দেবিকা ভট্টাচার্য, লেখিকা ও লেকচারার, চন্দননগর, হুগলি:
রামেশ্বরের চতুর্থ সন্তান অনন্তরাম। তাঁর দ্বিতীয় পুত্র শম্ভুরাম মিত্র মুস্তৌফীর পুত্র বীরেশ্বর মিত্র মুস্তৌফী নিজ চেষ্টায় প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন কিন্তু তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। তাঁকে অনেকেই পোষ্যপুত্র নেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন তিনি পোষ্য কন্যা নেবেন এবং সুখড়িয়ায় আনন্দময়ী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে এই মন্দির নির্মাণ করেন এবং মা আনন্দময়ী কালী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন ১৮১৩ খৃষ্টাব্দে।
কথিত আছে বীরেশ্বরের মৃত্যুর চতুর্থ দিনেরদিন অর্থাৎ চতুর্থী শ্রাদ্ধের দিনে গঙ্গার ঘাটে এক বালিকাকে শ্রাদ্ধের উপকরণ নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়, সে জানায় সে তার বাবার কাজ করতে এসেছে। পরে আর সেই বালিকার সন্ধান পাওয়া যায় না। সাধারণ লোকের বিশ্বাস জন্মে মা আনন্দময়ীই সন্তান রূপে এসেছিলেন বীরেশ্বরের পারলৌকিক কাজ সম্পন্ন করতে।
আনন্দময়ী মন্দির জমিদার বাড়ির গড়ের বাইরে,'রাধাকুঞ্জ' থেকে একটু এগিয়েই। মন্দিরের পাশে যে ছোটো আটচালা মন্দিরগুলি রয়েছে তার পিছনে পুকুরের জলে যখন মন্দিরের প্রতিচ্ছবি পড়ে তা দেখবার মতো। মূল মন্দিরটি পঁচিশ চূড়া। দু'পাশে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে পাঁচটি করে দশটি আটচালা মন্দির এবং প্রতি পার্শ্বে একটি করে পঞ্চ চূড়া মন্দির।তার একটিতে গণেশের মূর্তি এবং অন্যগুলিতে সাদা এবং কালো পাথরের শিবলিঙ্গ বর্তমান। মাঝখানে প্রশস্ত মাঠ।
মূল মন্দিরে মা আনন্দভৈরবীর মূর্তি উচ্চতায় প্রায় তিনফুট। বাঁ পায়ের উপর ডান পা রেখে মা বসে আছেন শায়িত মহাদেবের বুকের উপর পদ্মাসনে। গর্ভগৃহের সামনে বারান্দা। বারান্দার ছাদ খিলান করা। মন্দির গাত্রে টেরাকোটার ফলকে সিংহবাহিনী, নৌকারোহী, ফুল, পুতুল ইত্যাদি কাজ।
কথিত আছে, ১৮৫৫ সালে রানি রাসমণি কাশী যাত্রা কালে গঙ্গাতীরে কাঁসর ঘণ্টার আওয়াজে আকর্ষণ অনুভব করেন। পরে এই মন্দির পরিদর্শন করেন এবং এই মন্দিরের অনুকরণে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির নির্মাণ করান। ১৮৯৭ সালে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মন্দিরটির উপরের কয়েকটি চূড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মন্দিরটি সংস্কার করা হয়।
পরে বহু দিন মন্দিরটি অসংস্কৃত অবস্থাতে ছিল। একটি বাংলা ছায়াছবির 'শুভকামনা'র কিছু অংশ এই মন্দির অঙ্গনে চিত্রায়িত
হয়। তখনকার চিত্রের সঙ্গে আজকের মন্দিরের অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যাবে। মন্দিরটি এখন পরিপাটি করে সজ্জিত এবং নতুন রঙে রঞ্জিত। কেবল ভাগীরথী তার গতি পরিবর্তন করেছে। (ক্রমশঃ)
(ছবি সৌজন্যে প্রতিবেদক স্বয়ং)
(www.theoffnews.com Somra bazar Hooghly)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours