পলাশ মুখোপাধ্যায়, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:

এক টাকায় থালি। হ্যা ঠিকই শুনেছেন, এক টাকা। একের পরে আর কোনও সংখ্যা এমনকি শূন্যও নেই। কি থাকে সেই থালিতে? কোনও দিন মাছ ভাত, কোনও দিন চিকেন ভাত, কোনও দিন সবজি  অথবা সয়াবিনের সঙ্গে ভাত কোনও দিন সঙ্গে থাকে মিষ্টিও। কি শুনেই চোখ কপালে উঠল নাকি? এখানেই শেষ নয় বিশেষ কোনও দিনে ওই এক টাকাতেই মেলে  চিকেন বিরিয়ানিও। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে জেলা হাসপাতালের সামনে গেলেই ফি দিন চোখে পড়বে এই এক টাকার থালি খাওয়ার লম্বা লাইন। 

হাসপাতালে আসা সাধারণ মানুষ তথা স্থানীয় দুস্থদের জন্য এই খাবারের ব্যবস্থা করেছে ড্রিমার ট্রাস্ট নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। গত মে মাস থেকে চলছে এই পরিষেবা। এই পরিষেবা চালুর আগে তারা হাসপাতাল চত্বরে একটি সার্ভে করে দেখেন কখন খাবার দিলে সুবিধা হয়। তারপর ঠিক হয় দুপুরে খাবার দিলেই উপকৃত হবেন দূরদূরান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষ। আপাতত প্রতিদিন কমবেশি ২০০ থেকে ২৫o জন মানুষ এই খাবার খান। 

বছর তিনেক বয়স এই সংস্থার। বারাসতের যুবক মিঠু চৌধুরীর উদ্যোগে লক ডাউনের সময় খাবারের প্যাকেট দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় এই কাজ। তখন খাবারের প্যাকেট দেওয়া হলেও এখন আর প্যাকেট দেওয়া হয় না, পরিবর্তে খাবারের থালি দেওয়া হয়। তবে এই খাবার পেট ভরে খেতে পারেন সকলেই, চাইলে যতবার খুশি দেওয়া হয়। তবে বাড়িতে নিয়ে যেতে দেওয়া হয় না।

মিঠুর সঙ্গে এই কাজে ব্রতী হন তার বন্ধুবান্ধব আত্মীয়রা। সুমী সেন,  প্রিয়ঙ্কা দে, রাজীব, প্রীতি, ত্রিয়া, মধুসুদন, সজল, পাখি, সুব্রত হয়ে এই নামের তালিকা এখন লম্বা। নিজেদের কাজকর্ম সামলে সকলেই নিঃস্বার্থ এবং নিরলস ভাবে এই কাজে জড়িয়ে আছেন। পালা করে ওই খাবার সরবরাহে অংশ নেন। খাবার দেওয়ার পাশাপাশি কুড়ি জন দুস্থ ছাত্রের পড়াশোনাও দেখেন ওরা। 

সংস্থার সদর সফতর মধ্যমগ্রামে। সেখানে বসেই কথা হচ্ছিল অনেকের সঙ্গে। মিঠু জানালেন এক টাকা করে নেওয়াটা নেহাতই প্রতীকী। না হলে যে কাগজের থালায় ভাত দেওয়া হয় তার দামই এক টাকার বেশি পড়ে যায়। কিন্তু একেবারে বিনা পয়সায় খাবার দিলে অনেকেই তা আত্মসম্মানের কারনে খেতে চান না। তাদের কথা ভেবেই এক টাকা নেওয়া হয়। পাশেই একটি বাক্সে ওই এক টাকা জমা নেওয়া হয়। তবে কেউ কেউ অচল ২৫ পয়সা বা লোহার চাকতি দিয়েও খেয়ে যান, ড্রিমার ট্রাস্ট সে সবের ধার ধারে না। সাধারণ মানুষ খেতে পেলেই খুশি তারা। 

কিন্তু প্রতিদিন এত খাবার দেওয়ার অর্থ আসে কোথা থেকে? চলছে কি ভাবে? সংস্থার কর্মীদের মতে নিজেদের দেওয়া অর্থ তো আছেই সঙ্গে আছে অসংখ্য মানুষের ভালবাসা। যে যেমন ভাবে পারেন সাহায্য করেন তা দিয়েই চলে যাচ্ছে আপাতত। তবে তারা সকলের কাছেই সাহায্যের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। 

এক টাকায় দেওয়া হলেও খাবারের গুণগত মান নিয়ে কোনও আপোষ করা হয় না বলে দাবি করলেন মিঠু। তার মতে আমরা বাজারের ভাল জিনিস দিয়েই সব রকম পরিচ্ছন্নতা মেনে রান্না করি। যদি কেউ চান তাহলে খাবার তৈরি থেকে পরিবেশন সবই তাকে সাদরে দেখাতে তৈরি ড্রিমার ট্রাস্ট। সংস্থার সকলেই তাই আগ্রহীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাদের দফতরে এসে গোটা বিষয়টা খতিয়ে দেখে তবেই যে কোনও সাহায্য করবার জন্য।

আগামী দিনে ইচ্ছে আছে এই খাবারের পরিমান এবং পরিবেশনের জায়গা আরও বাড়ানোর, যাতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এই পরিষেবা পেতে পারেন। পাশাপাশি দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের নিয়েও কাজ করবার স্বপ্ন দেখছে ড্রিমার ট্রাস্ট। তবে সেক্ষেত্রে দরকার আপনার আমার সাহায্যও।

আপনারা কেউ যদি ড্রিমার ট্রাস্ট- এর পাশে দাঁড়াতে চান, সাহায্য করতে চান তাহলে নিচে তথ্য দেওয়া রইল। আমরাও চাই স্বপ্ন দেখাচ্ছে যারা তাদের স্বপ্নও সফল হোক আগামীতে। শুভ কামনা রইল ড্রিমার ট্রাস্ট।

ঠিকানাঃ 

Dreamer Trust

Rani Park Road

Near Rani Park Club

Madhyamgram, 

Kolkata- 700129

West Bengal

Call@ +919073733835

Web: www.dreamertrust.org

E-mail: contact@dreamertrust.org

FB: www.fb.com/DreamerTrust

(www.theoffnews.com - Dreamer Trust one rupee meal)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours