রূদ্রাণী মিশ্র, লেখিকা ও কবি, কলকাতা:

মেয়েটি ভালোবাসত ছেলেটিকে, ছেলেটিও ভালোবাসার ভেলা ভাসিয়েছিল। মেয়েটি ছিল যেন স্বয়ং দেবতার হাতে তৈরী এক পরী। ছেলেটি ছিল আঁকিয়ে, শুনেছি, বিধাতার নাকি কারো সুখ সহ্য হয় না। সুখ তার কাছে নাকি অনেকটা যেন চোখের বালির মত। তাই তাদের ও সুখের সময় বেশিদিন স্থায়ী হল না।

মেয়েটির মা তাদের জানালেন, মেয়েটির মেজমামা আসছেন।  মেয়েটির সেই মেজমামাটি যে রাজনৈতিক ব‍্যক্তিত্ত্ব, তা তাদের আগেই জানা ছিল। আর ছেলেটি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য সব কিছু তার জানা থাকায়, সে নামটা শুনেই  প্রণয়ী আর তার মাকে জানালো, যে মামাটি হলেন, অ্যাডলফ হিটলার। যিনি National Sozialictiche Duetsehe Artei Sperti মানে নাৎসী পার্টির সর্বেসর্বা।

হ‍্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, মেয়েটি হিটলারের সৎ দিদির মেয়ে। রাউবেল গেলি। কথিত আছে, প্রথমবার গেলিকে দেখে নাকি হিটলার মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। গেলি, ওকে "uncle alf" ডাকতেন। 

হিটলার প্রথম যেদিন গেলির বাড়িতে বোন আর তার মায়ের সঙ্গে মানে তার দিদির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। সে দিনই তিনি ব‍্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, যাতে গেলি আর তার মা মিউনিখ চলে আসে। ১৯২৯ সালে গেলি মেডিসিন নিয়ে পড়া শুরু করে ছিলেন, কিন্তু তার সৎ মামার জন্য তাও পড়তে  পারলেন না। মাত্র দুবছর বয়সে পিতৃহারা গেলিকে হিটলার অসম্ভব একটা শাসনের মধ‍্যে রাখতেন। এই শাসনের ঘেরাটোপে গেলির নিজেকে কয়েদীর মত লাগতো। কিন্তু কিছু করার ছিল না। গেলির হাত-পা ছিল বাঁধা। ভিয়েনাতে তার মন পরে থাকলেও, তার 'কংস মামা' র মন জুগিয়ে তাকে মামার সঙ্গে সঙ্গে থাকতে হতো। হেরিএটা হফম‍্যান ঐতিহাসিক জন টোল‍্যান্ডকে বলেছেন, যে তার খুব দরকারী মিটিং থেকেও, গেলি সুইমিং এ যাচ্ছে, তার কাছে এটা অনেক বেশি ইর্ম্পট‍্যান্ট ছিল। অ্যালেন্ বুলক (হিটলারের জীবনী গ্ৰন্থকার) বলেছেন 'jealous "possessiveness" of her' এবং হিটলার নিজেও পরে স্বীকার করেছেন, রাউবেল গেলি একমাত্র মহিলা, যাকে উনি ভালবেসে ছিলেন, এবং হফম‍্যানকে বলেছিলেন "I Love Geli and I could marry her"।

গেলির ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার জীবনের রিমোট কন্ট্রোল হিটলার নিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি গেলিকে ভিয়েনায় মিউজিক স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন, কারণ ওখানে মরিস থাকে। সেই মরিস (emin morish) যে হিটলারের ভালবাসার প্রতিদ্ধন্ধী। সে সেই আর্ট অ্যাকাডেমী থেকে পাস করেছিল, যেখানে হিটলারের আবেদন দু-দু বার নামঞ্জুর হয়েছিল। তাই সবদিক থেকে সে ছিল তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী।

১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩১। এই সেই অভিশপ্ত দিন। এইদিন  হিটলারের সাথে গেলির চুড়ান্ত ঝগড়া হয়। যার সাক্ষী ছিল, তাঁর প্রাসাদের প্রতিটি কাজের লোক। এমনকি ঝগড়ার শেষে হিটলারের বলা 'নাইন' (মানে 'না') অনেক বেশি জোরে ছিল, তাই অনেকেই সেই কথা শুনতে পেয়েছিল। সেদিন রাউবেল গেলি তার আঙ্কেল এলফ এর বেরিয়ে যাওয়ার পর সে, তার একটা ৬.৩৫ এমএম বুলেট দিয়ে নিজেকে বিদ্ধ করে। যা তার ফুসফুস ছেদ করেছিল। অবশ্য গেলির মৃত্যু নিয়ে গুজব রটেছিল, যে মৃত্যুর সময় গেলির নাক ভাঙ্গা ছিল এবং সে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তবে গেলির দেহ পোস্টমর্টেম হয়নি, এবং সত্যি যদি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিল, সেটা কার সন্তান সেটাও কখনো জানা যায়নি। আবার এটাও হতে পারে, গেলি তার প্রেগন্যান্সির খবর মরিসকে দিতে গিয়ে, হিটলারের হাতে মারা যান। সবটুকুই এখন রহস্য। যা হয়ত আর কোনোদিনও জানা যাবে না।

তবে, গেলির মৃত্যুতে হিটলার খুব ভেঙে পড়েছিলেন, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। গেলির মৃত্যুর সময় যেমন তার ঘর ছিল, তিনি তেমনই রেখে দিয়েছিলেন। শুধু তার জন্ম আর মৃত্যুর দিন হিটলারের নির্দেশে ফুল দিয়ে ভরে ঘরটি সাজানো হতো। তবে গেলির কবরের সময় তিনি যাননি। তার মৃত্যুর পরের দুদিন তিনি বন্ধ ঘরে কাটিয়ে আবার জোরকদমে রাজনীতি শুরু করেছিলেন। Heinrich Hoffman হিটলারের অফিসিয়াল ফোটোগ্ৰাফার বলেছেন "রাউবেলের মৃত্যু ছিল একটা অমানবিকতার বীজ, যা হিটলারের মধ্যে বেড়ে ওঠা শুরু হলো। তার মহান ভালোবাসা হয়তো তার প্রথম 'বলি কা বকরা' গেলির মৃত্যুর ষোলোমাস পর হিটলার চ‍্যান্সেলর পদে অধিষ্ঠিত হলেন। ৩০ জানুয়ারি ১৯৩৩। গেলির মৃত্যু হিটলারের আকাশ ছোঁয়া কেরিয়ারকে কিছুটা ক্ষতি করবে, বলে সবাই ভেবেছিল, তবে তা হয়নি। নাৎসীর বিরোধী পত্রিকা Munchener post হেডলাইন ক‍রেছিল:-  A MYSTERIOUS AFFAIR:- HITLER'S NIECE COMMITS SUICIDE.

তবে হিটলার তার জবানবন্দীতে বলেন।

★এটা সত্য নয়, যে আমার ভাগ্নীর সাথে আমার ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি হতো বা সেই রকম ঝগড়া আমরা শুক্রবারও করছিলাম, বা আগেও...

★এটা সত্য নয়, যে আমি তার ভিয়েনা যাওয়ার বিরুদ্ধে ছিলাম। আমি কখনও ভিয়েনা যাওয়ার বিরুদ্ধতা করিনি।

★এটা সত্য নয়, যে আমি আমার ভাগনীর ভালোবাসার বিরুদ্ধে ছিলাম।

★এটা সত্য নয়, যে ১৮ই সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ঝগড়ার পর আমি বাড়ি ছেড়ে যাই। সেদিন আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া বা বিবাদ উত্তেজনা কিছুই হয়নি।

গেলির মৃত্যুতে তার মা অ্যাঞ্জেলার তেমন প্রতিক্রিয়া কখনও পাওয়া যায়নি। তবে তিনি পুলিশকে বলেছেন, হিটলার তাকে ভিয়েনায় যেতে না দেওয়ায় সে আত্মহত্যা করে। 

মাত্র ২৩ বছরে জীবনের মায়া কাটিয়ে সে চলে গেছে, তার উনিশ বছরের বড়ো নির্দয়ী মামাকে ছেড়ে। শিকজাল Unvermeidliches blindes schicksal ( Inevitable Blind Destiny) এ তার মামাকে তিলে তিলে মরতে রেখে। যাতে সে তার পাপের ফল ভুগতে পারে। (বিশ্বাসীদের কাছে এটাই অনেক পাওয়া)।

(www.theoffnews.com - Hitler love Geli)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours