অসীম চট্টোপাধ্যায়, সিনিয়র জার্নালিস্ট, দুর্গাপুর:

শরৎ হেমন্তের উৎসবী প্যাকেজ শুরু হতেই আড়মোড়া ভেঙ্গে বাক্স তোরঙ্গ গোছানোর প্ল্যান পাকা হয়ে গেছে ভ্রমন প্রিয় বাঙালীর। দু বছর পর কোভিডের আতঙ্ক মিইয়ে যেতেই ফের পায়ের তলায় সরষে এখন তার। পায়ে চাকা বেঁধে বড় বাজেটের বিদেশী ট্যুর যেমন রয়েছে, পাশাপাশি ছোটখাটো বাজেটেও কাছেপিঠে ঘুরবার পরিকল্পনা নিয়ে মুখের স্বাদ বদলানোর ভাবনাও রয়েছে অনেক পরিবারেরই। দুর্গাপুজোর হিম টুপটুপ শিউলি ঝরা রাতে মাইথন জলাধারের পাশে বসে দূর থেকে মাইকে ভেসে আসা বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনীর স্তোত্রই হোক বা সুপ্রীতি ঘোষের 'বাজলো তোমার আলোর বেণু' বাঙালী হৃদয়ে এক অপার্থিব অনুরণন সৃষ্টি করবেই। পুজোর ছুটি মানেই কচিকাঁচাদের সাথে বড়দেরও বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছাস। সেই উচ্ছাসের ভেলায় চড়ে উড়ু উড়ু মনটা কখন যে পৌঁছে যায় দেবী কল্যাণেশ্বরীর শান বাঁধানো ঘাটে, কিংবা কালীপাহাড়ির কোল ঘেঁষে থাকা মা ঘাগর বুড়ি মন্দির লাগোয়া ঝর্ণাধারায়, তখন কোথায় রাত্রিবাস হবে, কোথায় থাকবে পরিবারের লোকজন সেইসব প্রশ্ন একেবারেই গৌণ হয়ে যায়।

পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম ও দুই বর্ধমান, রাঢ় বাংলার এই পাঁচ জেলাকে নিয়ে রচিত পর্যটনের যে মহাবৃত্ত, সেখানে যেমন রয়েছে বীরভূমের পাঁচ সতীপীঠ, রয়েছে বাঁকারায় বীরচন্দ্রপুরের বৈষ্ণব মহাতীর্থ। এই পবিত্রভূমিই হল শ্রীচৈতন্যের সাধন সহচর নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর পবিত্র জন্মস্থান।

বীরভূমের সতীপীঠগুলির সঙ্গে বক্রেশ্বর, তারাপীঠ এবং রবিতীর্থ শান্তিনিকেতন ছুঁয়ে এসে দুটো দিন নিশ্চিন্ত আরামে কাটানো যেতে পারে বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুরের কোন হোম-স্টে কিংবা মাঝারি মাপের হোটেলে। সেখান থেকেই কয়েক ঘন্টার জন্য পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের কোল থেকে ভেসে আসা নাম না জানা পাখির গান কিংবা সাঁওতাল কিশোরীর অচেনা সুরের মূর্ছনা পুজোর আমেজে বাড়তি খুশি যোগ করবেই। পাহাড়ের গায়ে সার বেঁধে থাকা অত্যাধুনিক রিসর্টের সবুজ নরম ঘাসে পা ডুবিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই এক অনির্বচনীয় আনন্দ সাগরে হারিয়ে যাওয়ার স্বর্গীয় অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। যেমন মল্লরাজভূমি কাশীপুর অথবা বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের অসংখ্য মন্দিরগাত্রের দৃষ্টিনন্দন টেরাকোটার কাজগুলি দেখলে খাজুরাহো কিংবা অজন্তা-ইলোরায় যেতে না পারার আক্ষেপ অনেকখানিই দূর হয়ে যাবে। আবার এই বিষ্ণুপুরেরই দেবী ছিন্নমস্তা মন্দিরকে বেষ্টন করেই রয়েছে ভুবন বিখ্যাত দলমাদল কামান, দশাবতার তাসের হাট, পোড়ামাটির ঘোড়া, বালুচরি শাড়ি, শঙ্খের অলঙ্কারের পসরার ডালি। এখান থেকেই কয়েক ঘন্টার পথ কামারপুকুর ও জয়রামবাটি। পুজোর ছুটির প্যাকেজ ট্যুরে নিশ্চিতভাবেই যোগ করা যেতে পারে বর্ধমানের একশো আট শিব মন্দির, রমনাবাগানের চিড়িয়াখানা আর সেই সঙ্গে সীতাভোগ মিহিদানা আর শক্তিগড়ের ল্যাংচা তো রয়েইছে।

(www.theoffnews.com - Purva & Paschim Bardhaman Bankura Birbhum Purulia tourism)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours