রূদ্রাণী মিশ্র, লেখিকা ও কবি, কলকাতা:

আমি ফেসবুকে বেশ ঘুরে ঘুরে পড়ে বেড়াই, বেশ ভাল লাগে। তবে দুই হাজার , তিন হাজার শব্দ হলে অবিশ‍্যি একটু সমস্যা হয়। কারণ বুড়ি মানুষ তো, হাতে বই নিয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ। ওই মোবাইল নিয়ে পাতার পর পাতা পড়া আমার দ্বারা ঠিক হয় না। যাহোক, যা বলছিলাম। তা ওই একদিন এরকম পড়তে পড়তে একটি মনস্তাত্ত্বিক পোস্ট পেয়েছিলাম। খুব মন দিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে অনেক কিছু জেনে ছিলাম। তারপর অবশ্য নিজে কিছু ঘাঁটাঘাঁটি করে আরও অনেক কিছু জেনে আজ মানসিক অত‍্যাচারের বিরুদ্ধে কলম ধরতে চেষ্টা করলাম। কারণ আমরা অজ্ঞানতার জন্য বুঝি না, আমরা একজন এ্যাবিউজারের সফট টার্গেট। সেক্ষেত্রে আমরা যদি সরব না হই, বা সরে না আসি, আমরা নিজের কবর নিজেরাই খুঁড়বো। তাই কিছু মানসিক অত‍্যাচারের নমুনা এখানে তুলে ধরলাম। প্রসঙ্গ ক্রমে একটা কথা বলি, শুনুন, শারীরিক স্বাস্থ্য থেকে মানসিক স্বাস্থ্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এক দিনের মধ্যে আপনার চেহারা অনেকটা বদলে যেতে পারে। এবার আমরা দেখে নেই, মানসিক অত‍্যাচারের নাম ও নমুনা।

silent treatment:- কথাটি শুনে কেউ যদি সোজাসুজি বাংলায় তর্জমা করেন। তাহলে 'নীরব চিকিৎসা' বলে যে নিরীহ শব্দটি আমরা পাবো। তা আদৌ নিরীহ নয়। এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক অত‍্যাচারের শব্দ। যাকে বলা যেতে পারে a form of emotional abuse. তাহলে কিছুটা কি বোঝা গেল? হ‍্যাঁ ঠিক ধরেছেন। এই নীরব চিকিৎসা বিশেষত মানসিকভাবে একজন আরেকজনকে পর্যুদস্ত করার জন্য ব‍্যবহার করে। ধরুণ আপনার সঙ্গীর আদর ভালবাসায় আপনি অভ‍্যস্ত হয়ে গেছেন। তাতে যে হরমোন নিঃসরণ করে। তা কিছুটা নেশার মত। তাকে ছেড়ে আপনার অসম্ভব মানসিক কষ্ট হয়। তখন আপনার সঙ্গী এই অত‍্যাচার করে তার মত আপনাকে চালাতে চাইবেন। নাহ, একটু ভুল বললাম। শুধুমাত্র সঙ্গী নয়, মা, বাবাও এই অস্ত্রের ব‍্যবহার করে থাকেন। কেন? দেখেন নি? মা-টি তার শিশুকে শাস্তি দেওয়ার জন্য বলেন "আমাকে মা ডাকবি না। আমার সঙ্গে কথা বলবি না।" প্রথাগত খুব সাধারণ কথা হলেও এটা অতি নির্মম একটি মানসিক অত‍্যাচার। কিছু ক্ষেত্রে এই নীরব চিকিৎসার জন্য অনেক ভিক্টিম আত্মহত্যাও করেন। এই নীরব চিকিৎসা তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে, সাধিত হয়। ১) এড়িয়ে যাওয়া। ২) কথপোকথন বন্ধ করা  ৩) শাস্তি দেওয়া। ২০১২ সালের স্টাডিতে দেখা যাচ্ছে। যে মানুষ রোজ অবহেলা অনুভব করে, তার মানসিক স্থিতি, বেঁচে থাকার ইচ্ছে সবকিছু তলানিতে গিয়ে ঠেকবে।

Projection:- এই প্রোজেকশনের মানে বোঝাতে একটু গুগল বাবার শরণাপন্ন হওয়া যাক। তিনি বলছেন "projection is the act of placing unacceptable feelings or unacceptable wants or desires onto another person." ভীষণ ঘেঁটে গেছে, না? কথাগুলো? কিছুই নয়, আপনি বুঝলেও বিশ্বাস করতে চাইছেন না।  হ‍্যাঁ, এই যে মা, বাবা, বর, প্রভৃতি লোকজন প্রতিনিয়ত প্রমান করে আপনি একটি অপদার্থ। আপনার দ্বারা কিছু হবে না। এটাকে প্রোজেকশন গেম বলে। এই খেলা বা এ্যাবিউজের লক্ষ্য হচ্ছে, নিজের দোষ ঢাকার জন্য অপরকে ছোট করে নিজের ঘাড় থেকে দোষ ঝেড়ে ফেলা। উদাহরণ দিয়ে বোঝাই। যেমন ধরুন, একজন স্বামী তার নিজের কোনও কর্তব্য করতে পারছেন না। এবার তিনি তার বৌকে অপদার্থ/ইডিয়ট/ সাদা গরু ইত্যাদি বলে এই খেলা খেলে থাকেন। তবে এই খেলায় মা, বাবাও কম যান না। আর ঢাকের বাঁয়া আত্মীয়স্বজন ও তাল মেলায়। এই প্রোজেকশনের মতোই আরেকটি অস্ত্র হল কনসিস্টেন্ট ডিমিনিং। এটা দিয়ে ভিক্টিমকে বোঝানো হয়, তার থেকে আশা করার কিছু নেই। সে মোটামুটি এক তরকারি নুনে পোড়া। এখানে ও ঢাকের বাঁয়ার অভাব হয় না।

Guilt trip:- এটা সাধারণত মহিলারা করে থাকেন। এই গিল্ট ট্রিপের মানে হলো, তুচ্ছ ব‍্যাপারকে বড়ো করে দেখিয়ে দোষীসাব‍্যস্ত করা। বেশিরভাগ মহিলা কেঁদে কেটে কঁকিয়ে এটা করে থাকেন।

Overprotective:- এই শব্দ নিয়ে আর কী বলবো? বুঝতেই পারছেন, এর মানে বেশি নিরাপত্তার বেড়াজালে রাখা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মা বাবা এটা করে সন্তানের ব‍্যক্তিত্ব তৈরি হতে দেন না। আবার কিছু স্বামী এটা করেন। সেক্ষেত্রে ভালবাসার এই অত‍্যাচার মানসিক দম বন্ধের কারণ হয়ে ওঠে। আর যে স্ত্রী এতে সাবলীল, তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ব‍্যক্তি স্বাতন্ত্রের অভাব। 

Gas lighting:- এক্ষেত্রেও আমি গুগলবাবার শরণাপন্ন হলাম। তিনি বলেছেন Gaslighting is a form of psychological manipulation in which the abuser attempts to sow self doubt and confusion in their victims mind." তার মানেটা তাহলে কী দাঁড়াল? মানে হল এখানে যে বলির বলদ তার মাথায় গেঁথে দেওয়া হচ্ছে। যা দোষ সব তোমার।"এটা কিন্তু রোমান্টিক সঙ্গী ছাড়া মা বাবাও করে থাকেন। যারা এটা করেন, সেক্ষেত্রে তারা ভিক্টিমকে নিঃসঙ্গ করে রাখার চেষ্টা করেন। তারা ভালবাসার কথা বলে ব‍্যাপারগুলো সাধারণ করতে চাইলেও, তাদের ব‍্যবহার থাকে ভিন্ন। তাদের ছুরির ফলার মত কথা আপনাকে বিদ্ধ করবে। তারপর তারা বলবে, এই কথায় এত্তো সিরিয়াস হওয়ার কি আছে? এটা তো মজা করে বললাম। তারপর সম্পর্ক ঠিক মত না চলার দায় ও ভিক্টিমের মাথায় চাপিয়ে দেবে। আপনি যদি পুরো ব‍্যাপারটা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে চান। সেক্ষেত্রে সে ওই বিষয় সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে যাবে। সে কিছুতেই ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সহজ করতে দেবে না। এমনকি ভিক্টিমের দেখানো প্রমানকেও অগ্ৰাহ‍্য করবে। এই হলো গ‍্যাস লাইটিং।

পরিশেষে বলি, এই অ্যাবিউসাররা যে কোন কেউ হতে পারেন। অফিসের কলিগ থেকে শুরু করে মা বাবা অবধি। তাই সাবধানে থাকুন। আপনি নিজেকে দুর্বল ভাবছেন বলে, আপনি দুর্বল। আপনি তাই ওদের সফট টার্গেট। এইগুলো যদি এখনও আপনার সঙ্গে হয়ে যায়। তাহলে, বিশ্লেষণ করুন, বুঝুন। তারপর বিষাক্ত পরিমন্ডল থেকে বেরিয়ে আসুন। নিজেকে সুস্থ রাখার দায় আপনার, আর কারো নয়। সে সম্পর্ক যাই হোক, নিজের ক্ষতি করে, সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখা, মূর্খামি।

(www.theoffnews.com - mental)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours