কাজী নূর, কবি, সাহিত্যিক ও ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ:
কিউবা বিপ্লবের মহানায়ক এবং গেরিলা নেতা হিসেবে গোটা বিশ্ব জুড়ে যে নামটি ধ্বনিত হয়ে থাকে তিনি হলেন চে গুয়েভারা। পেশায় চিকিৎসক চে গুয়েভারা বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে খ্যাতিমান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবীদের মধ্যে অন্যতম একজন। জন্মসূত্রে আর্জেন্টিনার নাগরিক চে গুয়েভারার পুরো নাম ‘এর্নেস্তো গেভারা দে লা সেরনা’। সাংস্কৃতিক আবহে বেড়ে ওঠা চে'র পরিবারে ছিল ৩ হাজারেরও বেশি বই। সে সময় তিনি কার্ল মার্কস, উইলিয়াম ফকনার, এমিলিও সরগারির বইয়ের পাশাপাশি জওহরলাল নেহরু, আলবার্ট ক্যামাস, ভ্লাদিমির লেলিন, রবার্ট ফ্রস্টের বইও পড়েছেন। যা চে'কে করে তোলে সমাজ সচেতন। পরবর্তীকালে চে গুয়েভারা আরেক বিখ্যাত বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোর দলে যুক্ত হন।
অগ্নিপুরুষ চে গুয়েভারা বলিভিয়াতে থাকার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ (সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি) মদতপুষ্ট বলিভিয়ান বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। বলিভিয়ার সেনাবাহিনী ১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবর বলিভিয়ার শহর লা হিগুয়েরাতে চে'র মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে। মৃত্যুর আগে চে বলেছিলেন, ‘আমি জানি তোমরা আমাকে গুলি করে মারবে। আমি জীবিত অবস্থায় বেরুতে পারবো না।’ তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার পরাজয়ের মানে এই নয় যে, কোন দিনই বিজয় অর্জন করা যাবে না। ফিদেলকে বলো, এ পরাজয় বিপ্লবের শেষ হয়ে যাওয়া নয়। বিপ্লবের বিজয় হবেই। সালেইদাকে (চে'র স্ত্রী) বলো ব্যাপারটি ভুলে যেতে, সুখী হতে বলো, বাচ্চাদের লেখাপড়ার ব্যাঘাত না ঘটে। আর সৈন্যদের বলো, যেন আমার দিকে ঠিকভাবে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।’ কত বড় মাপের বিপ্লবী হলেই কেবল মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া যায়। তাই হয়তো বলা হয়ে থাকে, “বিপ্লবীর মৃত্যু আছে, কিন্তু বিপ্লবের মৃত্যু নেই।”
মহান বিপ্লবী চে গুয়েভারার মৃত্যুর পর তার শৈল্পিক মুখচিত্রটি সর্বজনীন বিপ্লবের মুখচ্ছবি হিসেবে বিশ্বের শ্রমজীবী মেহনতী মানুষের লড়াই সংগ্রামের অনুপ্রেরণার প্রতীক হিসেবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিউবান আলোকচিত্রী 'আলবের্তো কোর্দা মার্কসিস্ট' ১৯৬০ সালের ৫ মার্চ চে গুয়েভারার একটি ছবি তুলেছিলেন, যা পরবর্তীকালে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। গেরিলা যোদ্ধার পোশাকে 'গেরিলেরো হেরোইকো নামে’ আলবের্তো কোর্দার তোলা চে'র এই ছবিটিকে ‘বিশ্বের সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ ফটোগ্রাফ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রখ্যাত কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কবিতায় লিখেছেন-
চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়/আমার ঠোঁট শুকনো হয়ে আসে, বুকের ভেতরটা ফাঁকা/আত্মায় অবিশ্রান্ত বৃষ্টি- পতনের শব্দ, শৈশব থেকে বিষণ্ন দীর্ঘশ্বাস/
চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়/বলিভিয়ার জঙ্গলে নীল প্যান্টালুন পরা/তোমার ছিন্নভিন্ন শরীর, তোমার খোলা বুকের মধ্যখান দিয়ে নেমে গেছে শুকনো রক্তের রেখা/চোখ দুটি চেয়ে আছে
সেই দৃষ্টি এক গোলার্ধ থেকে ছুটে আসে অন্য গোলার্ধে/চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর কবিতার মতো আসলেই চে’র মৃত্যু আমাদের অনেক বড় অপরাধী করে দেয়। চে’ বেঁচে আছেন তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে, বিপ্লবের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে।
(www.theoffnews.com - Che Guevara Bangladesh)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours