দেবিকা ভট্টাচার্য, লেখিকা ও লেকচারার, চন্দননগর, হুগলি:

"যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে, অজস্র শৈবালদাম বাঁধে আসি তারে"। সময়ের স্রোতে ভেসে না গেলেও সেই গতিটুকু রাখার দরকার, যাতে শ্যাওলা ঘিরে না ধরে। তাই একটু খুঁজতে ইচ্ছে হলো বিধবা দিবসের তাৎপর্য।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত (পাঞ্জাব) রাজ লুম্বার পিতা জাগিরি লাল লুম্বা টিউবার কিউলিসিসে মারা যান ১৯৫৪ সালের ২৩শে জুন। তখন তাঁর মাত্র দশ বছর বয়স। সাত ভাইবোনকে নিয়ে তাঁর মায়ের জীবন সংগ্রাম তিনি দেখেছিলেন, উপলব্ধি করেছিলেন।প্রতি পদে লক্ষ্য করতেন মায়ের উপর অনুশাসনের খবরদারি। মা পুষ্পাবাতি মানসিকভাবে দৃঢ় ছিলেন। তাঁর যন্ত্রণার আঁচ যাতে সন্তানদের না লাগে তাই স্বামীর রেখে যাওয়া সমস্ত কিছু তাঁর পুত্র এবং সমান ভাবে কন্যাদেরও মানুষ করার কাজে নিয়োজিত করেন। কঠোর পরিশ্রম করে রাজ লুম্বা লণ্ডনে নিজের ব্যবসা গড়ে তোলেন। তিনি অনুধাবন করেছিলেন তিনি যদি তেমন ঘরের ছেলে হতেন হয়তো তাঁকে পাঞ্জাবে রিক্সা চালাতে হোত। সেদিক থেকে তিনি ভাগ্যবান। তিনি ভারতকে, তাঁর নিজের মাকে ভুলে যাননি। 

মা মারা যাওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি এবং তাঁর স্ত্রী বীণা বিধবা মা এবং অসহায় সন্তানদের উন্নতির উদ্দেশ্যে 'শ্রীমতী পুষ্পাবাতি লুম্বা ট্রাস্ট' প্রতিষ্ঠা করেন যা লুম্বা ফাউন্ডেশন নামে পরিচিত। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী শেরি ব্লেয়ার এর সভাপতি হন। রাজ লুম্বা তাঁর পিতার মৃত্যুদিন ২৩শে জুন কে বিধবা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেন।

সাধারণ পরিষদে পেশ করা লুম্বা ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে ছয় কোটির বেশি বিধবা নারী স্বামী হারিয়ে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। নিজেকে প্রকাশ করার জন্য তাদের প্রায় কিছুই করার নেই। আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি কেমন তা বিবেচনা করে তাদের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেবলমাত্র তারা বেঁচে থাকার উপায় থেকে বঞ্চিত নয়, পাশাপাশি উত্তরাধিকারের অধিকার এবং সমান মৌলিক অধিকারও দেওয়া হচ্ছে না।

নিদারুণ নিঃসঙ্গতা ও কষ্টের মধ্যে থাকা বিশ্বের কোটি কোটি বিধবার অধিকার ও সামাজিক সম্মান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২৩ জুনকে আন্তর্জাতিক বিধবা দিবস ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। ২০০৫ সালে এই দিনটিকে প্রথমবার বিধবা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে ৭ জন বিধবার মধ্যে ১ জন দারিদ্র্যে জর্জরিত এবং নারীকে বিধবায় পরিণত করার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে যুদ্ধকে। 

বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ২৫৮ মিলিয়ন বিধবা রয়েছে।২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ভারত সরকার বিধবা ভাতা প্রকল্প  চালু করেছেন। এই প্রকল্পে দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাসকারী ৪০ বছর থেকে ৫৯ বছর বয়স্কা বিধবা এই ভাতা পেতে পারবেন। যদি কারো পুনরায় বিবাহ হয়, এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন না। ৫৯ বছর বয়সের পর এঁরা বার্ধক্য ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

কেবলমাত্র সরকারী সাহায্য বা ব্যক্তিগত সাহায্যে যে এঁদের দিন যাপন সম্ভবপর নয়, এ তো বোঝাই যায়। তাই নাগরিক হিসেবে প্রত্যেককেই সচেতন থাকতে হবে, সন্তান সন্ততিদেরও সহানুভূতিশীল হতে হবে। তবেই আমরা একটা সুন্দর সমাজ উপহার পাব।

(www.theoffnews.com - international widow day)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours