অসীম চট্টোপাধ্যায়, সিনিয়র জার্নালিস্ট, দুর্গাপুর:
ডট কমের দুনিয়ায় লটকানো ক্যালানে পাবলিক এখন কেষ্ট-লীলায় মজে উঠেছে। তার জন্য বিশেষ কষ্ট তাদের করতে হয়নি। কেষ্টর বিশেষ জায়গায় ইয়ে সত্যিই হয়েছে, নাকি সেখানেও চড়াম চড়াম বাদ্যি বাজছে,তাই নিয়েই নেট দুনিয়ার বুদ্ধিজীবীরা গত কয়েকদিনে কয়েক হাজার জিবি নেট খরচ করে ফেলেছে। নেট দুনিয়ার পাবলিক মানেই তারা একই অঙ্গে হাজার রূপের অধিকারি। তাদের জ্ঞানের বহর এতটাই যে তারা কাঁথির অধিকারি ব্রাদার্স থেকে শুরু করে মহাকাশ বিজ্ঞানের লেটেস্ট ইনফর্মেশন একেবারে টো টো বলে দিতে পারে। কেষ্টর ইয়েতে কত ইঞ্চির ইয়ে হয়ে আছে, তার বিশদ বিবরণ পাওয়া যাবে এই নেট-পণ্ডিতদের কাছ থেকেই। অর্পিতার ফ্ল্যাটে পাওয়া সেই ইয়ে যন্ত্রটা কিভাবে ব্যবহার করা হয়, সেই গুপি যন্ত্র কে ব্যবহার করত, সেই অতি গুহ্য তত্ব থেকে ভারতের ইকনমি কেন পরপর বেশ কয়েক বছর ধরে ফেল মারছে, তাও অতি সুলভে পেয়ে যাবেন সেই মহাবিজ্ঞানীদের শব্দকোষ থেকে। শুধু তারজন্য আপনার ইয়েটাকে মানে অ্যান্ড্রয়েড ফোনটাকে একটু নেড়ে চেড়ে দেখতে হবে, এই যা।
গত ৭৫ বছরে আমরা নাকি একেবারে পুরোপুরি সেকু বনে গেছি। ফেসবুক ওয়ালারা তো অনেক আগেই সেকুতে পুরো পেছন পাকিয়ে ফেলেছে। প্রচন্ড জ্ঞানী কিনা! তাই রেস্টুরেন্টের বাইরে মিডিয়ার দু চারটে পেছন পাকার বাবাদের ডেকে এনে এন্তার ছবি তোলানো হল। দ্যাখো, দ্যাখো আমরা হেঁদুর পো হলে কি হবে, আমরা কেমন তারিয়ে তারিয়ে গোরুর মাংস খাচ্ছি, দুনিয়ার সকল মাতব্বরদের তা ডেকে দেখাতে হবে না ! ওই দৃশ্য ভাইরাল হতেই আরো পেছন পাকা কোন সেকু হঠাৎ ফুট কেটে উঠল, হেঁঁদুর ব্যাটা হয়ে ইয়ের মাংস খাচ্ছেন, কই দেখি কোন নেড়েকে একদিন পেট পুরে শুয়োরের মাংস খাওয়ান দিকি! তার বেলায় মুখ চুপসে গেল কেন ? কেন আপনাদের সঙ্গেই তো ছিল একটা সেকুর ঠাকুরদাদা! পার্ক স্ট্রিটের ফিরিঙ্গি পাড়ার রেস্তোঁরায় মুচমুচে কপিস পর্ক পকোরা খাওয়ান দিকি তাকে। গত পাঁচ ছটা দশক স্রেফ এই কড়াই গরম করা বিতর্ক নিয়েই কেটেছে, কিন্তু সে কড়াইয়ে তেল কতটা পড়েছে, সেই তেলে কী কী ভাজা হয়েছে, সেসব এক জায়গায় করতে গেলে আর একখানা মথি লিখিত সুসমাচারই হয়ে যাবে বস। এখন আমরা স্বয়াতানত্রাতা-র ৭৫ এ।
আজই মাইকে তারস্বরে সেই অ্যায় মেরে বতন কি লোগোঁ শুনে কেঁদে ককিয়ে জামা ভিজিয়ে ফেলার দিন। ভিজে জামায় চোখ মুছতে মুছতে মাংসের দোকানে লাইন দিয়ে নিদেন পাঁচশো গ্রাম কিনে ঘরে ফেরার সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আগে হলে এক কিলোই আসত গুরু, এখন মোদির ভারতে সবেতেই জবরদস্তি কস্ট্ কন্ট্রোল। তবু তো এ বছর এক পিস তেরঙ্গা জোর করে গছিয়ে দেওয়া গেছে। অন্যান্য বার সেসবের কোন বালাই থাকেনা। তেরঙ্গা কিনতে গিয়ে কাকে কতখানি মুরগি বানানোর চেষ্টা করেছিল ছোকরা দোকানিটি, সেই গল্প পুরো ইয়ের সাথে ফেসবুকে গরম গরম স্ট্যাটাস দিয়ে দেওয়া হয়েছে এরই মধ্যে। আজাদি কে সালগিরাতে- ঘর ঘর মে কেক কাটার কম্পিটিশন হবে না তাকি হয়? সেখানে আবার এক কাঠি সরেশ এই ফেবু সুন্দরিরা। বেছে বেছে তিন রঙা ক্রিম বালা একটা ঢাউস কেক এনে সেটা কাটার আগেই বেশ জুত করে একটা স্ট্যাটাস ঠুসে দেওয়া হল। এরপর বেশ জম্পেশ করে পোজ দিয়ে সেই কেক সুন্দরির ডিসেকশন সেশন শুরু হবে। ফেবুতে কটা লাইক এল তার উপর ডিপেন্ড করবে এই আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের যাবতীয় সাফল্য আর ব্যর্থতা। কয়েক বছর ধরে গোরক্ষক নামক তালিবানিদের হেঁদু সংস্করণ একটু বেচাল দেখলেই একেবারে পেঁদিয়ে লাট করে দিচ্ছে, তাদের ভয়ে এখন ফেবুতে কোন পোস্ট করতে গেলেই গোপাল মন্ডল ফান্সিস ডিসিলভা হয়ে যাচ্ছে। নাম ভাঁড়ানোর এই প্রতিযোগিতায় সবার সঙ্গে বাজারে নেমে পড়েছে বারবনিতারাও। চোখের পর্দা থাকলে খাবো কি বস? তাই ওসবের পাট বহুকাল আগেই চুকিয়ে দিয়ে খেঁদি, পেঁচিরাও নুরজাহানের ডিপি দিয়ে এক্কা দোক্কা খেলায় নেমেছে। আজাদি তো ওরাও এনজয় করবে নাকি ! আজাদির এই অমৃত মন্থনে এখন বিষের বাজার খুবই ডাউন, এই অমৃত খেয়ে সবাই এবার অমরত্ব লাভ করবে, আর দুহাত তুলে নেত্য করতে করতে বলবে, দ্যাখো আমি বাড়ছি ড্যাডি...।
(www.theoffnews.com - Indian Independence day)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours