু সময় পর আবার সেই ভাতেই ফিরতে হবে। যতটুকু ওজন কমেছিল, আবার তা আগের চেয়ে দ্রুত ফিরে আসবে। 

ভাতের সঙ্গে খেতে হবে আমিষও।

ভাত নাকি রুটি?

আজকাল অনেকে গ্লুটেন-ফ্রি ডায়েট নামক এক পন্থা অনুসরণ করছেন। অনেকের গ্লুটেনে অ্যালার্জি থাকে। আবার অতি সক্রিয়, কিংবা যাঁদের অ্যামোনিয়ার পরিমাণ অনেক বেশি, তাঁদের গ্লুটেন ছাড়া খাবার খেতে হয়। রুটি গ্লুটেনসমৃদ্ধ হওয়ায় অনেকে তা পরিহার করেন। শরীরে শর্করার চাহিদা পূরণ করতে তাঁদের পরিমিত পরিমাণ ভাত খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা।

ভাতের গ্লিসেমিক ইনডেক্স রুটির চেয়ে বেশি। অর্থাৎ ভাত খাওয়ার পর বিদ্যমান চিনি হজম হয়ে যতক্ষণে রক্তের সঙ্গে মিশবে, রুটির ক্ষেত্রে তা আরও কিছুক্ষণ দেরিতে ঘটবে। তাই যাদের গ্লুটেনে কোনো সমস্যা নেই, ওজন কমাতে তারা রুটি খেতে পারেন। কারণ, রুটি দেরিতে হজম হয়।

তাই সুস্থভাবে ওজন কমাতে হলে অবশ্যই প্রতিদিন কোনো না কোনো শর্করাজাতীয় খাবার খেতে হবে। কেউ যদি ভাত বা রুটি খেতে না চান, তাহলে পরিমিত পরিমাণে আলু, ওটস অবশ্যই খেতে হবে। প্রতিদিন করতে হবে সঠিক ব্যায়াম। শামছুন্নাহার নাহিদ বলেন, ‘আপনি যা–ই খান, অতিরিক্ত ক্যালরি ভেঙে ঘুমাতে যেতে হবে। এটিই ওজন কমানোর সবচেয়ে কার্যকার উপায়।

(www.theoffnews.com - Bangladesh food weight)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours